আন্তর্জাতিক কূটনীতিরও নিয়ন্ত্রক এখন পুঁচকে মাইক্রোব

ইরফান রিয়াদ
ইরফান রিয়াদ  © টিডিসি ফটো

যেভাবেই হোক চীনকে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিকভাবে বিশ্ব থেকে আলাদা করতে হবে। এরকমই লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কীভাবে এখন চীনকে একঘোরে করা যায়। চীনের সমর্থনে কেউ কথা বললেই যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি চীনের পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবরকম অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণাও দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

কিন্তু পশ্চিমা দেশ যতই চীনকে একঘোরে করার চেষ্টা করুক, চীন ধীরে ধীরে পায়ের তলায় জমি ফিরে পাচ্ছে। করোনাকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক বোঝাপড়াটা চালিয়ে নিচ্ছে চীন। হাজার হোক, মার্কিন হুমকি থাকলেও দেশটার নাম তো চীন। ওতো সহজে সে আবার কবে কাবু হয়েছে পশ্চিমা দুনিয়ার সামনে?

এরকম শত শত মার্কিনি নিষেধাজ্ঞা সইবার অভ্যাস চীনের কাছে নতুন নয়। আগেও এরকম হাজার হাজার বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েও কাবু করা যায়নি চীনাদের। করোনার এই সময় চীনারা যেনো আবার অর্থনীতির চাকা নতুন গতিতে চালানো শুরু করলো।

এই করোনাকে সামনে রেখেই শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নতুন খেলা। আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান রীতিমতো চীনকে একঘোরে করতে মাঠে নেমে পড়েছে। তাদের দাবি, চীন ষড়যন্ত্র করেই ছড়িয়েছে কোভিড ১৯ এর জীবাণু। চীন সঠিক সময়ে করোনা সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক না করায় মহামারী রুপ নিয়েছে করোনা। তার ফলেই পৃথিবী জুড়ে এতো মৃত্যু। চীন আসলে অন্য দেশের অর্থনীতিকে শুঁইয়ে দেবার জন্যই ষড়যন্ত্র করে জীবাণু ছড়িয়েছে।ট্রাম্প রীতিমতো করোনাকে চাইনিস ভাইরাস বলে সম্বোধন করে।

জাপান সরকার ইতিমধ্যে বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে চীন থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এমনকি বলা হয়েছে, চীন থেকে ব্যবসা সরালেই সরকার থেকে দেওয়া হবে প্রণোদনা সাহায্য।

কিন্তু সবাই তো আর ট্রাম্পের সুরে সুর মেলায় না। কেউ কেউ চুপ রয়েছে। কেউ কেউ আবার দিব্যি চীন থেকে সাহায্য নিয়ে চলেছে প্রতিটি পদক্ষেপে। বিভিন্ন দেশ বুঝিয়ে দিচ্ছে যে তাদের পররাষ্ট্রনীতি ট্রাম্প কি বলছে বা পশ্চিমা দেশ কোন পথে চলেছে সেই অনুযায়ী চলবে না। পরিস্থিতি বুঝে তারা চীনের সঙ্গে হাত মেলাবে।

করোনা এমনিতেই সর্বনাশা রূপ ধারণ করেছে। কেউ কিছু বুঝেই উঠতে পারছে না যে এই সংক্রমণ কিভাবে ঠেকানো সম্ভব। একমাত্র চীন কিছুটা হলেও জানে এই বিপদের দিনে কখন কি করতে হয়। অতএব এই সময় বুদ্ধিমানের কাজ হবে চীনের থেকেই সাহায্য নেওয়া।

এই ভাবনাতেই সৌদি আরব চীনের সঙ্গে ২৬৪ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করলো। এই চুক্তি অনুযায়ী চীন সৌদি আরবের কোভিড ১৯ নিয়ন্ত্রণের সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করবে। চীন থেকে ৫০০ জনের একটি বিশেষজ্ঞদের দল যাবে সৌদি আরবে। সেখানে তারা তৈরি করবে বেশ কিছু টেস্টিং ল্যাবরেটরি। তৈরি হবে অত্যাধুনিক কোয়ারান্টিন সেন্টার। দেশের অধিকাংশ মানুশের যাতে করোনা টেস্ট হয় এবং অত্যন্ত দ্রুত সংক্রমিত ব্যক্তি চিকিৎসা পায়, সেই ব্যবস্থা তৈরি করবে চীনের এই দলটি। এর পাশাপাশি থাকবে পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট, কিট, ভেন্টিলেটর এবং ট্রিটমেন্টের জন্য আবশ্যক যন্ত্রপাতির সরবরাহ।

কয়েকদিন আগে সৌদি রাজ পরিবারের প্রায় ১৫০ জন করোনায় আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গিয়েছিলো। সৌদি রাজা এবং যুবরাজ কোরোনার সংক্রমণের হাত থেকে নিস্তার পেতে এরই মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন একটি গোপন নির্জন দ্বীপে। একটি সাত তারকা হোটেলকে রাতারাতি পাল্টে তৈরি করা হয়েছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে, যেখানে রাজপরিবারের সদস্যরা গৃহবন্দি রয়েছেন।

উল্লেখ্য সৌদি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। তাহলে করোনায় সৌদির প্রথম সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানোর কথা ছিল আমেরিকার কাছে। কিন্তু আমেরিকাই এখন করোনার কাছে ধরাশায়ী। মৃত্যুর মিছিলে সামনের কাতারে আমেরিকা। যেখানে করোনা মোকাবিলায় আমেরিকা নিজে নাস্তানাবুদ সেখানে আমেরিকার থেকে সাহায্য চেয়ে কোন ফলাফলই আসবে না। এমতবস্থায় সৌদি যে চীনের সাহায্য প্রার্থী হবে তাতে আর আশ্চর্যের কি?

এরকম আশঙ্কার কথাই তো বলেছিল আমেরিকা এবং ব্রিটেন। তাদের অভিযোগ, চীনের মতলব ছিল এটাই। প্রথমে করোনা জীবাণুকে ছড়িয়ে দাও। তার পর সাহায্যের নামে দেশের ভাঁড়ারে আনো কোটি কোটি ডলার।

কিন্তু প্রশ্নটা তো অন্য জায়গায়। এই জীবাণুটা যদি প্রথমে আমেরিকায় ছড়াতো এবং আমেরিকা যদি তা নিয়ন্ত্রণ করতে সামর্থ্য হতো তবে কি করতো তারা? তারা কি অন্য দেশকে বিনে পয়সায় সাহায্য করতো? আজ যদি আমেরিকায় ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়, আমেরিকা তবে সেই ভ্যাকসিন পেটেণ্ট করবে না তো? অন্য দেশকে কি তা বিনে পয়সায় দেবে তারা?

অর্থাৎ নিজের বেলা ষোল আনা, অন্যের বেলায় টালবাহানা। আমেরিকা করলে দোষ নেই, চীন করলেই সেটা দোষ। সৌদি আরব ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে চীনের সাহায্য চায়। আর চীন নিন্দের থেকে বাঁচতে সাহায্য করতে চায় দুনিয়াকে। সত্যিই আন্তর্জাতিক কূটনীতিটাও এখন নিয়ন্ত্রণ করছে একটা পুঁচকে মাইক্রোব।

লেখক: শিক্ষার্থী আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস আ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সিলেট


সর্বশেষ সংবাদ