বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলে জেল খাটলেন নিরপরাধ শিক্ষার্থী!

সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি
সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি  © ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলের জন্য জেল খাটতে হলো সিলেটের হাবিবুর রহমানকে। তার স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জালিয়োতির শিকার হয়ে বর্তমান তার শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

হাবিবুর রহমান স্নাতক সম্পন্ন করেছেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার। এর মধ্যে সাক্ষাত্কারের ডাক আসে আমেরিকান দূতাবাস থেকে। দূতাবাসে তার শিক্ষা সনদে গরমিল ধরা পড়েছে। এরপর মামলা, জেল এমনকি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টা। সবশেষে জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলের মাশুল গুণছেন হাবিবুর। আইনের কাছে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারলেও দূতাবাসের চোখে তিনি এখনো অপরাধী, প্রতারক।

মার্কিন দূতাবাসের তথ্য বলছে, মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান দুই ধরনের ট্রান্সক্রিপ্ট দিয়ে প্রতারণা করেছেন। স্নাতক শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করেন তিনি। গত ৩ এপ্রিল সাক্ষাত্কারের জন্য দূতাবাস তাকে তলব করে। তার জমা দেয়া ট্রান্সক্রিপ্ট অনুযায়ী ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বিষয়ে তার প্রাপ্ত গ্রেড ‘এ’। দূতাবাসের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করেন ওই শিক্ষার্থীকে। কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। সন্দেহ হলে দূতাবাসের কর্মকর্তারা তার ট্রান্সক্রিপ্ট জমা রেখে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নতুন করে আরেকটি ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে পুনরায় সাক্ষাত্কারের জন্য আসতে বলেন।

আরও পড়ুন: জাবির ভর্তি পরীক্ষায় ক’টি প্রশ্নের উত্তর দিলেন সেই বেলায়েত?

দূতাবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে ১৮ জুলাই সাক্ষাত্কারের জন্য উপস্থিত হন হাবিবুর। কিন্তু তার প্রথমে জমা দেয়া ট্রান্সক্রিপ্ট এবং পরে দেয়া ট্রান্সক্রিপ্টটির মধ্যে বেশকিছু গরমিল ধরা পড়ে। ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট বিষয়ে প্রথমে জমা দেয়া ট্রান্সক্রিপ্টে তার গ্রেড উল্লেখ ছিল ‘এ’। আর দ্বিতীয় দফায় জমা দেয়া ট্রান্সক্রিপ্টে একই বিষয়ে গ্রেড উল্লেখ করা হয়েছে ‘সি’। তাছাড়া ট্রান্সক্রিপ্টের ফরমেটেও বেশকিছু গরমিল ধরা পড়ে।

দুই ধরনের ট্রান্সক্রিপ্ট নিয়ে ধরা পড়ার পর বিষয়টিকে গর্হিত অপরাধ উল্লেখ করে হাবিবুরকে পুলিশে হস্তান্তর করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গুলশান থানায় একটি মামলাও দায়ের করে দূতাবাস। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, হাবিবুর রহমান নামের ওই শিক্ষার্থী ভয়ংকর রকমের প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি দুই ধরনের ট্রান্সক্রিপ্ট জমা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ৪৬৮ ও ৪১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

ট্রান্সক্রিপ্টে দুই ধরনের তথ্য থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল উল্লেখ করে হাবিবুর মার্কিন দূতাবাসের কাছে একটি লিখিত স্টেটমেন্ট দিয়েছেন। সেখানে হাবিবুর বলেছেন, ইউনিভার্সিটির ভুলেই তিনি দোষী প্রমাণিত হন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার লিখিত অঙ্গীকারও করেন তিনি।

হাবিবুরকে কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন, ওই শিক্ষার্থীর নয়, ভুলটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই। পরে ওই শিক্ষার্থীকে আদালত জামিন দেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভুলটি ওই শিক্ষার্থীর নয় বলে জানায়।

মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের ভুলে ট্রান্সক্রিপ্টে দুই ধরনের গ্রেড উঠেছে। বিষয়টি জানিয়ে আমরা মার্কিন দূতাবাসকেও চিঠি দিয়েছি। ওই শিক্ষার্থীকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। এ ঘটনার পর আমরা ইইই বিভাগটা বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করছি। ওই শিক্ষার্থীর বিষয়টি নিয়ে আমরা রিভিউ করছি। তার সব খাতাপত্র চেয়েছি। সেগুলো পেলে বোঝা যাবে যে হাবিবুর সত্যিকার অর্থেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে, নাকি অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করে সনদ সংগ্রহ করেছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সাইফুল বলেন, মার্কিন এম্বাসির মামলাটির তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ওই শিক্ষার্থী তথ্য-প্রমাণের মাধ্যমে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, এটি তার ভুল নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে পুরোপুরি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence