‘রুমীর মরদেহ আমাদের হতাশ করছে না, বরঞ্চ আরও বলিয়ান হয়ে উঠছি’

কথা বলছেন সামান্তা শারমিন, ইনসেটে নিহত জান্নাত আরা রুমী
কথা বলছেন সামান্তা শারমিন, ইনসেটে নিহত জান্নাত আরা রুমী  © সংগৃহীত ও সম্পাদিত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ধানমন্ডি থানার যুগ্ম সমন্বয়কারী জান্নাত আরা রুমীকে হিরো আখ্যা দিয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, রুমীর মরদেহ শুধুমাত্র আমাদেরকে হতাশ করছে না। আমরা বরঞ্চ নিজেদের শক্তিতে আরো বলিয়ান হয়ে উঠছি। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ তুলে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রেও এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি।
 
প্রেস ব্রিফিংয়ে সামান্তা শারমিন বলেন, রুমী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। উনি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এনসিপিতে কাজ করতে এসেছিলেন। এই যে তার মরদেহ উদ্ধার, তাকে যে অবস্থায় আমরা দেখতে পেয়েছি, এটাকে এনসিপির জায়গা থেকে, জুলাইয়ের সম্মুখসারির যোদ্ধার জায়গা থেকে আমরা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছি না।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শরিফ ওসমান হাদিও আক্রান্ত হয়েছেন, যিনি ঢাকা-৮ এর একজন প্রার্থী ছিলেন। শুধু তাই না বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াইয়ের একজন অন্যতম নেতা ছিলেন, তিনি আমাদের মধ্যে বীর হিসেবে অবস্থান করছেন এই মুহূর্তে। আমরা তার সুস্থতা কামনা করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি। কিন্তু এরই মধ্যে আমরা যখন খবর পাই, আমাদের সহযোদ্ধা রুমীর মরদেহ যখন আমরা এভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই, হাদির মস্তিষ্ক ভেদ করে দেওয়া বুলেট যেমন আমাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে, রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ আমাদেরকে, এই বাংলাদেশের সকল মানুষকে এবং আমরা এনসিপিসহ অন্যান্য যারা জুলাইয়ের সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন, সকলকে এই ঝুলন্ত অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি।

নিহত রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে সামান্তা শারমিন বলেন, রুমীর প্রত্যেকটা একাউন্টে, প্রত্যেকটা কমেন্টে এবং তার যে লাস্ট পোস্ট ছিল হাদির সুস্থতা কামনায়, এই লাস্ট পোস্টের কমেন্টে পর্যন্ত তাকে বুলিং করা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর রুমী ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি দায়ের করে এবং সেখানে একাউন্ট ও ফোন নম্বরসহ হুমকিদাতাদের লিস্ট সে উপস্থিত করে। আমরা যেটা জানি, এইসব কাজ আসলে গোয়েন্দা বাহিনী তদন্ত করে। কিন্তু যে তথ্য-উপাত্ত তাদের কাছে দায়ের করেছি, প্রমাণ যেগুলো হাজির করছি, সে মোতাবেক আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। অন্যদিকে সবগুলো রাজনৈতিক দল একত্রভাবে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের জুলাই যোদ্ধা যারা ছিলেন, যারা শহীদ পরিবার— শহীদ পরিবারের উপরে একাধিক হুমকি আসছে। এনসিপির একাধিক নেতাকর্মীর উপরে হামলা এবং হুমকি উভয় চলমান আছে।

এটা শুধু এনসিপির ব্যাপার নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়। এখানে দিল্লি, পিন্ডি এবং নিউইয়র্কের আধিপত্যবাদবিরোধী যত সংগ্রামী যোদ্ধা আছে, সকলের জীবনের প্রতি হুমকি আছে।

এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা দেখেছি জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাইয়ের যারা সম্মুখসারির যোদ্ধা, যারা শহীদ পরিবার এবং যারা আহত হয়েছেন, যারা এই পুরো অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা করা হয় নাই। আমরা এও দেখেছি, জুলাই সনদ এবং সংস্কার নিয়ে দিনকে দিন আলাপ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় পুরো দেশটাকে একটা এমন নির্বাচনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে— যে নির্বাচনে কিভাবে পুলিশ বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কিভাবে কাজ করবে সেটার কোন সঠিক রোডম্যাপ নাই।

তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় কটাক্ষ এবং উপেক্ষা করে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর কত উপেক্ষা হলে, আর কত মরদেহ হলে নির্বাচন কমিশন সজাগ দৃষ্টি দিবে?

নির্বাচন কমিশন ‘ফেয়ার’ নয় উল্লেখ করে এনসিপির এই নেত্রী বলেন, আমাদের যে শাপলা নিয়ে ‘শাপলাকলি না শাপলা’ এই বিষয়ে যখন আলোচনাগুলো চলছিল— আমাদের আলাপগুলো কখনোই নির্বাচন কমিশনের আমাদেরকে কি প্রতীক দেওয়া হবে এই বিষয়ক ছিল না। আমরা বারংবার বলে এসেছি এই নির্বাচন কমিশন কোনভাবেই একটি ফেয়ার নির্বাচন কমিশন নয়। এই নির্বাচন কমিশনে যারা কমিশনার নিয়োগ হয়েছে, তাদের নিয়োগ কিভাবে হয়েছে আমরা পরিষ্কারভাবে জানতে চেয়েছিলাম।

এর আগে ঢাকার জিগাতলার একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে বৃহস্পতিবার ভোরে জান্নাতারা রুমীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাজনৈতিক হুমকির বিষয়টি সামনে এসেছে। গত ১৪ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ চলাকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে মধ্য বয়সী এক নারী মারধরের শিকার হন। সেই মারধরে জড়িত থাকার ঘটনায় আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর থেকেই হত্যা ধর্ষণের হুমকি পেয়ে আসছিলেন তিনি। গত ১৩ নভেম্বর এ নিয়ে ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন রুমী।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!