হান্নান মাসউদকে হত্যার হুমকি: স্ক্রিনশট ভাইরাল, থানায় জিডি

জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদ  © সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক এবং নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে শাপলা কলি প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে এ সংক্রান্ত একাধিক স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলোতে দেখা যায়, হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম আজাদের ছেলে ইসরাত রায়হান অমি এবং তার অনুসারী রুপক নন্দীর ফেসবুক ও মেসেঞ্জার বার্তায় আবদুল হান্নান মাসউদকে সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছে।

স্ক্রিনশটে দেখা যায়, মেসেঞ্জারে ইসরাত রায়হান অমি লিখেছেন, ‘আবদুল হালিম আজাদকে নাকি গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে কতিপয় নেতা। হান্নান বল আর তানভির বল যেই নেতাই হোক, খোদার কসম করে বললাম, উত্তর অঞ্চলে চলাচল হারাম হয়ে যাবে। আমাদের নেতাকর্মীরা ডাইরেক গিলে খেয়ে ফেলবে। এখনো ধৈর্য ধরে আছি। তোর নেতাকে এটা কপি করে পাঠাইছ।’

TDC 825x465 (3)

অন্যদিকে, রুপক নন্দী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘হান্নান আগুন নিয়ে খেলা কোরো না, পরে পস্তাতে হবে। যারা আবদুল হালিম আজাদ চেয়ারম্যানকে ভালো জানে, তারা কখনো তোমাকে আস্ত রাখবে না। ভোট করা ঢুকাই দেবে ভিতর দিয়ে। এখনো শান্ত আছি। আমার নেতাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চলে তোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবো।’

এই হুমকির ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতেই হাতিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। হান্নান মাসউদের চাচা এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির হাতিয়া উপজেলার সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী হেডমাস্টার শামছল তিব্রিজ জিডিটি করেন।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪ মিনিটে ‘রুপক নন্দী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আবদুল হান্নান মাসউদকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। একই দিন বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ‘Israt Raihan Ome’ নামের আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে এনসিপির এক কর্মীর মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে হান্নান মাসউদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।

জিডিতে মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তারা বিভিন্ন সময় নানা কৌশলে আবদুল হান্নান মাসউদ ও তার সহযোগীদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়, বিবাদীরা যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

জিডিতে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন—হাতিয়া উপজেলার কান্তি লালের ছেলে রুপক নন্দী (২৫), চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম আজাদ (৪৬), তার ছেলে ইসরাত রায়হান অমি (২৭), সংকর চন্দ্রের ছেলে প্রেম নাল (২৫), তোফায়েল সেরাংয়ের ছেলে নুর হোসেন রহিম (২৬), সংকর চন্দ্র দাসের ছেলে বাবুলাল (৩২) এবং বেলায়েত হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩২)।

হান্নান মাসউদের চাচা শামছল তিব্রিজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার ভাতিজাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকির কারণে পরিবার ও স্বজনরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করে তিনি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

আরও পড়ুন: হাদি হত্যা: আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান ডিএমপি কমিশনারের

হাতিয়া উপজেলা যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, সম্প্রতি চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান একটি চা-দোকানে বক্তব্য দিয়ে ভোটের আগে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না—এমন মন্তব্য করেন, যা হান্নান মাসউদকে ইঙ্গিত করেই দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি-ধমকি শুরু হয় এবং তার ছেলে ও অনুসারীরা এসব স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। তিনি দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান বলেন, ন্যায় ও ইনসাফের পথে থাকার কারণে জুলাইয়ের সহযোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর মতো হান্নান মাসউদকেও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতাকে চরম ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হলেও কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি ইউনূস সরকার ও প্রশাসনের কাছে হান্নান মাসউদসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং অন্যথায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন।

আব্দুল হান্নান মাসউদ নিজে বলেন, হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্টের অপচেষ্টা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর নগ্ন হামলা। বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করেছেন জানিয়ে দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, বিষয়টি পুলিশের নজরে এসেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করা হয়েছে। ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!