মৃত্যুর রাতেই ছিল দুর্জয়ের জন্মদিন

দুর্জয় ও তারা মা-বাবা
দুর্জয় ও তারা মা-বাবা  © টিডিসি ফটো

রাজধানীতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত দুর্জয় এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। নিষ্ঠুর দুই বাসের ‌‘প্রতিযোগিতা’ কেড়ে নেয় মাইনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয় (১৬) জীবন। সোমবার ছিল তার জন্মদিন। রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় ঘটে এ সড়ক দুর্ঘটনা। এরপর পথচারীরা মাঈনদ্দিনের ফোন থেকে পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে জানায়।

এ ঘটনার পর ৯টি বাসে আগুন দেয় স্থানীয়রা। ভাঙচুর করে আরো ৩টি বাস। সড়ক অবরোধ করে দুর্জয় হত্যার বিচার দাবি করে তারা।

আরও পড়ুন: বাস থেকে নামিয়ে দেয় রাইদা, চাপা দেয় অনাবিল

প্রথমে মঈনুদ্দিনের দুলাভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে মঈনুদ্দিনের ছিন্নভিন্ন শরীর রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর পরিবারের অন্যান্য লোকজন সেখানে পৌঁছায়।

দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাঈনুদ্দিন সবার ছোট। বড় ভাই মনির ছোট একটি চাকরি করেন। মূলত সংসার চলে বাবার টিনের ছোট্ট চায়ের দোকানের আয় থেকেই। বড় ভাই ভালো কিছু না করার কারণে এ সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিল সে।

আরও পড়ুন: রাজধানীতে বাসচাপায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, বাসে আগুন-ভাঙচুর

বাড়িতে চিৎকার দিয়ে কেঁদে যাচ্ছেন মাঈনুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের বাবা-মা।

দুর্জয়ের মা জানান, দুর্জয়ের জন্মদিন ছিল সোমবার (২৯ নভেম্বর)। দুর্জয় জানতো না তার জন্মদিনের কথা। দুর্জয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এবার।

দুর্জয়ের বাবা বলেন, ‘মাইনু কই? মাইনু! আয়, তোরে ভালো কলেজে ভর্তি করমু। আমার পোতে আজক্যা দুপুরেও আমারে কইছে, আব্বারে ভালো কলেজে ভর্তি করবানা? আমি কইছি দিমু।’

তিনি আরও বলেন, ‘কইছি, বাজান তুমি কলেজের পোলাপানের সঙ্গে সুন্দরভাবে থাকবা। ভালো কলেজে দিমু গো, আমার পোতের কতো আশা। ভালো কলেজে দিতাম গো।’

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন আরও জোরদারের ঘোষণা

স্থানীয়রা জানায়, নিহত মাঈনুদ্দিন এ বছর স্থানীয় একরামুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বাবার নাম আব্দুর রহিম। তিনি পেশায় একজন দোকানি। তাদের বাসা পূর্ব রামপুরার তিতাস রোডে।

নিহতের বন্ধু মারুফ ইসলাম জানায়, রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতির অনাবিল পরিবহনের বাসটি মাঈনুদ্দিনকে চাপা দেয়। এ সময় বোনের জামাই সাদ্দাম তার সঙ্গে ছিলেন। আহত অবস্থায় তিনি চিকিৎসাধীন।

এদিকে, এ ঘটনায় অভিযুক্ত বাস এবং এর চালককে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সোমবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের ডিসি মো. আহাদ।

আ. আহাদ দাবি করেন, পুলিশ নিহতের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি পুলিশকে বলেছেন তারা ভাঙচুর বা আগুন দেননি। অন্য কেউ এসে এসব করিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয় বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। কারা বাসে আগুন দিয়েছে তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।

এ বিষয় রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, বাসটির চালককে আটক করা হয়েছে। এখনো নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ