ডা. জাকির নায়েক ঢাকায় পা রাখতেই ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার আশা নয়াদিল্লির
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৯ PM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৫০ PM
নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে একটি দাতব্য ইসলামিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন ভারতীয় ইসলামিক বক্তা ডা. জাকির নায়েক। তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছালে বাংলাদেশ যেন তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেয়—এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমইএ) উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম টাইমস নাউ এবং সংবাদ প্রতিদিন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাকির নায়েক একজন পলাতক আসামি। তিনি ভারতে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’। তাই আমরা আশা করি, তিনি যেখানেই যান না কেন, সংশ্লিষ্ট দেশ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং আমাদের নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো বিবেচনায় রাখবে।
আরও পড়ুন: কোনো উত্তাপই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব
স্পার্ক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের আয়োজনে আগামী ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকার আগারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হবে ডা. জাকির নায়েকের ওই দাতব্য অনুষ্ঠান। ৬০ বছর বয়সী এই ইসলামিক বক্তা ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতে অবস্থান করছিলেন। মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার তার বিরুদ্ধে ‘ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার’ ও ‘অর্থপাচার’–এর একাধিক মামলা দায়ের করে। সেই সঙ্গে তাঁর পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভি–র সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এর পর তিনি দেশ ছাড়েন এবং মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান। ভারতে ফেরার প্রসঙ্গে তিনি একাধিকবার বলেছেন, ‘আমি ভারতে ফিরব না, যতক্ষণ না ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা পাই।’
২০১৯ সালে মালয়েশিয়ায় হিন্দু ও চীনা সম্প্রদায় সম্পর্কে মন্তব্যের কারণে তিনিও সেখানে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। তাঁর বক্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়। পরে তিনি ক্ষমা চেয়ে জানান, তাঁর মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।
এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। টেলিভিশনে ইসলাম বিষয়ক আলোচনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা নিয়ে তাঁর মন্তব্য ‘ওটা ছিল ইনসাইডার জব’ বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়।
ভারতের সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকা দাবি করেছে, পাকিস্তানে ২০২৩ সালে সফরের সময় জাকির নায়েককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেখানে তিনি ধর্মসভা করেন এবং লস্কর জঙ্গি মুজাম্মেল ইকবাল হাশমিসহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর থেকেই নয়াদিল্লি তাঁর বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চাপ জোরদার করে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার পর জানা যায়, অন্তত দুই হামলাকারী জাকির নায়েকের বক্তৃতা থেকে ‘অনুপ্রাণিত’ ছিল। তখন তাঁর বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
তবে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর নানা প্রশাসনিক বিধি-নিষেধের সঙ্গে সেই নিষেধাজ্ঞাও শিথিল হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ফলে, এই প্রেক্ষাপটে জাকির নায়েকের ঢাকায় আসার খবর নতুন করে কূটনৈতিক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভারত এখন চায়, তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় পৌঁছামাত্রই বাংলাদেশ তাঁকে আটক করে হস্তান্তর করুক। তবে এ বিষয়ে এখনো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।