পুনরায় খুললো বিদ্যালয়, শিশুর শিখন ঘাটতি কমানো জরুরি

মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন
মুহাম্মদ মুহীউদ্দীন   © ফাইল ফটো

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলেছে দেশের প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আবার সরাসরি পাঠদান শুরু হয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইনে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের ‘ঘরে বসে শিখি’ কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রাথমিকের শিশুদের পাঠদান করা হয়। পাশাপাশি অনলাইনে গুগল মিট এর মাধ্যমে পাঠদান এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওয়ার্কশীট বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষকগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচীতে অংশ নেন।

অবশেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অনলাইন ছেড়ে এবার অফলাইনে অর্থাৎ শ্রেণিকক্ষে শুরু হয়েছে শিখন শেখানো কার্যক্রম। বিদ্যালয় খোলার পূর্বেই শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শ্রমিক এবং দপ্তরিদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে অংশ নিতে দেখা গেছে। এটি অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং সময়োপযোগী উদ্যোগ।

পুনরায় বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক ভালো। অনেকদিন পর বিদ্যালয়ে এসে বেশিরভাগ শিশু উৎফুল্ল থাকলেও অনেক শিশুর মধ্যে একটু কম প্রাণচাঞ্চল্য ছিল। যেন কিছুটা জড়তা ছিলো তাদের মাঝে। অর্থাৎ শিশুসুলভ যে আচরণগুলো আছে, তা  কারো কারো মধ্যে কম ছিল। এমতাবস্থায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো জরুরি।

দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিশুমনে বিদ্যালয়ভীতি, পড়ালেখার প্রতি অনীহা এবং বিষণ্নতার কারণে মনোযোগ হ্রাস পেতে পারে। অনেকের মাঝেই হতাশা কিংবা মেজাজ খিটখিটে ভাব চলে আসতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার এবং পরিবারের সহযোগিতা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি। শিশুর সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাকে সৃজনশীল কাজে সক্রিয় রাখতে হবে। এতে করে তাদের মনোবল ভালো থাকবে।

শিক্ষক চাইলে শিশুর কোন কাজটি করতে ভালো লাগে আর কোনটি লাগে না তার একটি তালিকা তৈরি করে তার ভালো লাগার কাজগুলোতে গুরুত্ব দিতে পারেন। এতে করে শিশুকে বুঝতে সহজ হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে তাকে উৎসাহ দিতে হবে।

শিশুদের শিখন ঘাটতি কমাতে শিক্ষকের আন্তরিকতা ও ব্যক্তিগত সহযোগিতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি যোগ্যতা অর্জনে শিশুর প্রতি সহযোগী মনোভাবাপন্ন হওয়া জরুরি। অবস্থার আলোকে সংশোধিত রুটিন অনুযায়ি বরাদ্দকৃত শ্রেণি কার্যক্রমের সাথে পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত শ্রেণি কার্যক্রমের পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতে পারে। এতে ভালো ফলাফল আসবে।

যে কোন ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং সমস্যা সমাধানের অন্যতম একটি উপায়। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত আচরণ ও সমস্যার ধারণা ও সমাধানের উপায় জানা যায়। দীর্ঘ ছুটি শেষে হঠাৎ বিদ্যালয়ে আসা, স্বাভাবিক শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর জন্য কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী কাউন্সেলিং কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

শিশুকে শ্রেণিকক্ষে অধিক মনোযোগী করার জন্য শিখন শেখানো কৌশলে বৈচিত্র্য এনে শিখনের প্রতি শিশুর মনোযোগ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এক কথায় বলা যেতে পারে Make learning fun, not a chore!

আর কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনে অভিনয়, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা, রচনা প্রতিযোগিতা, চেইন ড্রিল সহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের উপর গুরুত্ব প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনের নিরিখে শ্রেণি কার্যক্রমের সময় বর্ধিতকরণ করা যেতে পারে। শিখন মূল্যায়নের সময় শিক্ষক পূর্ববর্তী ক্লাসের ঘাটতি সম্বলিত বিষয়সমূহ মূল্যায়ন করতে পারেন।

শিশুর মেধা, ধারণক্ষমতা, ধরন ও বয়স ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে শিক্ষককে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হয়। যেহেতু শিশুর শিখন ঘাটতি পূরণে শিক্ষকই নিয়ামক শক্তি, তাই পূর্ববর্তী ও বর্তমান শ্রেণীর বিষয়বস্তুর সংযোগ রক্ষা করে শিক্ষককে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

আমরা সবাই জানি ও বিশ্বাস করি Every child is a genius, every child is a prodigy, every child is a miracle. And every child needs a push. আর তাই শিক্ষকের দায়িত্ব হবে শিশুর মধ্যকার হিডেন ট্রেজার আবিষ্কার করার লক্ষ্যে সময় ও পরিবেশ উপযোগী সৃজনশীল পন্থার প্রয়োগ ঘটানো।

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, নোয়াখালী সদর, নোয়াখালী।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence