যৌন হয়রানির অভিযোগ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের বিরুদ্ধে, ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪০ PM , আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০১ PM
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইনতিসার আলমের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। তবে অভিযোগ প্রদানের পরেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীদের দাবি, গত ২০ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা চলাকালীন সময় শিক্ষক ইনতিসার আলম তার ব্যক্তিগত ফোন জব্দ করেন এবং পরীক্ষার নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করার অজুহাতে অপ্রত্যাশিতভাবে তার সংবেদনশীল জায়গায় হাত দিয়ে স্পর্শ করেন। তিনি এই ঘটনাকে ‘স্পষ্ট যৌন হয়রানি’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এতে তিনি মারাত্মকভাবে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
এ ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি পোস্ট করেন ওই শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তির দ্বিতীয় রিলিজ স্লিপে আবেদনের সময়সূচি প্রকাশ
পোস্টে তিনি জানান, ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার দিন যৌন হয়রানির শিকার হন তিনি। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু পাঁচ দিন পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার সময় শিক্ষক ছাত্রীর ফোন জব্দ করেন এবং কাছাকাছি বসে পরীক্ষার নিয়মাবলি ব্যাখ্যা করার নাম করে স্পর্শ করেন। এঘটনায় তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলেও সাহস করে ঘটনা প্রকাশ করেন এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ প্রমাণের কথাও উল্লেখ করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি থানায় জিডি করেছেন বলে জানান তিনি।
‘এই ঘটনা কেবল একটি হয়রানির অভিযোগ নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নিরাপদ পরিবেশে, তাও আবার পরীক্ষার কক্ষে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া শুধু নৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নয়, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।’-শাহিনুজ্জামান, আইনজীবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর করা পোস্টে নায়রিতা প্রিয়দর্শিনী হালদার নামের আরেক নারী শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন, ‘এই লোকটা (ইনতিসার আলম) আসলেই প্যাথেটিক। তার ক্লাসে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত এখন আমার জন্য অনুশোচনার। তার অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি আর বেপরোয়া কথা বলার ভঙ্গি আমাকে ভীষণ অস্বস্তিতে ফেলত। আর মেয়েদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একেবারেই অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য।’ শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী থেকে প্রিমিয়াম পারফিউম চাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় মোকাবিলায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কার্যকর যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি থাকা অত্যন্ত জরুরি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো কমিটি রয়েছে কি না, এবং থাকলেও সেটি আদৌ কার্যকরভাবে কাজ করছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার।
আরও পড়ুন: এনটিআরসিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় ১৭তম ও ১৮তম নিবন্ধনের আবেদনবঞ্চিতরা
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনা কেবল একটি হয়রানির অভিযোগ নয়, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো নিরাপদ পরিবেশে, তাও আবার পরীক্ষার কক্ষে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া শুধু নৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা নয়, এটি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ইনতিসার আলমকে ফোন করা হলে তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
এ ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির যোগাযোগ শাখার ডেপুটি ম্যানেজার ফাতিয়ুস ফাহমিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য দেন। এতে বলা হয়, ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি যৌন হয়রানির যেকোনো অভিযোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই বিষয়টি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ন্যায়সংগত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’