তিনি একজন মানসম্মান ওয়ালা ভিসি!
- মো. আবু রায়হান
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:০১ PM , আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০১:০০ PM
কতটা নির্দয় ও লোভী হলে প্রিয় শিক্ষার্থীদের রক্তাক্ত করেও ভিসি পদে থাকার তীব্র বাসনা মনে জাগে? কতটা নির্লজ্জ ও বেহায়া হলে নিজের সম্মান ক্ষুণ্ণ হবার দাবি করতে পারেন? সামাজিক মর্যাদা বিনষ্ট হবার অভিযোগ করতে পারেন? যার কথা বলছি তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন মহোদয়ের কথা।
ভিসি মহোদয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে পদত্যাগ করবেন বলে একটি তদন্ত কমিটির কাছে ভিসি জানিয়েছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে ভিসি মহোদয়কে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছেন। সুষ্ঠুভাবে ভিসির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি চরমভাবে অপমানিত হয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অশোভন আচরণ তাকে অসম্মানিত করেছে। তাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা না হলে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। কী চমৎকার অমোঘ বাণী তার। কত মধুর লাগে!
ভিসি মহোদয়ের এতো আত্মসম্মানবোধ আগে জানা ছিল না। যে ভিসি ক্ষমতার পট পরিবর্তনে ডিগবাজি দিয়ে দল বদল করে ভিসি হন, তার আবার সম্মানবোধ কিসে?ভেবে পাই না। শুধু কি তাই?
তার বিরুদ্ধে রয়েছে গুরুতর নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ। ভুক্তভোগী নারী তার সন্তান কোলে নিয়ে ভিসি তার সন্তানের পিতা বলে দাবি করেছেন। সেই ভিসির এতো সম্মান? আফরিদা খাতুন ঝিলিক নামে হাসপাতালে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণীর একজন নারী কর্মচারীকে লাইব্রেরীতে নিয়োগ দিয়েছেন ভিসি। এখন তিনি লাইব্রেরিতে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। ঝিলিকের সঙ্গে ভিসির অবৈধ সম্পর্ক তথা নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তাকে লাইব্রেরিতে অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভাতিজা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নাসির উদ্দিন নিজের ভাইয়ের ছেলেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন। ভিসির ভাতিজা খোন্দকার মাহমুদ পারভেজ ২০১৬ সালে প্রথমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তার স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ফল ছিল দ্বিতীয় শ্রেণি (৫০ শতাংশ ও ৪৮ শতাংশ)। যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পরের বছর ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ পান তিনি।
এরপর এক বছর পার না হতেই কোনও গবেষণাপত্র ছাড়াই সহকারী অধ্যাপক হন ভিসি ভাতিজা। ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। একই বছর ২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির রিজেন্ট বোর্ডের ২৫তম সভায় ভাতিজা খোন্দকার মাহমুদ পারভেজকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান তিনি। বুঝলেন তো মান সম্মান ওয়ালা ভিসি তিনি! চরম দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী ভিসি তিনি।
ভিসি নাসির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাংলোয় একটি বিউটি পার্লারও খুলেছিলেন। তিনি নিজে বিউটি পার্লারের সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে গোবর বাণিজ্যেরও অভিযোগ। তিনি মূলত একজন উদ্ভিদের গবেষক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েও তিনি গাছ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এজন্য তিনি গাছ প্রেমিক উপাধি পেয়েছেন।
নিয়োগে দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, প্রকল্পে দুর্নীতি, কথায় কথায় বহিষ্কার, ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন তৈরি করার জন্য এই প্রশ্নটি ফেসবুকে লিখেছিলেন বশেমুরবিপ্রবির আইন বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। এতে ক্ষেপে যান ভিসি। তিনি ওই ছাত্রীকে শোনান কুরুচিপূর্ণ কথা। ফোনে ওই ছাত্রীকে ভিসি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী, তা তোর আব্বার কাছে শুনিস! গেছে কোনো দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে? এটা (ল ডিপার্টমেন্ট) আমি খুলছিলাম বলেই তো তোর চান্স হইছে, নইলে তুই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়াতি। বেয়াদব ছেলে-মেয়ে। তিন দিনের বাছুর তুই আবার জানতে চাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী?’একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সর্বোচ্চ অভিভাবকের কাছ থেকে এমন কদর্য ভাষা কখনো শিক্ষার্থীরা আশা করে না। নিষিদ্ধ পল্লীতেও এমন ভাষা অচল। সেখানে জাতির সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে এ ভাষা অশালীন, অরুচিকর ও অশ্রাব্য বটে।
এতো কিছুর পরেও তিনি একজন ভিসি ও একজন সম্মানিত ব্যক্তি! সম্মান গাছে ধরার জিনিস নয় কিংবা অর্থে বিত্তে নয়। সম্মান কে কাকে দেবে তা মন থেকে আসে। সম্মান পাবার মতো ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে হয়। কাউকে ছোট করে, কটাক্ষ করে কিম্বা দুর্নীতি করে সম্মানিত হওয়া যায় না। ভিসির উচিত বাদ বাকি সম্মানটুকু থাকতেই সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেওয়া। সম্মান কি একটু গল্প বলে শেষ করি।
বিশ্ববিখ্যাত কমেডিয়ানের তালিকায় এক নম্বরে আসে চার্লি চ্যাপলিনের কথা। তার পুরো জীবনটাই ছিল রহস্যঘেরা। তাঁর জন্মের একশত বছরের বেশি পেরিয়ে গেলেও কেউ জানে না, তার আসল নাম আদৌ চ্যাপলিন ছিল কি না? ইংল্যান্ডের প্রকাশ করা জাতীয় আর্কাইভ থেকে জানা যায়, তার আসল নাম হলো থর্নস্টেইন। শুনতে মনে হবে আইনস্টাইন। আইনস্টাইনের কথা যেহেতু এসেই গেল, তাই চ্যাপলিনের সঙ্গে আইনস্টাইনের প্রথম দেখা হওয়ার কাহিনীটাও আজ শোনা যাক। প্রথম দেখায় আইনস্টাইন
চ্যাপলিনকে বললেন, ‘আপনাকে আমি খুব পছন্দ করি। আপনার একজন আমি ভক্ত। কারণ আপনি যখন অভিনয় করেন, তখন কোনো সংলাপ বলেন না। তবুও পৃথিবীর সবাই বোঝে আপনি আসলে কী বোঝাতে চাচ্ছেন।
চ্যাপলিনও জবাব দিলেন, আমিও আপনাকে পছন্দ করি। কারণ আপনার দেওয়া তত্ত্ব পৃথিবীর কেউই বোঝে না, কিন্তু আপনাকে তারা সম্মান করে।
সম্মান নিজের কৃতিত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে অর্জন করতে হয়। আবার সম্মান কোনো ঠুনকো বিষয় নয় যে উড়ে যায়। আপনি কেমন প্রতিহিংসাপরায়ণ ভিসি, অপরাধ করেও অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো নিজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা হলে পদত্যাগ করবেন বলে ঘোষণা দেন। ছি:ছি শিক্ষক নামের আপনি একজন দানব ও দুর্জন বটে। কালক্ষেপণ না করে পদত্যাগ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে ফিরে যাবার সুযোগ করে দিন। জগদ্দল পাথর হয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না প্লিজ। ন্যাংটার আবার কিসের বাটপারের ভয়?