চার মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে সতর্কতা সরকারের

নর্দান ইন্টারন্যাশনাল, শাহ্ মখদুম, আইচি এবং নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ
নর্দান ইন্টারন্যাশনাল, শাহ্ মখদুম, আইচি এবং নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ  © সম্পাদিত

দেশের চারটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে নিষেধ করেছে দেশের চিকিৎসা শিক্ষার তদারক সংস্থা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএইচই)। এসব প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নির্দেশনা ভঙ্গ করায় এসব মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের পেশাগত সনদ অনুমোদন বন্ধ রেখেছে চিকিৎসা শিক্ষার দেশীয় তদারক সংস্থাগুলো। বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে—রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর উত্তরায় অবস্থিত আইচি মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডির নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এবং রাজশাহীর শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজ। দেশের এবং বাংলাদেশে চিকিৎসা শিক্ষায় পড়তে আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের এ কলেজগুলোয় ভর্তি হতে নিষেধ করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত পাঁচ বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা অনিয়ম ও নীতিমালা বহির্ভূত কাজ করে অভিযুক্ত কলেজগুলো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পেশাগত সনদ অনুমোদন বন্ধ রেখেছে বিএমডিসি। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে পেশাগত কাজে যোগদানের ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে পারেন। সেজন্য নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব শিক্ষালয়ে বিদ্যার্থীদের ভর্তি হতে সতর্কতার বিষয়টি নতুন করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির শর্ত শিথিল

এর আগে আলাদা অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি, বেজমেন্ট থেকে এনাটমি বিভাগ পরিবর্তন, রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি ও হাসপাতালের বিছানা বিষয়ভিত্তিক সাজানো এবং সকল বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আইচি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে সরকার। আর রাজশাহীর শাহ্ মখদুম মেডিকেল কলেজে ২০১৪ সাল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হলেও প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধন পায়নি। এছাড়াও অনুমোদিত আসনের দ্বিগুণ শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ফলে নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্তও।

অন্যদিকে আবাসিক ভবনে পাঠদান, নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে। ফলে এমবিবিএস পাস করলেও কোথাও প্র্যাকটিস করার সুযোগ পান না এখানকার শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বন্ধ রয়েছে আরেক বেসরকারি চিকিৎসা শিক্ষালয় রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষাক্রমও।

এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি। মেডিকেল কলেজে ভর্তিতে ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে শিক্ষার্থীদের। এতে কলেজ পরিবর্তন তথা মাইগ্রেশনের সুযোগ রাখা হয়েছে তিনবার। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের তালিকায় রাখতে পারবেন সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোকে। সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে একই নিয়ম অনুসরণ করা হবে। আর বেসরকারি মেডিকেল ভর্তিতে বিগত বছরের মতো এবারও অটোমেশন প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন: ফাঁস হওয়া প্রশ্নে দেড় হাজার ডাক্তার

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থীরা মেধার মাপকাঠিতে পাবেন সরকারি মেডিকেল কলেজসমূহে ভর্তির সুযোগ। এর বাইরে ন্যূনতম পাশ নম্বর প্রাপ্তির ভিত্তিতে দেশের প্রচলিত ৬৬টি বেসরকারি অনুমোদিত কলেজে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এসব মেডিকেলে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।

অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১০২টি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে মোট আসন সংখ্যা ১১ হাজার ৭২৮টি। এর মধ্যে সর্বশেষ ১ হাজার ৩০ আসন বেড়ে সরকারিতে ৫ হাজার ৩৮০টি এবং বেসরকারিতে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ৬ হাজার ৩৪৮টি আসন। দেশের বেসরকারি মেডিকেলের এসব আসনে দেশী শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে (দরিদ্র কোটাসহ) ৩ হাজার ৬৫৭টি এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৪৫ শতাংশ কোটা হিসেবে আসন রয়েছে ২ হাজার ৫৫১টি। 


সর্বশেষ সংবাদ