দিবস কেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে বাংলার শেকড়ে ফেরার আহ্বান তারুণ্যের

মো. রাফিউল হুদা, মো. ফাহাদ হোসেন, ইউছুব ওসমান ও এনিভা এলিজ
মো. রাফিউল হুদা, মো. ফাহাদ হোসেন, ইউছুব ওসমান ও এনিভা এলিজ  © টিডিসি ফটো

ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ভাষা সৈনিকদের, যাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বায়ান্নর রাজপথ। একুশ শেখায় কারও কাছে মাথানত না করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও আত্মমর্যাদা। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে প্রেরণা পান এই দেশের আপামর জনসাধারণ, বিশেষ করে তরুণরা। ভাষাকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ, উচ্ছ্বাস, কোনো অংশেই কম নয়। মহান ভাষার এই মাসে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাবিপ্রবি প্রতিনিধি রিয়া মোদক

সর্বস্তরে বাংলাভাষার প্রচলন ঘটাতে হবে

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু দিন দিন আমরা আমাদের মাতৃভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বাংলার সাথে মিশিয়ে ফেলছি ইংরেজি ভাষাকে। এতে করে আমাদের নিজেদের অজান্তেই আমরা আমাদের ভাষা ও ভাষার জন্য রক্ত দেয়া শহিদদের অবমাননা করে ফেলছি। মাতৃভাষাকে একটি দিবসের গণ্ডির মধ্যে না রেখে আমাদের উচিত সর্বত্র মাতৃভাষার প্রচলন করা। বিশেষ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর হলেও এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের অফিস আদালতে  মাতৃভাষার প্রচলন করতে পারিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। অথচ ১৯৫২ সালে আমাদের তরুণ-যুবকরা উর্দুর পরিবর্তে রাষ্ট্রভাষা বাংলার  দাবিতে রাজপথে রক্ত দিয়েছিলো। রাষ্ট্রীয়ভাবে সর্বত্র মাতৃভাষার প্রচলন করার মাধ্যমে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আমাদের সরকার ও দেশের জনগণকে আরও দৃঢ় ভূমিকা পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি।

মো. রাফিউল হুদা
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বাঙালি জাতিসত্তার আত্মপরিচায়ক অমর একুশ ফ্রেবুয়ারি

একুশ মানেই প্রেরণা, একুশ মানেই স্বাধীন বাংলার অস্তিত্বে মাতৃভাষার নাম। একুশ মানেই রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকতের রক্তে কেনা স্বাধীন ভাষার নাম। শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, খণ্ডিত অধিকারের বিরুদ্ধে সামগ্রিক অধিকার ও অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভ শক্তির চিরন্তন সংগ্রামের স্মারক এই দিনটি। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করা হয়। জাতীয়তাবাদের চেতনায় এই দিনটি চেতনাদীপ্ত ও গৌরব উজ্জ্বল স্মৃতি বিজড়িত একটি দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। একুশের চেতনায় সবার পথ এসে মিলেছে এক অভিন্ন গন্তব্যে। তাই এ দিনটি আমাদের মাঝে অধিকার-চেতনা নিয়ে আসে। বর্তমানে যুগে বাংলা ভাষায় শব্দের অপব্যবহার এই ভাষার গৌরবোজ্জ্বল সমৃদ্ধিকে মলিন করছে। জীবনের প্রতিটি স্তরে বাংলা ভাষার সুষ্ঠু ও সাবলীল ব্যবহারই বাংলা ভাষাকে বিশ্ব-দরবারে সমুন্নত রাখবে। বাঙালি জাতিকে এই প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর জাতি হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত হব।

মো. ফাহাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াই তরুণ প্রজন্মকেই নিতে হবে

ফেব্রুয়ারি একদিকে যেমন বাঙালি জন্য শোকের তেমনই অহংকারের আর গৌরবের। মহান ২১ ফেব্রুয়ারিতে দামাল ছেলেদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা সারা বিশ্বে মর্যাদা লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপিত হয়। বাংলা ভাষার আছে নিজস্বতা। কারণ এই ভাষা পরিপূর্ণ। তবে কতজনই বা চর্চা করছি মাতৃভাষাকে, শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করার জন্য সেটা এখন চিন্তার বিষয়। বিশুদ্ধ ভাবে উচ্চারণ করা মানে আঞ্চলিক ভাষাকে উপেক্ষা করা নয়। বরং নিজের মায়ের ভাষার চর্চা। যেখানে বিদেশি ভাষার অপ্রয়োজনীয় মিশ্রণ থাকবেনা। যে ভাষার জন্য আমাদের এতো আত্মত্যাগ, তার মর্যাদা রক্ষার লড়াই তরুণ প্রজন্মকেই নিতে হবে।

ইউছুব ওসমান
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি

ভাষা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে বাংলাভাষী মানুষ পাকিস্তানি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহিদ হন বহু ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। তাদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে এই দিনটি পালন করি। ভাষা আমাদের চিন্তা-ভাবনার বাহন, জ্ঞানের চাবিকাঠি এবং সংস্কৃতির বাহন। মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের ভিত্তি। ভাষা শহিদদের ত্যাগ আমাদের সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের মাতৃভাষা আমাদের অধিকার। ভাষা দিবস আমাদের সকলকে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়। মাতৃভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে কাজ করতে হবে। 

এনিভা এলিজ
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

রক্তাক্ত শহিদদের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা নিবেদন শুধুমাত্র ভাষা দিবসেই সীমাবদ্ধ না থাকুক। বাংলা ভাষার প্রতি এমন গভীর মমত্ববোধ ও তেজস্বী চেতনা সারাটি বছর জুড়ে প্রাণবন্ত থাকুক এমনটাই প্রত্যাশা তরুণদের।


সর্বশেষ সংবাদ