চা-চপ বিক্রি করে স্কুল চালান প্রধান শিক্ষক

প্রধান শিক্ষক তিমির
প্রধান শিক্ষক তিমির  © সংগৃহীত

করোনার সময় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অভিভাবকরাও নিয়মিত স্কুলের ফি দেননি। তাই স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে চা-চপের দোকান খুলেন প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক। এখন দোকানের লাভের টাকা দিয়ে তিনি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেন। ভারতের ঝাড়খণ্ডে এই ঘটনা ঘটেছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়গ্রাম শহরের বেসরকারি নার্সারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক। মহামারির সময় শিক্ষার্থী উপস্থিতি শূন্যে ঠেকেছিল।বেশিরভাগ অভিভাবকই স্কুলের ফি দিতে পারেননি। ফলে, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিমির। ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করেও লাভ হয়নি। নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের অধিকাংশের স্মার্টফোন না থাকায় শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ক্লাসে যোগ দিতে পারেনি। উল্টো অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষিকাদের মোবাইলে রিচার্জ করে দিতে হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে।

উপায় না পেয়ে চপ আর মিষ্টির দোকান দেন বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর তিমির। গত দেড় বছর ভালোই চলছে দোকান। লাভের টাকায় নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন ১৫ জন শিক্ষিকা ও ৬ জন শিক্ষাকর্মী।

১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বেসরকারি স্কুলের দু’টি শাখা। একটি বাংলা মাধ্যম, অন্যটি ইংরেজি। করোনার আগে প্রি-নার্সারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ছিল ৭৫০ জন।

২০২০ সালের শুরুতে করোনার কারণে শিক্ষার্থী কমতে শুরু করে। তিমির বলেন, যা মূলধন ছিল তাতে বড়জোর দু’মাস শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো যেত। তার পরে কী হবে ভেবেই চপ-মিষ্টির দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেই।

শহরের উপকণ্ঠে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুরে তিমিরের তিন কাঠা জমি ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সেখানে শুরু হয় দোকান।

আরও পড়ুন- ছাত্রলীগ নেতার লেখা প্রকাশ করায় দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধিকে মারধর

নিজেই চপ ভাজতে শুরু করেন তিমির। স্কুলের শিক্ষাকর্মী সন্দীপ নারায়ণ দেব, অর্পণ নন্দ, কল্পনা সিংহ, শ্যামল দলুই, দুর্গা দে-রা হেড মাস্টারের সঙ্গী হন। ক্রমেই আশেপাশের টিয়াকাটি, শুশনিগেড়িয়া, অন্তপাতি, টিপাশোল গ্রামের বাসিন্দারা দোকানের নিয়মিত খদ্দের হয়ে ওঠেন।

দোকানটি অরণ্য শহরের ১০ নন্বর ওয়ার্ডের পাশে। সকাল কিংবা ও সান্ধ্যভ্রমণে আসা শহরের অনেকেও তিমিরের দোকানের চা-চপের প্রেমে পড়েন। এখন অবশ্য কারিগর রেখেছেন তিমির। রকমারি জিনিসও বেড়েছে। সকালে পাওয়া যায় ইটলি, হিংয়ের কচুরি, ঘুগনি, আলুর চপ, চা। মিষ্টির মধ্যে পান্তুয়া, রসগোল্লা, গজা, মিষ্টি, দই। বিকেলে শিঙাড়া, সবজির চপ, ডিমের চপ, এগ চাউমিন, চিকেন চাউমিন, চিকেন কাটলেট। দামও কম।

দোকানের নাম ‘স্পার্ক ২০২০’। তিমির জানান, করোনাকালে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রমাণ হিসেবেই এই নাম দিয়েছি। শুধু চপশিল্প কেন, নিষ্ঠাভরে যেকোনো কাজ করলেই সাফল্য আসে।

সম্প্রতি স্কুলের শিক্ষাকর্মী দুর্গা দে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার চিকিৎসায় সহযোগিতাও করতে পেরেছেন তিমির। দোকানের পাশের জমিতে আগামী দিনে আদিবাসী-মূলবাসী শিশুদের জন্য একটি অবৈতনিক স্কুল খোলারও স্বপ্ন দেখছেন এই প্রধান শিক্ষক। দোকানের খদ্দের ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র, অন্তপাতি গ্রামের অশ্বিনী দলুইরাও বলছেন, মাস্টারমশাই প্রমাণ করেছেন কোনো কাজই ছোট নয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence