আমাদের শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ডাক্তার হয়ে উঠছেন: ডা. মো. মাজহারুল শাহীন

ডা. মো. মাজহারুল শাহীন
ডা. মো. মাজহারুল শাহীন  © সংগৃহীত

দেশের প্রাচীনতম স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ঐতিহাসিক ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরির্বতনের পর প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মাজহারুল শাহীন। দায়িত্বগ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানের জন্য, শিক্ষার্থীদের জন্য নানা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। তিনি এক বিশেষ সাক্ষাতকারে বলেন, শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ডাক্তার হওয়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। পুথিগত এবং থিউরিটিকাল স্কিলে এই মেডিকেল শিক্ষার্থীরা বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতা করছেন। সম্প্রতি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাতকার নিয়েছেন আশরাফ আন নূর

ডা. মো. মাজহারুল শাহীন বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজটি বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রিমিয়াম মেডিকেল কলেজ হিসাবে বিবেচিত। ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরই তার অবস্থান। এখানকার শিক্ষার্থীরা ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও সুইডেনসহ নানা দেশে প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর বিদেশ যাচ্ছেন, যা শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলছে। শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল ডাক্তার হওয়ার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। পুথিগত এবং থিউরিটিকাল স্কিলে এই মেডিকেল শিক্ষার্থীরা বিশ্বমঞ্চে প্রতিযোগিতা করছে।

শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ ডা. মাজহারুল শাহীন বলেন, এখানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মূলত মেধাবী। কোটাধারীদের বাদ দিলে প্রায় সবাই এক্সট্রা অর্ডিনারি। কিছু মৌলিক বিষয় বাদে, আমাদের কলেজে প্রায় সব বিষয়েরই দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন। ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় এখানকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পান।

তিনি আরও বলেন, এখানে ছাত্রীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, যা মোট শিক্ষার্থীর ৬০% এরও বেশি। প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ছাত্রী এবং এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র। ফলে ছাত্রী হোস্টেলের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এ সমস্যা সমাধানে পঞ্চম বর্ষের কিছু ছাত্রীকে ইন্টার্নশিপ হোস্টেলে স্থানান্তর করা হয়। এখানে এমবিবিএস কোর্সের পাশাপাশি ১৫ থেকে ২০টি বিষয়ে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন কোর্স চালু রয়েছে, যার মধ্যে ডিপ্লোমা, এমফিল ও এমডি কোর্স অন্তর্ভুক্ত। এসব কোর্স পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক দক্ষ শিক্ষক রয়েছেন। তবে, ফরেনসিক মেডিসিন ছাড়া সব বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষকতা সুবিধা বিদ্যমান।

তিনি উল্লেখ করেন, এখানে এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হয়। সম্প্রতি, এখানে এক সপ্তাহব্যাপী কালচারাল উইক অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক মনোভাব ও প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ দেয়। এছাড়া, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। 

গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, এখানে মেডিকেল কেন্দ্রিক রিসার্চের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে, শিক্ষকরা নিজেদের যোগ্যতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রিসার্চ ফান্ড নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি), বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস), স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তর।   

এছাড়া, এই মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের ছোট পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম চলমান আছে । ছাত্রদের জন্য পোস্ট গ্র্যাজুয়েট থিসিস একটি বাধ্যতামূলক কাজ, যা জমা দেওয়া ছাড়া তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে না। শিক্ষকরাও বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন। তারা নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিএমআরসি, বিসিপিএস এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ফান্ড সংগ্রহ করে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। 

তিনি উল্লেখ করেন, নিয়মিতভাবে জার্নাল প্রকাশিত হয় যা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বের করা হয়। মেডিকেলের জার্নালের নাম হলো- The Journal of Sir Salimullah Medical Teachers Association.  জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের জন্য আপডেট ভার্সনটি এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে, আশা করছি আগামী ১ অথবা ২ মাসের মধ্যে সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশিত হবে।

এখানে যে কাজগুলো করা হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি গবেষকদের সাথে কানেক্টিভিটি তৈরি করা হয়। তবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এসব কার্যক্রমে অর্থায়ন করা হয় না।বিভিন্ন বিভাগে যে-সব সেমিনার এবং সেম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়, সেগুলোতে বিদেশি স্পিকার আনা হয়। প্রাকটিকাল ক্লাসের জন্য অনেক রোগী রয়েছে। আমরা নিশ্চিত করি যে, কারিকুলামের রিকুইজিট পূর্ণ না হলে কাউকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেইনা।

শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ডা. মো. মাজহারুল শাহীন বলেন, হোস্টেল ব্যবস্থাপনায় কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা সিট পেতে কিছুটা দেরি হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি হোস্টেল রয়েছে—একটি ছাত্রদের জন্য এবং একটি ছাত্রীদের জন্য। এছাড়া, ইন্টার্নি ডাক্তারদের জন্য একটি পৃথক ইন্টার্নি হোস্টেলও আছে।

তিনি আরও বলেন, ল্যাব সংক্রান্ত কিছু সমস্যা সর্বত্রই থাকে। আমাদের এখানেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার স্বল্পতা। একটি নতুন আটতলা ভবন নির্মাণাধীন, যদিও এর আসবাবপত্র এখনো এসে পৌঁছায়নি। আসবাবপত্র আসার পর, আমরা কয়েকটি বিভাগ সেখানে স্থানান্তর করবো। এটি সম্পন্ন হলে, মিটফোর্ডে জায়গার সংকট আর থাকবে না—তিনি যোগ করেন। 

তিনি বলেন, এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ডেন্টাল ইউনিট, যা অপরিকল্পিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে চেয়ার-টেবিল ও যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে, পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষারও কিছু ঘাটতি আছে। কিছু মেশিন স্থানীয়ভাবে মেরামতের চেষ্টা চলছে। তবে এ সমস্যা শুধু এই মেডিকেলের ডেন্টাল ইউনিটেই নয়, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ছাড়া সারা দেশের সব ডেন্টাল ইউনিটেই একই চিত্র।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence