ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো: প্রেস সচিব

সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম
সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম   © সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হত, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো।

আজ শনিবার (১১ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘জুলাইয়ের মতো মহৎ সময় আমাদের জন্য আগে কোনোবার আসেনি। আমাদের সাংবাদিকরা ১৯৭১-এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছে, আমি জানি না। আমাদের এক কোটি লোক শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়। এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি। আমাদের আমাদের রাইটিংয়ের অভ্যাসটাটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। বড় বড় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেওয়া ছিল তার কাজ। সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘শেখ হাসিনা বৃহত্তম জেলখানা, বৃহত্তম গোরস্তান তৈরি করেছিল। এতেই বোঝা উচিত ছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী তারা ফ্যাসিবাদের একধরনের সহযোগী ছিল। ফ্যাসিবাদ কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ফ্যাসিবাদ হলো জমিদারি ও কর্তৃত্ব। আমরা সেই জমিদারি ও কর্তৃত্বের অবসান করতে চাই। আমাদের ভিশনটা (লক্ষ্য) হবে জাতীয় ও জনগোষ্ঠীর স্বার্থকেন্দ্রিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৬-০৭ সালের জরুরি অবস্থাকে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারেনি। এটা ছিল মাইনাস টু থিওরি। আজকেও আন্দোলনের অংশীদাররা কাউকে মাইনাস করতে চায়, তাদেরও একই অবস্থা হবে।’

অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার ইতিহাস আমরা যা দেখেছি, তা বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। স্বৈরাচার যখন কেন একটা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে তখন বলা হতো, ছাত্রদল অথবা শিবির মরেছে। তাহলে তাহর পাশে কাউকে দেখা যেত না।’

জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি আসাদুল ইসলাম। 

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ