ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে মমতা বললেন—‘আমাকে শেখাতে আসবেন না’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে ‘বিতর্ক’ থামছেই না। ঢাকার আপত্তির পরে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে মুখ খুলেছিল। এর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই কেন্দ্রীয় সরকারকে পাল্টা জবাব দিলেন মমতা।

তিনি বলেছেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আমি অনেকের চেয়ে ভাল জানি।’ তাঁর দাবি, তাঁর বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বিকৃত করেছে বিশেষ রাজনৈতিক দল। তিনি তাঁর মন্তব্য থেকে কোনও ভাবেই পিছু হটছেন না। বলে দিলেন, 'যা বলেছি ঠিক বলেছি, আমাকে যেন না শেখাতে আসে।'

এদিন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি সে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মন্তব্য করব না। কিন্তু আমি যেটা বলেছি, সেটা হল, আশ্রয় চাইতে যদি কেউ আমার সীমান্তে আসে, আমি অবশ্যই সাহায্য করব। আমাদেরও বহু মানুষ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশে কাজ করছেন। তাঁদের যথাযথ পাসপোর্ট-ভিসা আছে। বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষ বাংলায় আসেন, পড়াশোনা করতে, চিকিৎসার জন্য। তো আমি সেই জায়গা থেকেই বলেছি, সমস্যায় পড়ে কেউ আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে এলে আমরা পাশে থাকব। এটা তো সোজা কথা, এর পিছনে তো অন্য কোনও অর্থ নেই।'

তিনি এদিন আরও বলেন, 'আমাদের ২ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এদেশে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। তাঁরা আমাদের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা সাহায্য করে পৌঁছে দিয়েছি তাঁদের বাড়ি। আবার বাংলাদেশের অনেক মানুষও এখন এ রাজ্যে আছেন চিকিৎসার জন্য। তাঁরাও তো ফিরতে চান তাঁদের দেশে। আমি কি তাঁদের না বলব? তাঁদেরও পাসপোর্ট-ভিসা সব আছে।'  

মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, 'আমি খুব সাধারণ কথাই বলেছি, আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে রাজনৈতিক ভাবে। বাংলাদেশেও ভুল ভাবে উপস্থাপনা করা হয়েছে আমার কথা।' 

তাঁর মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি এদিন স্পষ্ট বলেন, 'আমি খুব ভাল জানি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো। আমি সাত বার সাংসদ ছিলাম, দু’বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলাম। অন্য যে কারও চেয়ে বিদেশনীতি ভাল জানি। আমাকে এসব শেখাতে হবে না, বরং ওঁদের শেখা উচিত।'

প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত রবিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের ভাষণে মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশের ঘটনায় আমাদের সমবেদনা রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে। আমাদের দরজায় এসে কেউ যদি কড়া নাড়ে তাহলে আমরা দরজা খুলে দেব। মানবিক কারণে এমন পদক্ষেপ করার কথা রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণায় আছে। তবে বিষয়টি ভারত সরকারের এখতিয়ারে পড়ে।

মমতার ওই মন্তব্যকে সহজভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তিনদিন আগে ঢাকায় সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তাঁর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, যে মন্তব্য তিনি আমাদের দেশ সম্পর্কে করেছেন তা অনভিপ্রেত। আমরা দিল্লির কাছে নোট পাঠিয়ে ওঁর কথার প্রতিবাদ জানিয়েছি। দুই দেশেই কূটনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এমন আশঙ্কার ইঙ্গিত ছিল যে আন্দোলন দমনে সে দেশের সরকারের অভিযানের মুখে অনেকে সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করবে। 

এই পরিস্থিতিতে মমতার বক্তব্য ভারত সরকারের বক্তব্য নয় বলে ওই দেশকে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। পাশাপাশি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে সাংবিধানিক এক্তিয়ারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্য, এ বিষয়ে মন্তব্য করার এক্তিয়ার শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে। বিষয়টি সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্তও নয়। তাই অন্য রাষ্ট্রের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার বাদে আর কেউ মন্তব্য করতে পারেন না।

সে সব সতর্কতা আজ কার্যত উড়িয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, তিনি কোনও এক্তিয়ার-বিরোধী মন্তব্য করেননি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশ নিয়ে যা বলেছি ঠিক বলেছি, আমাকে যেন না শেখাতে আসে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence