ক্যামেরুনে মেডিকেল ছেড়ে বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছি

ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন  © টিডিসি ফটো

ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্যামেরুনে মেডিকেলের পড়াশোনা বাদ দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বর্তমানে ওআইসির সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে (আইইউটি) পড়াশোনা করছেন। তবে একজন মুসলিম নারী হিসেবে তার এই পথচলা মোটেও সহজ ছিলো না। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্যামেরুন থেকে বাংলাদেশে আসার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তিনি। তার কথাগুলো শুনেছেন আইইউটি প্রতিনিধি তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি কেমন আছেন? আইইউটিতে আপনাকে স্বাগতম
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার পরিচয়, শৈশব সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: বাংলাদেশে আমার বন্ধুদের কাছে ফাতিমা জাহরা নামেই পরিচিত। আমার বাবা-মা নাইজেরিয়া থেকে এসেছিলেন ক্যামেরুনে; কিন্তু আমি জন্মসূত্রে একজন ক্যামেরুনিয়ান। আমি ক্যামেরুনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নকোটেং-এর (যে গ্রামে আমার জন্ম হয়েছিল) একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি।

পরে আমি ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউন্ডেতে চলে আসি। যেখানে একটি মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা শেষ করেছি। ২০১৯ সালে ৫টি পেপার এবং ১৬ (ক্যামেরুনে গ্রেডিং-২০ পয়েন্টের মধ্যে হিসেব করা হয়) পয়েন্ট নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হই। সেখানে বাকি পড়াশোনা শেষ করেছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশে এলেন কীভাবে?
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: আমার স্বপ্ন ছিল একজন প্রকৌশলী হব। কিন্তু আমি একজন মেয়ে এবং মুসলিম হওয়ার কারণে আমার বাবা-মা আমার সেই ইচ্ছে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে আমাকে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাবেন। জুন মাসে আমি রাশিয়ায় একটি বৃত্তির জন্য আবেদন করেছিলাম এবং নির্বাচিতও হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমার মা বর্ণবাদের শিকার হয়ে এবং ধর্মের কারণে সেটি থেকে আমি বঞ্চিত হই।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের যে বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় লাল স্বর্গ

তারপরে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় ক্যামেরুনের একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে যাই। যেখানে আমি দেড় বছর ধরে চিকিৎসা পরীক্ষাগার বিজ্ঞানে পড়ালেখা করেছি। সেখানে পড়া অবস্থায় আমি বাংলাদেশে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজির কথা জানতে পারি। যেটা ওআইসির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এটি শোনার পরে আমি এ সুযোগটি হারাতে চাইনি।

ক্যামেরুনে আমি মেডিকেলের পড়াশোনা নিয়ে খুশি ছিলাম না। আমার এ অবস্থার মধ্যে ওআইসির এ বৃত্তিটিতে আবেদন করি। পরে সফলও হই। একইসঙ্গে বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হওয়ায় আমার বাবা-মাও এখানে পড়তে দিতে রাজি হন। এরপর ক্যামেরুনে মেডিকেলের পড়াশোনা রেখে বাংলাদেশে প্রকৌশলী হতে চলে আসি।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলোজিতে ২০২০-২১ সেশনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে হই। তবে এখানে ভর্তি হতে আমাকে কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি। আমাকে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে ধর্মের ভিত্তিতে নির্বাচিত করা হয়েছিলো।

আরও পড়ুন: আইইউটির আসন ৭৬২টি, পরীক্ষার্থী ৭ হাজার

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ক্যামেরুন থেকে বাংলাদেশে পড়তে এসেছেন। এ দেশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: আসলে আমি যখন প্রথমবার বাংলাদেশ এবং আইইউটি সম্পর্কে শুনেছিলাম তখন অনলাইনে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। অনলাইন অনুসন্ধানে পাওয়া ফলাফলে আমাকে বাংলাদেশ সম্পর্কে একতরফা নেতিবাচক তথ্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে আমি সেরকম তেমন কিছুই দেখিনি। অনলাইনের নেতিবাচকতায় আমি আমার স্বপ্ন পূরণে পিছপা হইনি।

আইইউটিতে ভর্তি হওয়ার পর আমার সহপাঠীদের সাথে পরিচিত হলাম। তখন খেয়াল করলাম তারা অনেক সুন্দর ব্যবহারের অধিকারী। তারা ভিনদেশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে খুবই হেল্পুল। আমি তাদের পেয়ে খুশি।

ভর্তি হওয়ার পর করোনা পরিস্থিতি থাকায় শুরুতে আমাদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়। যে কারণে শুরুতে আমার বন্ধুদের সঙ্গে আমার সরাসরি দেখা করার সুযোগ হয়নি। এ সময়টাতে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহ শুরু হয় আমার।

যখন বন্ধুদের সাথে আমার প্রথম দেখা হলো সে এক অন্যরকম অনুভূতি। তাদের সামনে পেয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার সব নেতিবাচক ধারণা পাল্টে যায়। তারা অনেক বেশি হেল্পুল এবং বন্ধুসুলভ। তবে আমার দেখায় বাংলাদেশে দূষণের পরিমাণটা একটু বেশিই। তবে সে তুলনায় আইইউটির পরিবেশ অসম্ভব সুন্দর।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশে কোন বিষয়টি আপনার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: এখানকার মানুষের কঠোর পরিশ্রম আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। এ পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হচ্ছে। এছাড়াও আমি এখানকার মানুষের একতা এবং কীভাবে তারা একে অপরকে ভালোবাসে, সহযোগিতা করে এবং তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান করে সেটিও আমার অনেক পছন্দ।

এ দেশের মানুষজন খুব অতিথিপরায়ণ। আমি যখনই আইইউটির বাইরে যাই, একটা বিষয় আমি খেয়াল করেছি এদেশের মানুষ সবসময় খুশি হয় যখন তারা বিদেশি কোনো লোককে দেখে। আমি এ বিষয়টি খুব বেশি উপভোগ করি। তারা আমাদের সাথে কথা বলতে চায়।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের কোন বিষয়গুলো আপনার অপছন্দ?
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার অপছন্দের তেমন কিছুই নেই। কারণ এটি আমাকে বাড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। অর্থাৎ আমার দেশের মতোই। এদেশে আসার পর এদেশ নিয়ে আমার যত খারাপ ধারণা ছিলো তা বদলে গেছে। তবে এটি একটি বড় জনসংখ্যার দেশ। এদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট ও দূষণ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এ দেশের একজন উদ্যোক্তা হওয়া। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নও রয়েছে আমার। আমার দেশের মুসলিম নারীদের আমি দেখাতে চাই, তারা যেন হাল ছেড়ে না দেয়। তাদের বলতে চাই, হাল ছেড়ে না দিলে তারা যা চায় তাই হতে পারবে। আমি আমাদের দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে কাজ করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সময়ের অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফাতিমাতু জাহারাদ্দীন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্য শুভকামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence