স্থানীয় নির্বাচনের জন্যও জামায়াতের প্রার্থী চূড়ান্ত

জামায়াতের লোগো
জামায়াতের লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার পর এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরোদমে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রার্থী মনোনয়নের কাজ শুরু করেছে দলটি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পর দলটি নতুনভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন নেতারা। 

ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়নের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অংশ হিসেবে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলায় একাধিক জেলা ও মহানগরে নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ জোরদার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, বরিশালসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় পর্যায়ের দলীয় বৈঠক ও সাংগঠনিক সফর সম্পন্ন করেছে দলটির আমির ড. শফিকুর রহমান। এছাড়া প্রায় সবকটি জেলা উপজেলায় সেসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা সাংগঠনিক সফর সম্পন্ন করেছেন। এসব সফরে সাংগঠনিক শক্তি মূল্যায়নের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর্মীদের প্রস্তুতির বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিটি উপজেলায় গঠন করা হচ্ছে নির্বাচনী সমন্বয় কমিটি। একই সঙ্গে জনসংযোগ ও প্রচার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত মনোনীত এসব প্রার্থী পোস্টার, লিফলেটের মাধ্যমে এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত লাভের চেষ্টা করছেন। কেউ আবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নিজেদেরকে এগিয়ে নিতে, কেউবা ভালো কাজের মাধ্যমে মেলে ধরছেন নিজের এলাকার মানুষের কাছে।

‘ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মেম্বার পর্যন্ত স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি জায়গায় আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। প্রতি মাসে তিন থেকে চারটি প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে, আর বাকি স্থানগুলোতেও শীঘ্রই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, যেগুলো স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেবেন। এসব প্রার্থী মূলত তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন, যেখানে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুধুমাত্র নির্দেশনা প্রদান করা হয়।’-এহসান মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল

দিনাজপুর জেলা জামায়াতের শ্রমীক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও জামায়াত ঘোষিত কাহারোল উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকিরুল ইসলাম জাকির বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমাকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। আমিও আমার এলাকায় জনগণের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। তাদের ভালো-মন্দ জানার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‌‌‘নির্বাচনের জন্য শুধু নয়, আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতির আগেও জনগণের কাছেই থাকার চেষ্টা করেছি। তাদের সুখ-দুঃখে সঙ্গী হয়েছি। তাদের সমস্য সমাধানে কাজ করার চেষ্টা করেছি। যদি আল্লাহ কবুল করেন, তাহলে নির্বাচিত হয়ে আগের থেকে আরও বেশি কল্যাণমূলক কাজে নিজেকে মেলে ধরব।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য এবং কৌশলেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। আগের তুলনায় অধিক ‘সফট টোন’ এবং ‘সেবামুখী রাজনীতি’ গুরুত্ব পাচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবিক সহায়তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করছে জামায়াত। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত এবার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে তরুণ ভোটার ও প্রথমবারের ভোটারদের ওপর। তরুণ ভোটারদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরির জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা, ক্যাম্পেইন এবং অনলাইন প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার তারিখ জানা যেতে পারে আগামী সপ্তাহে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘জামায়াত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করতে পারেনি। তবে একটি ধারণা রয়েছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার কারণে তারা বিভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল দল। যদিও রাষ্ট্র পরিচালনায় শরীয়াহভিত্তিক আলোচনা রয়েছে, তবে দলটি ডেমোক্র্যাটিক চিন্তা ভাবনা অনুসরণ করে এবং তাদের কার্যক্রমও ডেমোক্র্যাটিকভাবে পরিচালিত হয়।’

‘চট্টগ্রাম মহানগরের স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী চূরান্ত করা হয়েছে। আমার জানা মতে, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে মেম্বার প্রার্থীরও নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার যখন যে নির্বাচনের ঘোষণা দিক, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’- মোর্শেদুল ইসলাম চৌধুরী, জামায়াত নেতা, চট্টগ্রাম মহানগর

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াত অনেক আগে থেকেই প্রার্থী ঘোষণা করার কারণে তারা তো একটা সুবিধা পাবেই। তারা যখন আগে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তখন তারা অন্য দলের প্রার্থীদের চেয়ে এগিয়ে থাকছে। আমি নিজে জামায়াতের এমন প্রার্থীর লিফলেট দেখেছি, যেখানে নির্দিষ্ট প্রার্থীর নাম ছিল। অন্যদিকে অন্যান্য দলের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন প্রার্থী রয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যেও এখনও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। এই অবস্থায় জামায়াত এগিয়ে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এলাকায় একটি প্রচলন রয়েছে, কেউ আগে আসলে, তারাই ভোট পাবে। কারণ এখনও অনেকেই মনে করেন, যিনি আগে ভোট চেয়েছেন, তাকে ভোট দেবেন।’

দলটির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রতিটি জেলার সাংগঠনিক টিমকে সক্রিয় করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় সভা-সমাবেশ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করতে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

কিছু নির্বাচনী এলাকায় উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি জেলা-উপজেলা ও পৌরসভায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দলটি। শুধু জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় নয়, এসব এলাকায় ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান থেকে মেম্বার পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। 

আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা ইস্যু পরিষ্কার করলেন আসিফ নজরুল

দলটির কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা বলছেন, স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে আগে থেকেই গুরুত্ব দিচ্ছে এবং মাঠ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য সকল ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সুশৃঙ্খলভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থীদের চূড়ান্ত করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন তবে এখনো কিছু জায়গায় এর কাজ চলমান রয়েছে। কিছু জায়গায় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে, কিছু জায়গায় ঘোষণার অপেক্ষায় এবং বাকি প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষণার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা চলছে। খুব তারাতারি এসব জায়গায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

চট্টগ্রাম মহনগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোর্শেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগরের স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। আমরা সিটি করপোরেশনের মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী চূরান্ত করা হয়েছে। আমার জানা মতে, ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থেকে মেম্বার প্রার্থীরও নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার যখন যে নির্বাচনের ঘোষণা দিক, আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

আরও পড়ুন: বাড়ি ভাড়া-বদলি নিয়ে অসন্তোষ, বড় আন্দোলনের পথে শিক্ষকরা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং দলটির কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় জনগণ চরম বিপদে পড়েছিল এবং তাদের ভোগান্তিও বেড়ে গিয়েছিল। তাই আমাদের দাবি ছিল, স্থানীয় নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠিত হোক, যাতে জনগণের ভোগান্তি কমানো যায়। কিন্তু সরকার সে বিষয়ে একমত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তৃণমূল পর্যায়ে বলেছি, সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম যেন আলোচনার মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। অনেক জায়গায় প্রার্থীদের নাম ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে এবং কিছু জায়গায় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব নাম ধীরে ধীরে ঘোষণা করা হবে।’

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থী সংখ্যায় এগিয়ে দেশের যে ২০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে মেম্বার পর্যন্ত স্থানীয় নির্বাচনের জন্য প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি জায়গায় আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। প্রতি মাসে তিন থেকে চারটি প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে, আর বাকি স্থানগুলোতেও শিগগিরই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে, যেগুলো স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেবেন। এসব প্রার্থী মূলত তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত হন, যেখানে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুধুমাত্র নির্দেশনা প্রদান করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুরো দেশকে ১৪টি জোনে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি জোনের আওতায় বেশ কয়েকটি জেলা রয়েছে। জোনাল সমন্বয় কমিটি এই জোনগুলোতে সমন্বয় নিশ্চিত করে এবং জেলার পর্যায়ে উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর প্রার্থী ঘোষণায় সমন্বয়ও করা হয়। এর মাধ্যমে জোনাল কমিটি কার্যক্রম পরিচালনা করে। জেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে সমন্বয় করা হয়।’


সর্বশেষ সংবাদ