সরকারি স্কুলের চাকরি হারানোর শঙ্কা, সন্তানকে জঙ্গলে ফেলে দিলেন শিক্ষক
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৬ PM , আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪২ PM
জঙ্গলের একটি পাথরের নিচে তিন দিন বয়সী এক শিশু পাওয়া গেছে। শিশুটির বাবা-মা দু’জনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা চাকরি হারানোর ভয়ে চতুর্থ সন্তান হওয়ার তিনদিন বয়সী শিশুটিকে জঙ্গলে ফেলে যান। ভারতের মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ার ওই শিশুকে তার মা–বাবা একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন। ভোরে নন্দনওয়াড়ি জঙ্গলের নীরবতা ভেদ করে ভেসে আসছিল কান্নার শব্দ। তার কান্নার শব্দ শুনে গ্রামবাসী তাকে খুঁজে পায়। গ্রামবাসী পাথরটি সরাতেই দেখতে পান, রক্তাক্ত ও শীতে কাঁপতে থাকা শিশুটি তখনও বেঁচে আছে।
জানা গেছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুইয়ের বেশি সন্তান থাকলে চাকরি হারানোর আশঙ্কা থেকে এ দম্পতি তাদের গর্ভধারণের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। কারণ, ইতিমধ্যে তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। গত ২৩ সেপ্টেম্বরের ভোরে রাজকুমারী বাড়িতেই সন্তানের জন্ম দেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শিশুটিকে জঙ্গলে নিয়ে একটি পাথরের নিচে ফেলে আসা হয়।
সকালে হাঁটতে বের হওয়া নন্দনওয়াড়ি গ্রামের মানুষ প্রথম কান্নার শব্দ শুনতে পান। এক গ্রামবাসী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম কোনো পশুর বাচ্চা কাঁদছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি, একটি পাথরের নিচ থেকে ছোট্ট দুটি হাত নড়াচড়া করছে। পাথরের নিচ থেকে হাতের কিছু অংশ বেরিয়ে আসছে। কোনো মা–বাবারই এমন কাজ করা উচিত নয়।
ছিন্দওয়াড়া জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুটির শরীরে পিঁপড়ের কামড়ের দাগ ছিল। সে হাইপোথারমিয়ায় (অতিরিক্ত ঠান্ডা) ভুগছিল।
শিশুকে এভাবে পরিত্যাগের অভিযোগে পুলিশ ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ৯৩ ধারায় একটি মামলা করেছে। এসডিওপি কল্যাণী বারকাডে বলেছেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আইনি পর্যালোচনার পর এর সঙ্গে ১০৯ বিএনএসের (খুনের চেষ্টা) মতো আরও ধারা যুক্ত করা হতে পারে।
পুলিশ বলছে, বাবলু দান্ডোলিয়া ও রাজকুমারী দান্ডোলিয়ার চতুর্থ সন্তান এ শিশুটি। তার বাবা বাবলু একজন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। চাকরি হারানোর শঙ্কায় তিনি ও তার স্ত্রী রাজকুমারী তাদের চতুর্থ সন্তান সদ্যোজাত শিশুটিকে পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ভারতে নবজাতক পরিত্যক্ত করার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে মধ্যপ্রদেশে। দারিদ্র্য, সামাজিক কলঙ্ক এবং চাকরিসংক্রান্ত পুরোনো ধ্যানধারণার ভয় থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।