এভারকেয়ারে মায়ের সান্নিধ্যে তারেক
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১৭ PM , আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৭ PM
দেড় যুগের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখান থেকে রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকায় লাখো মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনা নিয়ে অসুস্থ মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে গেছেন তারেক রহমান। এ সময় আইসিও কেবিনে মায়ের পাশে তারেক রহমান ছাড়াও তার সহধর্মিণী বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমান ও একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান ছিলেন।
বিমান বন্দর থেকে রাজধানীর তিনশ ফিট এলাকার সমাবেশ মঞ্চ পর্যন্ত যেতে তারেক রহমানের সময় লাগে সোয়া ৩ ঘণ্টারও বেশি। সেখানে ১৫ মিনিটের মতো বক্তৃতা করেই তিনি হাসপাতালে মাকে দেখতে গেছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি হাসপাতাল চত্বরে প্রবেশ করেন। এর আগে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান তারেক রহমানের সহধর্মিণী জোবায়দা রহমান ও মেয়ে জায়মা রহমান।
আইসিও কেবিনে তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। কেবিনের বাইরে ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ অন্য নেতারা।
এদিকে, তারেক রহমানের আগমনকে কেন্দ্র করে এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ১৭ বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারেক রহমান। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি হাসপাতালের পথে যাত্রা করেন।
গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২৭ নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নেয়া হয়।এভারকেয়ার থেকে তারেক রহমান যাবেন গুলশান অ্যাভেনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকবেন তিনি। এর পাশেই ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িটি তার মা খালেদা জিয়ার আবাসস্থল।
এর আগে গণসংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, যে কোনো মূল্যে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমরা শান্তি চাই। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কারো উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না।
তারেক বলেন, ‘৭১ সালে এ দেশের মানুষ যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, ২০২৪ সালে যেমন সর্বস্তরের মানুষ সবাই মিলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল; সেভাবেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে চায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সময় এসেছে সকলে মিলে দেশ গড়ার। এ দেশে মুসলমান, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আছে। আমরা এমন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যে দেশে পাহাড়ের সমতলের নারী, পুরুষ, শিশু সবাই নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরবে।
সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে বাসে ওঠার আগে তারেক রহমান জুতা খুলে মাটিতে পা রাখেন এবং হাতে একমুঠো মাটি নেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়।
তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমানকে বিমানবন্দরে বরণ করে নেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তাদের মধ্যে ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিমানবন্দর থেকে লাল সবুজ রঙের বিশেষ বাসে তারেক রহমান পূর্বাচলের গণসংবর্ধনাস্থলে যান।
এভারকেয়ার থেকে তিনি যাবেন গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে। এর পাশেই ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িটি তার মা খালেদা জিয়ার আবাসস্থল। এদিকে, তারেক রহমানের আগমন ঘিরে সকাল থেকেই হাসপাতালের গেটে অবস্থান নেন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে তারেক রহমানকে বহন করা গাড়ি হাসপাতাল চত্বরে ঢোকার সময় কর্মী-সমর্থকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায়। এ সময় দলীয় পতাকা, ফেস্টুন নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। যদিও দলের পক্ষ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতাল এলাকায় স্লোগান দিতে নিষেধ করা হয়েছিল।
এর আগে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে তিনি বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে একটি বিশেষ বাসে করে ৩০০ ফিটের উদ্দেশে রওনা দেন। দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তার দুধারে হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। ৩ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর মঞ্চে পৌঁছান বিএনপি নেতা তারেক রহমান। তার আগে দুপুর ১১টা ৪৫ মিনিটে বিমানটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি।