বিএনপির ফাঁকা রাখা ৬৩টি আসনে প্রার্থী হচ্ছেন কারা?
- বিবিসি বাংলা
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ AM
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে নিজেদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি, তবে এখনো ৬৩টি আসনে প্রার্থী তালিকা ফাঁকা রাখা হয়েছে। কোথাও কোথাও পুরো জেলায়, আবার অনেক জেলায় একাধিক আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি বিএনপি।
সোমবার রাতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই এসব ফাঁকা আসনে কারা মনোনয়ন পাবেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপির একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ওই আসনগুলোর একটি বড় অংশ মিত্র দলগুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
সোমবার রাতে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছেন, যে সব আসনে তারা আগ্রহী, সে সব আসনে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি, এবং তিনি আশা করছেন সহযোগী দলগুলো তাদের নাম ঘোষণা করবে, তারপর বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। তবে সব ফাঁকা আসন জোটের জন্য বরাদ্দ হবে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। এরই মধ্যে কিছু আসনে সমমনা দলের নেতারা বিএনপির ‘গ্রিন সিগনাল’ পেয়ে মাঠে প্রচারণা শুরু করেছেন। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা-১৩ আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ জানান, তিনি মৌখিকভাবে বিএনপির সবুজ সংকেত পেয়েছেন এবং নির্বাচনী এলাকায় কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, জোট ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিকভাবে নামে ঘোষণা হবে। অন্যদিকে গুলশান-বনানী এলাকায় গরুর গাড়ি মার্কা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির আন্দালিব রহমান পার্থ।
ঢাকার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বিএনপির জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন, যদিও এ আসনে তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা আগে মিছিল করেছিলেন। বিএনপির সমর্থন পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, যিনি চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নির্বাচন করতে পারেন। এছাড়া বগুড়া-২ এ নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, পিরোজপুর-১ এ জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, লক্ষ্মীপুর-১ এ বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র সাহাদাত হোসেন সেলিম, কিশোরগঞ্জ-৫ এ বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এবং ঝালকাঠি-১ এ বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির সমর্থন পেতে পারেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে থাকছেন কে, জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী
২০২২ সাল থেকে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর পাশাপাশি বামঘরানার ছয়দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চও বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার কথা জানিয়েছে। ঢাকার ১৫টি আসনের মধ্যে নয়টিতে নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি, বাকি ছয়টি ফাঁকা; এর মধ্যে ঢাকা-১৩ ও ঢাকা-১৭ রয়েছে। ঢাকা-৮ এ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রার্থী করায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক বলেছেন, তিনি এই আসনেই নির্বাচন করতে চান এবং এ বিষয়ে বিএনপির সাথে কথা হবে। বিকল্প হিসেবে ঢাকা-১২ আসন বিবেচনায় আনা হলেও সেখানে বিএনপি সাবেক যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরবকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩ আসনে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উভয় আসনেই এখনো বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। তবে গণঅধিকার পরিষদ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি তারা শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে জোট করবে কিনা। একইভাবে আওয়ামী সরকারের আমলে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল হক ঢাকা-৭ আসনে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে, যেটি বিএনপি ফাঁকা রেখেছে। তবে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জোটের শরিক এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ এ বিষয়ে বলেন, মামুনুল হক কখনো বিএনপি জোটে, আবার কখনো অন্য জোটে—ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে গত আগস্টে বিএনপিকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ঢাকা-৮ আসন থেকে সাইফুল হকের নাম ছিল। কিন্তু এই আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করায় তিনি বিকল্প হিসেবে ঢাকা-১২ বিবেচনা করছেন। তবে এখানেও বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, কিছু ফাঁকা আসনে নিজ দলের নেতাদেরও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, যা কৌশলগত বা স্থানীয় সমীকরণের কারণে এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
এ ছাড়া এনসিপি নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তারা বিএনপি এবং জামায়াত উভয়ের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন এবং তাঁদের কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী—নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), আখতার হোসেন (রংপুর-৪), হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১), আবদুল হান্নান মাসউদ (নোয়াখালী-৬), আরিফুল ইসলাম আদীব (ঢাকা-১৪)—নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যদিও এসব আসনে বিএনপি ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বিএনপির সাথে আলোচনা চলছে, তবে কোন আসন বা কতটি আসন সে বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।
সোমবার রাতে প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর এনসিপি সংবাদ সম্মেলনে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি মনোনয়ন বঞ্চিতরা এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। তবে দলটির সদস্য সচিব বলেছেন, এখনো বিএনপির সাথে জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি।
ফলে বিএনপি ফাঁকা রাখা ৬৩টি আসনে কারা প্রার্থী হবেন তা নিয়ে জটিলতা ও রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ অব্যাহত রয়েছে। দলের নেতারা জানিয়েছেন, কৌশলগত বিবেচনায় এবং মিত্রদের চাহিদা মাথায় রেখে পরবর্তী সময়ে এসব আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।