নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে জয়ী জোহরান মামদানি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮ AM , আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২০ AM
নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচনে অনানুষ্ঠানিকভাবে জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। এর মধ্য দিয়ে শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম এবং সবচেয়ে কমবয়সী মেয়র হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে মামদানি ছিলেন সবচেয়ে আলোচিত ও অপ্রতিরোধ্য প্রার্থী। তিনি আগামী ৩১ ডিসেম্বর বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের মেয়াদ শেষ হলে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন।
মেয়র নির্বাচনে প্রধান তিন প্রার্থী ছিলেন, ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্নিওয়া। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও প্রাথমিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তবে আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে পুনর্নির্বাচনের আশা ক্ষীণ দেখে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ক্যুমোকে সমর্থন জানান।
এ তিনজন ছাড়াও ছোট দল ও স্বতন্ত্রভাবে আরও নয়জন প্রার্থী মেয়র পদে লড়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ডেমোক্র্যাট শহর হিসেবে নিউইয়র্কে সাধারণত দলীয় প্রাইমারির পরই মূল প্রতিযোগিতার পরপর বোঝা যাচ্ছিল মামদানিই পরবর্তী মেয়র হতে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের আগে প্রকাশিত একাধিক জরিপেও মামদানি এগিয়ে ছিলেন। সাফোক ইউনিভার্সিটির ২৭ অক্টোবরের জরিপ অনুযায়ী, তিনি ক্যুমোর চেয়ে ৯ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন। সেই জরিপে মামদানির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিলেন ৪৩ শতাংশ ভোটার, ক্যুমোর পক্ষে ৩৪ শতাংশ এবং কার্টিস স্নিওয়ার পক্ষে ১১ শতাংশ ভোটার।
মেয়র নির্বাচনে সর্বাধিক আলোচিত প্রার্থী ছিলেন জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সি এবং প্রথম মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানি এখন অপ্রতিরোধ্য। তার বিরুদ্ধবাদী সব মহলের অপপ্রচার ও বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এ নবীন ডেমোক্রেট প্রার্থী। গত জুনে দলীয় প্রাইমারিতে হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে ধরাশায়ী করে নিজের জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক শক্তির পরিচয় দেন মামদানি। প্রাইমারিতে অভাবিত বিজয়ের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান মামদানির। এখন শুধু অপেক্ষা চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার।
মেয়র নির্বাচনে মামদানি উঠে এসেছেন জাদুকরের মতো। তাকে প্রতিরোধ করতে তার বিরোধীরা সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত মামদানির বিরুদ্ধে কটু মন্তব্য করেছেন। মামদানির বিরুদ্ধে ট্রাম্পকে উসকানি দিয়েছেন রিপাবলিকানরা; এমনকি সমাজতন্ত্রবিরোধী ডেমোক্রেটরা। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করার জন্য তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্টবিরোধী আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তার ন্যাচারালাইজেশন বা আমেরিকান নাগরিকত্ব গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি ছিল কিনা অথবা কোনো ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল কিনা, তা আবারও যাচাই করার জন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এসব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেও যদি কোনো লাভ না হয়, সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক সিটির জন্য ফেডারেল আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইসলামবিরোধী এবং ইসরাইলের কট্টর সমর্থক ইহুদি লবি মামদানির বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে শুরু থেকেই।
কিন্তু কোনোকিছুই টলাতে পারেনি মামদানিকে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নিউইয়র্ক সিটির তরুণ প্রজন্ম এবং বিশেষ করে শ্রমজীবী শ্রেণি তার প্রতি ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছেন। সিটিজুড়ে প্রায় এক লাখ স্বেচ্ছাসেবক জোহরান মামদানির পক্ষে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। নিউইয়র্ক সিটির অন্য কোনো নির্বাচনি প্রচারাভিযানে কোনো প্রার্থীর পক্ষে এত বিপুলসংখ্যক সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবককে কাজ করতে দেখা যায়নি।