ডিআইইউ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত হত্যা? বাবা বললেন— ‘বিচার চাই না’

নিহত মাহমুদুল হাসান
নিহত মাহমুদুল হাসান  © টিডিসি ছবি

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২য় শিফটের) মেধাবী শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান (২৭) ফোন খুঁজতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এটা কি স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

সোমবার (১৯ মে) রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ১২৫ নাম্বার পিলারে কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে ছিল মাহমুদুলের মৃতদেহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিয়াবাড়ি থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী সকালে কুর্মিটোলা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর, ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পল্লবী থানায় লাশ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

জানা যায়, মাহমুদুলের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর সাপাহার আশড়ন্দে এবং তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নং আবাসিক হলে থাকতেন। 

মাহমুদুল হাসান যে হোস্টেলে থাকতেন সে হোস্টেলের কেয়ার টেকার লিটন বলেন, ‘সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে মাহমুদুল হোস্টেল থেকে বাহিরে যান। তখনই আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, “কোথায় যাচ্ছেন?”  মাহমুদুল হাসান বলেন, তার ফোন হারিয়ে গেছে সেই ফোন খোঁজার জন্য বের হচ্ছে। তারপর সে আর হোস্টেলে ফিরে আসেনি। তিনদিন পর জানতে পারলাম সে মারা গেছে।’ এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না বলেও জানান তিনি।’

এদিকে হোস্টেলের সিভিল বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, ‘এই মৃত্যু কখনো স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। ফোন হারিয়ে যাবার পরের তিন দিন পর্যন্ত সে কোথায় ছিল? এই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে।’ 

মাহমুদুল হাসানের রুমমেট সাদিক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি রুমে আসি। আসার পর দেখি মাহমুদুল ভাই নিজের সাথেই একা একা কথা বলছে। আমার কাছে বিষয়টা অস্বাভাবিক, সন্দেহজনক লাগল এবং কোনো সমস্যা আছে মনে হলো। পরে ঘুমানোর আগে তিনি ফোনে কার সাথে যেন কথা বললেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমাকে বললেন তার ফোন নাকি হারিয়ে গেছে এবং এটা খুঁজতে বাহিরে যাচ্ছে। এই বলে সে চলে গেল। এই মৃত্যুটা আমার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না।’ 

এদিকে তার মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম চাঁদ বলেন, ‘ফোন খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এবং  মৃত্যু কখনো স্বাভাবিক হতে পারে না। নিখোঁজ হওয়ার পরের তিনদিন সে কোথায় ছিল সেই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে।  আমরা চাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এই মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করা হোক।’ 

আরও পড়ুন: এবার কুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি শিক্ষক সমিতির

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল বাসেত বলেন, ‘আমি সকাল দশটার দিকে এক্সিডেন্টের কথা জানতে পারি। পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মাজেদুল ইসলাম এবং ডিপার্টমেন্টের কো-অর্ডিনেটর আবিদ হাসানকে সেখানে যেতে বলি এবং তারা আমাকে মৃত্যুর খবরটি দুপুর ১২টায় নিশ্চিত করেন। আমরা ডিপার্টমেন্ট, ভিসি এবং বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের সাথে কথা বলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করব।’ 

সহকারী প্রক্টর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আতিকুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘ঘটনাটা জানতে পারি সকাল দশটার দিকে। ডক্টরস স্যারকে বিষয়টি অবহিত করি। প্রক্টর স্যার আমাকে থানায় যেতে বলেন। থানার এসআই মনির ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে অ্যাক্সিডেন্ট বলে নিশ্চিত করেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনাটির সঠিক ব্যাখ্যা জানতে হলে ময়না তদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কী হবে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিবেন।’

এদিকে নিহত মাহমুদুল হাসানের পিতা ইদ্রিস আলী মাস্টার বলেন, ‘আমার ছেলে মাহমুদুল ঢাকাতে মারা গেছে। অ্যাকসিডেন্ট নাকি খুন হয়েছে আমরা বলতে পারব না। আমরা ঢাকা যেতে পারি নাই। আমার চাচাতো ভাই রবিউল মাহমুদুলের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসছে। রাতেই আমরা মাহমুদুলের লাশ দাফন করি। যেহেতু আমার ছেলে দুনিয়াতে নেই, এখন আমরা বিচার চাই না।’

পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কুর্মিটোলা মেডিকেলে একটা লাশ এসেছে এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত একটা টিম যায় সেখানে। গিয়ে দেখতে পায়, কিছু লোক তাকে রেখে চলে গেছে। ডাক্তার আমাদের প্রাথমিকভাবে এটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন। পরবর্তীতে আমরা লাশের পরিচয় পাই। পোস্টমর্টেম শেষে লাশ তার আত্মীয় রবিউলের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এখনও তার পরিবার থেকে কোন মামলা করেনি।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence