রাখাইনে সময়োপযোগী নীতির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল এসআইপিজি–এনএসইউ

আলোচনাসভা
আলোচনাসভা  © সংগৃহীত

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি) “রাখাইনের পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব” (Situation in Rakhine and Implications for Bangladesh) শীর্ষক এক আলোচনাসভার আয়োজন করে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সংকট, বাংলাদেশের উপর এ সংকটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব এবং আঞ্চলিক সম্পৃক্ততার সম্ভাব্য টেকসই কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে শীর্ষস্থানীয় গবেষক, নীতিনির্ধারক ও কূটনীতিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হলে একত্রিত হন।

এ সভায় রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির (এএ) উত্থান, দীর্ঘমেয়াদী রোহিঙ্গা সংকট এবং রাখাইন অঞ্চলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব নিয়ে সময়োপযোগী আলোচনা করা হয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কিভাবে পরিবর্তন করার পাশাপাশি আঞ্চলিক কূটনীতি, অর্থনৈতিক সংহতি ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কী ধরনের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে, তা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় করা হয়।

আলোচনায় বক্তারা মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ সংঘাত এ অঞ্চলের গতিবিধিকে কিভাবে প্রভাবিত করছে তা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি–সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বলেন, “মানবিক বিবেচনার সর্বাধিকার থাকলেও, আরাকান আর্মিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আরাকান আর্মিসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে উন্মুক্ত সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।” অন্যদিকে,প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল আবদুল হাফিজ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে আসছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাখাইনের বেশিরভাগ অংশই আরাকান আর্মির দখলে। ফলে সীমান্তবর্তী এলাকায় হামলা, অস্ত্র চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার এবং রোহিঙ্গাদের স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত কৌশলগত নীতি ও কূটনীতিই আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং রাখাইনের শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করতে পারে।” 

এ আলোচনা সভায় এসআইপিজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান রাখাইনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইতোমধ্যে ৭,৫০,০০০ মানুষ রাখাইন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন রাখাইনে দারিদ্র্য উদ্বেগজনক পর্যায়ে উঠে গেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থিতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে, প্রধানত মানবিক সহায়তা প্রদান এবং চট্টগ্রাম ও রাখাইনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে। ‘অর্থনৈতিক সংযোগগুলি বৃহত্তর সহযোগিতা এবং শান্তি-নির্মাণের পথ হিসাবে কাজ করতে পারে,’ তিনি মন্তব্য করেন। তিনি একটি শান্তিপূর্ণ সীমান্ত এবং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীকে সুরক্ষিত করতে এটিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন।

সেন্টার ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স (সিবিজিএ)-এর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দিন জানান, আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে কৌশলগত পদ্ধতি অবলম্বন করছে। তিনি এ অঞ্চলে সামরিকীকরণ, অস্ত্র চোরাচালান এবং বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক একটি দ্রুত ও বাস্তবমুখী নীতি গ্রহণের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে এবং ধীরে ধীরে ও নীরবে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ঢলও বন্ধ করতে হবে। ২০২৩ এর অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি  পর্যবেক্ষণ করে তিনি বলেন যে বাংলাদেশকে তার নিরাপত্তার উদ্বেগ বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত।

এ আলোচনায় মানবিক বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এআরএনএ)-এর চেয়ার নুরুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছেন, যা সাম্প্রতিককালে আরাকান আর্মির মাধ্যমে আরও তীব্রতর হয়েছে। এছাড়া যে কোনো প্রত্যাবাসনই নাগরিকত্বের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক নিশ্চয়তা ছাড়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তাতমাদাও ও আরাকান আর্মির ওপর জোরালো চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। 

মানবাধিকার কর্মী সাহাত জিয়া হিরো মন্তব্য করেন যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের দৃশ্যমান অগ্রগতি এখনো অপ্রতুল।

জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি)-এর ভূমিকা নিয়েও এ আলোচনায় আলোকপাত করা হয়। এনইউজি-র মানবাধিকার মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার অং কিয়াও মো বাংলাদেশ সরকারের অব্যাহত সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করে এবং রোহিঙ্গাদের দাবিকে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বৃহত্তর পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির মানবাধিকার লঙ্ঘন ও জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান।

সমাপনী বক্তব্যে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর আবদুল হান্নান চৌধুরী এসআইপিজি, এ অনুষ্ঠানে উপস্থাপক, বক্তা, আলোচক এবং উপস্থিত সবাইকে তাঁদের অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি আঞ্চলিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর সংলাপ জোরদার করা এবং নীতিনির্ধারণে একাডেমিক গবেষণার ভূমিকা নিশ্চিত করতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, একাডেমিয়া ও নীতি-নির্ধারকের  মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে এনএসইউ অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence