ফেনী হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মচারী

১১ মাস বেতনহীন সেবা, অবশেষে গেল চাকরিও 

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কর্মচারী  © টিডিসি ফটো

২৫০ শয্যা ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত ৫৩ জন কর্মচারী করছেন মানবেতর জীবনযাপন। টানা ১১ মাস ধরে কোনো বেতন না পেয়েও সেবা দিয়ে যাওয়া এই কর্মীদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখন তাদের আর চাকরি নেই।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার (২ জুন) তাদের বকেয়া বেতন ও চাকরির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বার্তা ও চাকরি না থাকার কথা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন ৫৩ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন। ইতোপূর্বে সরকার থেকে তাদের জন্য ২১ হাজার ৫৫০ টাকা বেতন বরাদ্দ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেতন দিয়েছে মাত্র ৮ হাজার টাকা; তাও ছিল অনিয়মিত। পরবর্তীতে হাসপাতালের চাহিদা পূরণের জন্য আরও ২৯ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও এদের কাউকেই বেতন-ভাতা দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ১০–২০ টাকা করে নিয়ে কোনোরকমে দিন যাপন করছিলেন তারা।

এদিকে, বেতন না পেয়ে টানা মাসের পর মাস সেবা দিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ চাকরি হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও হতাশায় ভেঙে পড়েছেন কর্মচারীরা। 

ইলিয়াস নামের এক আউটসোর্সিং কর্মচারী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শর্শদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম আমাদের বেতন দিতেন ৩ হাজার ২০০ টাকা। পরে আমরা আন্দোলন করলে তিনি ৬ হাজার টাকা বেতন দেন। তারপর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর অন্যতম ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত শরীফ উল্যাহ এসে বেতন ৮ হাজার টাকা করলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে থেকেই আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। এত কিছুর মধ্যেও মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। কিন্তু এখন নাকি আমাদের চাকরিই নেই। পরিবার নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।’ 

অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বিবি কুলসুম নামের হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত এক কর্মচারী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার ছেলেটা মাদরাসায় পড়ে। ১১ মাস ধরে কোনো বেতন পাইনি; যার কারণে ছেলের মাদ্রাসার খরচও দিতে পারছি না। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেও কোনো কিছুই হয়নি। এ চাকরি গেলে এই বয়সে এসে অন্য কোথাও গিয়ে কাজ করারও সুযোগ নেই। আমাদের দেখার কেউ নেই।’ 

ঝর্ণা নামের হাসপাতালে কাজে নিয়োজিত আরেক আউটসোর্সিং কর্মচারী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি ২০০২ সালে মাত্র আড়াই হাজার টাকা বেতনে হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ শুরু করেছিলাম। ২৩ বছর কাজ করে গেলেও আমাদের চাকরি স্থায়ী হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের নামে অনেক বেশি বেতন তুললেও প্রকৃতপক্ষে আমরা পেয়েছি সামান্য অর্থ। গত ১১ মাস বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছি। হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের দেওয়া ১০-২০ টাকা দিয়ে কোনোরকম সংসার চলত। এখন চাকরিটাও নেই। কী করে বাঁচবো আমরা।’

এ প্রসঙ্গে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের বিষয়ে বর্তমানে কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। মন্ত্রণালয় থেকেও নির্দেশনা এসেছে আউটসোর্সিং কর্মীদের আর না নেওয়ার জন্য। বরাদ্দ না থাকায় তাদের বেতন দেওয়াও হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। 

তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের হাতে কিছুই নেই। তারা চাইলে থাকতে পারেন, আবার চলে গেলেও আমরা কিছু করতে পারি না। আমরা কেবল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের অনুপস্থিতিতে হাসপাতালের সার্বিক শৃঙ্খলা ও পরিষেবা কার্যক্রমে প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নিয়ম অনুসারে চিঠি দিয়েছি।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!