যেভাবে এলো মা দিবস

‘মা’ এক শব্দেই তার পূর্ণতা। মা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম ডাক, মা মানেই হাজারো আবদার, মা হলো জাগতিক কিংবা পার্থিব সব শান্তির উৎস। সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্কের যে গভীরতা, তা আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা পরিবারই বলে দেয়।

মাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণের প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য ভালোবাসা চিরন্তন, অনাবিল। সবারই মায়ের পাশে থাকতেই মন উচাটন। তবু বছরের একটি দিনকে শুধু মায়ের জন্য তুলে রাখার কথা প্রথম ভাবেন মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড। তবে সেটাই আধুনিক মা দিবসের সূচনা নয়। আধুনিক মা দিবসের ধারণার প্রবর্তক অ্যান জার্ভিস। তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যুদ্ধবিধ্বস্ত আমেরিকায় নারীদের স্বাস্থ্যরক্ষার গুরুত্ব নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। তার কাজের মূল বিষয়ই ছিল পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যরক্ষার প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধি।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালিত হলেও সব দেশে সব অঞ্চলে কিন্তু একই দিনে এটি পালিত হয় না। মূলত একেক দেশে একেক দিনে দিবসটি পালিত হয়। অথ্যাৎ দিবসটির সার্বজনীন কোনো তারিখ বা দিন নেই। তবে তারিখ যা-ই হোক না কেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত রবিবার দিবসটি পালিত হয়।

মা দিবসের কথিত ইতিহাস: একটি গোষ্ঠীর মতে, দিবসটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল’র উদ্দেশ্যে পালন করা হতো একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষ্ণুবের সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অব মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে উৎসবটি পালিত হতো। প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল। এদিন মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে নানান জিনিস উপহার দেওয়া হতো। মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হতো। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ।

ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও “প্রধান গির্জার” সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হতো প্রতীকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মতো মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে। মা দিবস ছাড়াও বহু দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় ৮ মার্চ। জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত ‘মাদার্স ডে প্রক্লামেশন’ বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলোে মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই’র মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোইয়ের এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

আবার কথিত আছে, আজ থেকে ১৫০ বছর আগের সপ্তাহের রবিবার অ্যানা জারভিসের জন্য একদম অন্যরকম ছিল। নিজের প্রতিষ্ঠিত সানডে স্কুলে বাচ্চাদের দিতেন বাইবেল পাঠ। এই পাঠদান কালে বাচ্চাদের জন্য তার মায়া সৃষ্টি হয়। বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার নিজের মায়ের ছবি খুঁজে ফিরতেন। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় মায়ের মুখচ্ছবিকে লালন করতে চাইলেন তিনি। এই বোধ থেকেই ১৯০৫ সালে মাকে ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে প্রবর্তন করেন মাদার্স ডে বা মা দিবসের।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর স্বীকৃতি ও প্রসার ঘটে ১৯১৪ সালে। কিন্তু এর প্রসার ঘটে আরও পরে। এর আগে আধুনিক মা দিবস পালনের কথা জানা যায়। মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটায় মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস। প্রতি বছর মে মাসের চতুর্থ রবিবারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো ব্রিটেনে। এটা ছিল সতের শতকের কথা। মায়ের সঙ্গে সময় দেওয়া ও মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ সালে। জুনের ২ তারিখকে তারা বেছে নিয়েছিল মা দিবস হিসেবে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে 'মা' দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এই দিনে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে মা দিবস। অ্যান জার্ভিস দিনটির সরকারি অনুমোদন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা চালাতে থাকেন; কিন্তু সফল হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পর তার মেয়ে অ্যানা জার্ভিস মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের কাজে হাত দেন। তিনি চেষ্টা করতে লাগলেন একটি বিশেষ দিন ঠিক করে 'মা দিবস'টি উদযাপন করার জন্য।

সে লক্ষ্যেই ১৯০৮ সালের ১০ মে তিনি পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফিটন শহরের সেই চার্চে, যেখানে তার মা অ্যান জার্ভিস রবিবার পড়াতেন সেখানে প্রথমবারের মতো দিনটি উদযাপন করলেন। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হতে থাকে চারপাশে এবং এক সময় ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।

কতটি দেশে দিবসটি পালিত হয় : বিশ্বের ৪৬টিরও বেশি দেশে দিবসটি পালিত হয়। মায়ের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা প্রকাশে কেউ মসজিদ, মন্দির বা গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা করেন, আবার কেউ মাকে বিশেষ উপহার দেন, কেউবা মাসহ পরিবারের সঙ্গে ডিনার সারেন। অর্থাৎ মায়েদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ উপলক্ষ্যে একেকজন একেকরকমভাবে দিবসটি উদযাপন করে থাকেন।

দেশে দেশে মা দিবস উদযাপন :
যুক্তরাষ্ট্র: উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়।
যুক্তরাজ্য: ইউরোপের এই দেশটিতে চলতি বছর ৬ মার্চ দিবসটি পালিত হয়।
থাইল্যান্ড: দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে দেশটির রাণী সিরিকিতের জন্মদিনে অর্থাৎ ১২ আগস্ট দিবসটি পালিত হয়।
শ্রীলংকা: দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকায়ও আজ রবিবার দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে দেশটিতে মা দিবস উদযাপন তুলনামূলক নতুন।
সিঙ্গাপুর: এশিয়ার এই দেশটিতেও মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার দিবসটি পালিত হয়। তবে এ দিনে কোনো সরকারি ছুটি নেই।
ভারত: আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতেও আজ সম্মানের সহিত মা দিবস পালিত হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence