বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ, আলোচিত সেই মামলার চূড়ান্ত রায় এলো ৬ বছর পর

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

রাজধানীর কামরাঙ্গীচরে ৭ বছরের এক শিশুকে বিস্কুটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণের অপরাধে আসামি মো. নাজিম মিয়াকে যাবজ্জীবন (আমৃত্যু)  ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। 

আজ রবিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। প্রসিকিউশন পক্ষের আইনজীবী বিজ্ঞ পাবলিক প্রসিকিউটর মো. এরশাল আলম জর্জ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। 

আদালতে প্রসিকিউশন পক্ষের আইনজীবী আসামির অপরাধ প্রমাণের জন্য ১৪ জন স্বাক্ষীকে পরীক্ষা করেন। এসময় আসামি মো. নাজিম মিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তার পক্ষে সাফাই স্বাক্ষী দিবেন না এবং কাগজপত্র দাখিল করবেন না বলে জানান।

এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট  মনিরা বেগম (মনি) স্বাক্ষীদের জেরা করেন। সেসময় তিনি আসামি ধর্ষককে নির্দোষ দাবি করেন। আদালতকে তিনি, বলেন এজাহারকারীর কাছে আসামি টাকা পায়। টাকা না দেওয়ার জন্য শিশুকে দিয়ে মামলা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামি মো. নাজিম মিয়াকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক বছর কারাদণ্ড দেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, এজাহারকারী হীরেন্দ্র দাস ৭ বছরের কন্যা ভিকটিমে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখ বিকেলে কামরাঙ্গীরচুর থানাধীন মধ্য ইসলামনগরের বিল্লাহর টিনসেড বাড়ির ২য় তলায় আসামি মো. নাজিম মিয়ার ভাড়া বাসায় বিস্কুট  দেয়ার কথা বলে নিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন। 

ঘটনার সময় এজাহারকারী ও তার স্ত্রী বাসায় ছিলেন না। তার স্ত্রী বাসায় ফিরে আসলে ভিকটিমের চিৎকারে তার স্ত্রী ও আশপাশের লোকজন আসলে আসামি মো. নাজিম মিয়া পালিয়ে যায়। ভিকটিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এজাহারকারীর স্ত্রী ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করে চিকিৎসা করান। এজাহারকারী  কামরাঙ্গীরচর থানায় হাজির হয়ে এজাহার দাখিল করেন।

তদন্ত থেকে জানা যায়, এজাহারকারীর এজাহারের প্রেক্ষিতে কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়মিত মামলা এন্ট্রি করেন এবং এস আই মো. ইব্রাহিম হোসেন নয়নের ওপর তদন্তভার অর্পণ করেন। এস আই মো. ইব্রাহিম হোসেন নয়ন তদন্তভার গ্রহণ করে মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র অংকন করেন। পরে তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আসামি মো. নাজিম মিয়াকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করেন। আসামি স্বেচ্ছায় ধারায় দোষ স্বীকার মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। 

তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নিয়ে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করেন। ভিকটিম  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৫ এর ২২ খরায় জবানবন্দি প্রদান করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মো. ইব্রাহিম হোসেন নয়নের বদলির আদেশ হলে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জের কাছে মামলা বুঝিয়ে দেন। 

পরে এ মামলার তদন্ত করেন (অফিসার ইনচার্জ)  এস আই মো. তোফাজ্জেল হোসেন। তিনি তদন্তভার গ্রহণ করে মামলার ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং পর্যালোচনা করেন। তিনি  ৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। তিনি ভিকটিমের আইনানুগ মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। তার তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিনি সালের ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

মামলাটি বিচারের জন্য এই ট্রাইব্যুনালে বদলী হয়ে আসলে আসামি মো. নাজিম মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (১) ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া হয়। অভিযোগ গঠন করার পর্যাপ্ত উপাদান থাকায় আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গঠিত অভিযোগ আসামিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ