তা’মীরুল মিল্লাতে ক্রীড়া কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা ও এর লোগো
তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা ও এর লোগো  © সম্পাদিত

দেশের অন্যতম স্বনামধন্য ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গী শাখায় ক্রীড়া ও শরীরচর্চার সরঞ্জাম সংকট, খেলার মাঠ অব্যবস্থাপনা ও সমস্যা সমাধানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনীহার অভিযোগ উঠেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মাদ্রাসায় নিয়মিত বেতন-ফি নিলেও ক্রীড়া বা খেলাধুলা ও শরীর চর্চার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এ বিষয়ে তাদের গুরুত্ব কম। এদিকে, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারে অবিভাবকরাও হতাশা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, জাতীয় মানের এমন একটা প্রতিষ্ঠানের এরকম বেহাল অবস্থা বেমানান।

অন্যদিকে, পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ও শরীরচর্চা এভাবে উপেক্ষিত হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মাঝে ডিভাইস, সামাজিক মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অনলাইন গেমিংসহ বিভিন্ন নেতিবাচক অভ্যাসের প্রতি আসক্তি বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে তাদের মেধাবিকাশের জন্য হুমকির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি সমাধানে কাজ চলমান, শীঘ্রই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন: ‘পদত্যাগের ভাবনার’ মতো সংকটে কীভাবে পড়লেন অধ্যাপক ইউনূস?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও ক্রীড়া খাতে কোনো সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তা’মীরুল মিল্লাত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (টাকসু)র অন্যতম বিভাগ মিল্লাত স্পোর্টস ক্লাব মাঝেমধ্যে খেলাধুলার আয়োজন করলেও, মাদ্রাসার নিজস্ব ক্রীড়া বিভাগের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনা। এছাড়া, ১২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর এ প্রতিষ্ঠানে যথাযথ পরিমাণ ক্রিকেট ব্যাট, বল, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন কিংবা ভলিবল সেট প্রয়োজনের তুলনায় নেই বললেই চলে।

এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির দাখিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহিয়ান আল নাফিজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাদ্রাসায় তিনটি মাঠ থাকলেও দুটি একেবারে খেলার অযোগ্য। বাকিটাতেও বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অথচ নিয়মিত বেতন ও অতিরিক্ত ফি আদায় হলেও মাঠ সংস্কারের উদ্যোগ নেই, যা সত্যিই দুঃখজনক।

তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, টঙ্গীর দুই খেলার মাঠের বেহাল দশা
তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার দুই খেলার মাঠের বেহাল দশা

আলিম পরীক্ষার্থী জুবায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই মাঠ ছোট বিলের রূপ নেয়। এতে খেলাধুলা তো দূরে থাক, মাঠ দিয়ে চলাচলই কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সাবেক শিক্ষার্থী নুরুল আমিন রাব্বি বলেন, প্রতিষ্ঠানে একের পর এক বহুতল ভবন উঠেছে, কিন্তু মাঠ ও শরীরচর্চার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ একেবারে উদাসীন। খেলাধুলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও নেই বললেই চলে। যা কাম্য নয়। প্রতিষ্ঠানের উচিত যুগের চাহিদা বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের সার্বিক দিক বিবেচনায় রাখা হয়।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুর মুহাম্মদের পিতা বলেন, একটি জাতীয়মানের প্রতিষ্ঠানে ক্রীড়া কার্যক্রমের এই বেহাল অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা চাই দ্রুত মাঠ সংস্কার ও ক্রীড়া বিভাগের উন্নয়ন।

আরও পড়ুন: এনসিপি নেতাদের পদত্যাগ থেকে দৃষ্টি সরাতে ড. ইউনূসের পদত্যাগের নাটক করা হয়েছে: রাশেদ খাঁন

ক্রীড়া সরঞ্জাম ও খেলাধুলা সম্পর্কে সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার (টঙ্গী) ক্রীড়া শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, প্রতিষ্ঠানে কিছু সরঞ্জাম থাকলেও সেগুলো অপ্রতুল ও ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

মতামত জানতে চাইলে গাজীপুরের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, খেলাধুলা ও শরীরচর্চা শিক্ষার্থীর শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ সময় ধরে এসব কার্যক্রম উপেক্ষিত হতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিভাইস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার ও অনলাইন আসক্তিসহ বাড়তে পারে, যা পরবর্তী সময়ে বড় সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে। মেধা বিকাশের ক্ষেত্রে হুমকির আশঙ্কা তো রয়েছেই।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার (টঙ্গী) অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান বলেন, মাঠ ও ক্রীড়া সরঞ্জাম দ্রুত সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ বিকাশে আমরা দায়বদ্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ