মাদ্রাসার বইয়ে, শিক্ষাক্রমেও পরিবর্তন আসছে

মাদ্রাসার বিষয়গুলোর নতুন ধারার পাঠ্যক্রম আসবে ছয় মাস পর
মাদ্রাসার বিষয়গুলোর নতুন ধারার পাঠ্যক্রম আসবে ছয় মাস পর  © ফাইল ছবি

দেশের প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় সাধারণ শিক্ষা ধারায় নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। তবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বিষয়গুলোয় নতুন ধারায় গুণগত মানের পাঠ্যক্রম পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ছয় মাস। বর্তমানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রচলিত বিষয় এবং শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে শিখতে পারলেও প্রচলিত পুরোনো সিলেবাসেই পড়তে হচ্ছে বিদ্যার্থীদের।

যদিও এ বিষয়ে আশার কথা জানিয়েছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রমে পরিবর্তিত হবে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইগুলো। বর্তমানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা প্রথম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতোই পড়ার সুযোগ পাচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রচলিত বিষয়গুলোয়। এর বাইরে মাদ্রাসায় যেসব বিষয়গুলো পড়ানো হয়—তা শিখছে আলাদা করে।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, এসব বিষয়ের এখনও রুপান্তর হয়নি নতুন শিক্ষাক্রমে। ফলে শিক্ষার্থীরা সাধারণ বিষয়ে নতুন শিক্ষাক্রম এবং মাদ্রাসা বিষয়ে পড়ছেন পুরোনো পাঠ্যক্রমেই। এর আগে দেশের প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোয় আমূল পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে চলতি বছর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করে সরকার।

পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মাদ্রাসার বিষয়গুলোর নতুন পাঠ্যক্রম আনা হবে। তবে এতে যেন কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে—তা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে দেশের পাঠ্যক্রম তদারক সংস্থাটি।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুরুতে নানা আলোচনা-সমালোচনার পর এতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের কথাও জানানো হয়েছে দেশীয় শিক্ষার তদারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রচলিত পরীক্ষা ধারা, মূল্যায়ন, পাঠ্যসূচি ও বিভাগ বিভাজনের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার আগ পর্যন্ত সুযোগ রাখা হয়েছে একই পাঠ্যসূচিতে পাঠদান করার।

বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা প্রচলিত ধারার সাধারণ বিষয়গুলোর পাশাপাশি অতিরিক্ত হিসেবে শিখছে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ, আরবি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, হাদিস শরিফ, আকাইদ ও ফিকহ, উর্দু, ফারসি, ইসলামের ইতিহাস, তাজভিদ নসর ও নজমের (মুজাব্বিদ গ্রুপ ও হিফজুল কুরআন) মতো বিষয়গুলো। যেহেতু মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এ বিষয়গুলোর এখনও রুপান্তর হয়নি, তাই পুরোনো কাঠামোতেই ভরসা তাদের।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত রাখা হয়েছে মোট ১০টি বিষয়। এর মধ্যে রয়েছে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর বাইরে মাদ্রাসার বিষয়গুলোও শিখবে শিক্ষায়তনটির শিক্ষার্থীরা।

May be an image of 6 people and text

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, আপাতত যেসব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছে। শুরুমাত্র মাদ্রাসায় পড়ানো হয় এমন বিষয়গুলোর রুপান্তর শুরু হবে আরও ছয় মাস পর। এরপর পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মাদ্রাসার বিষয়গুলোর নতুন পাঠ্যক্রম আনা হবে। তবে এতে যেন কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আসে—তা নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা জানিয়েছে দেশের পাঠ্যক্রম তদারক সংস্থাটি।

এবার দেশের নতুন শিক্ষাক্রম সবার জন্য সমান করতে গিয়ে কমানো হয়েছে বিজ্ঞান ও গণিতের মতো প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতিসহ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নতুন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। আর বিষয়টি নিয়ে এখনও দ্বিধায় রয়েছেন শিক্ষাবিদ ও দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন শিক্ষাক্রমের বৈশ্বিক গুণ-মান অর্জন

যদিও নতুন এ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্তরা বলছেন, এটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাক্রম হয়েছে। তবে তারাও স্বীকার করছেন, নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও মাদ্রাসার নতুন কারিকুলাম নিয়ে কোনো বিতর্ক চায় না এনসিটিবি।

অনেকটা ধর্মীয় আবহে পরিচালিত হলেও বর্তমানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো অন্যান্য বিষয়গুলোও পড়ার সুযোগ পান। নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসলে কিছুটা পরিবর্তন আসবে বর্তমান ধারায়। উদাহরণস্বরূপ এনসিটিবি বলছে, বাংলা বিষয়টি পূর্বের তিনটি বিষয়ের সমন্বয়ে একটি পাঠ করা হয়েছে। আগে বাংলা ব্যাকরণ, প্রথম পাঠ এবং গদ্য বা সাহিত্য পাঠ থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে একটি বইয়েই বাংলা বিষয়টি আনা হয়েছে। 

আরবি প্রথম পত্র এবং দ্বিতীয় পত্রকে একীভূত করে একটি বিষয় করার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। তবে মাদ্রাসার বিষয়গুলোয় পরিবর্তন আনার আগে দেশের বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর লালিত বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আবহের বিষয়টিতে যাতে কোনো আঘাত না লাগে—সেজন্য মতামত গ্রহণ করা হবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের।

একইভাবে আরবি প্রথম পত্র এবং দ্বিতীয় পত্রকে একীভূত করে একটি বিষয় করার পরিকল্পনা করছে এনসিটিবি। তবে মাদ্রাসার বিষয়গুলোয় পরিবর্তন আনার আগে দেশের বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর লালিত বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আবহের বিষয়টিতে যাতে কোনো আঘাত না লাগে—সেজন্য মতামত গ্রহণ করা হবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের।

দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের সর্বশেষ এ শিক্ষাক্রমটি আন্তর্জাতিক মানের হলেও শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতা, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সম্পৃক্ত করাসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। শিক্ষক সংকটসহ নানা সংকটের কথা স্বীকার করছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও।

May be an image of 9 people and people studying

আর নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত শিক্ষায় আমূল পরিবর্তনের মূল কারিগর শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পঠন-পাঠন সম্পন্ন করতে পারেন, সেজন্য শুরুতেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এতে শিক্ষাক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রমের তদারকি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আর মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজটি করছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর।

আরো পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি

মাদ্রাসায় নতুন কারিকুলাম চালুর বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বোর্ডটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সিদ্দিকুর রহমানের সাথে। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন সিলেবাসের কাজটি করছে এনসিটিবি। তারা এটি সম্পন্ন করলে আমরা পরবর্তীতে আমাদের করনীয়গুলো নির্ধারণ করবো এবং নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো।

আর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জমান বলছেন, আপাতত নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের বিষয়গুলোর রুপান্ত করা হবে। এটি শুরু করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!