এডিস মশা নিধনে চাই বছরব্যাপী পরিকল্পনা
- মীর ইমরান আলী
- প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০৮:২৫ PM , আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০, ০৯:৩৪ PM
করোনা ভাইরাসের মধ্যে আরেক আতংকের নাম ‘ডেঙ্গু’। এ যেন ‘মড়ার’ উপর খাঁড়ার ঘা। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই বস্তি থেকে শুরু করে অভিজাত ফ্লাট-বাড়িসহ সব জায়গায় শুরু হয় মশার উৎপাত। অনেক জায়গায় আবার দিনের বেলাও এ উৎপাত থেকে রেহাই নেই। ফলে প্রতিদিন ক্রমাগতভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। তাই মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে বাড়তি আতঙ্ক।
চলতি বছরে চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৫ হাজার ৫৫০টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে ২ হাজার ৬৮৬টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এডিসের লার্ভা পাওয়ায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৮১০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত বছর বাংলাদেশেে এ রোগ প্রায় মহামারী আকার ধারণ করেছিল।
তথ্যমতে, চলতি বছর রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু ও সন্দেহজনক ডেঙ্গু নিয়ে ৬৪২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৫৪ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ও অক্টোবরে ১৬৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। সরকারি হিসেবে এ রোগে মারা গেছেন ১৭৯ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গত বছর এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। আমরা মনে করি কেবল মৌসুমভিত্তিক নয়, এডিস মশা নিধনে বছরব্যাপী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ জনগণের জীবন রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। অচিরেই এডিস মশা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে এডিস মশার বংশবিস্তার ঠেকানোই মূল কাজ। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা ময়লা আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় না রেখে যত্রতত্র ফেলে রাখি। যেখানে মশা তাদের বংশ বিস্তার করে। প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা যেখানে সেখানে ফেলে রাখায় বৃষ্টির পানি জমে। বাড়ীর আঙ্গিনা নর্দমা পরিষ্কার করা হয় না, সেখানেও মশা বংশ বিস্তার করে। শহরে নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালানো উচিত যা পরিমিতভাবে হয় না। তাহলে বলাই যায় মশারা আমাদের অবহেলার কারণেই বেড়ে ওঠে।
মশাদের রুখতে খোলা বোতল, যানবাহনের টায়ার, ডাবের খোসা যত্রতত্র ফেলে রাখা যাবে না। এগুলো ধ্বংস করে ফেলতে হবে যাতে কোনো মশা জন্মাতে না পারে। খাওয়া দাওয়া করার পর পাত্রগুলো ধুয়ে রাখতে হবে, মশারি ব্যবহার বাড়াতে হবে। বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে বাড়ির পাশের মশা বাড়ির বাসিন্দাদেরকেই আক্রমণ করবে।
এডিস মশা বেশি আক্রমণ করে দিনের বেলায়, বিশেষ করে দিনের শুরুতে আবার রাতের শুরুতে। তাই এই সময়টাতে দরজা জানালা আটকে রাখতে হবে। দেশের পুরো চিকিৎসাব্যবস্থা যখন করোনা মহামারীর কবলে, সেই সময়ে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ শুরু হলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এখন থেকে মশক নিধনে গাফিলতির কারণে যেন এমন অবস্থার সৃষ্টি না হয়। দুই সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা ও কার্যকর উদ্যোগই পারে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে। তবে এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা ও সর্তকতার বিকল্প নেই।
লেখক: শিক্ষার্থী, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়