‘শিক্ষায় আমরা সেভাবে পরিবর্তন আনিনি, আনার চিন্তাও করিনি’—এটা দুঃখজনক

অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান
অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান  © টিডিসি ফটো

দীর্ঘ ৪৮ বছরের কর্মজীবনে পুরো সময়টাই তিনি কাটিয়েছেন শিক্ষকতায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পড়াশোনার পর সেখানেই শুরু হয় তার শিক্ষকতা। কর্ম অধ্যায়ের দীর্ঘ ৩৮ বছরই কাটিয়েছেন বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। এছাড়াও তিনি শিক্ষকতা করেছেন উত্তর আমেরিকা, মালেশিয়া এবং সৌদি আরবে। এর মধ্যে ১৯৮৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন আমেরিকার ক্লার্কস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান। টানা দু’মেয়াদে দেশের অন্যতম বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে তিনি দায়িত্ব শেষ করেন গত ১০ অক্টোবর।

অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান শিক্ষকতার পাশাপাশি সমাদৃত একজন গবেষক হিসেবেও। দেশ ও বিদেশে স্বীকৃত গবেষণা গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে তার ৫০টিরও বেশি গবেষণা নিবন্ধ। একইসাথে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে চারবার তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ সেরা প্রবন্ধের পুরস্কার পেয়েছে। তিনি ২০০৮ সালে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন বাংলাদেশ একাডেমি অব সাইন্সেস থেকে। এছাড়া অ্যাকাডেমিক ও গবেষণা কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশে বিদেশে খ্যাতিমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। শিক্ষকতার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষালয় পরিচালনা, দীর্ঘ কর্মজীবনের প্রত্যাশা-প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তিসহ দেশের উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান খোলাখুলি আলোচনা করেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। বিশেষ এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের নিজস্ব প্রতিবেদক খাঁন মুহাম্মদ মামুন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি দু’মেয়াদে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পূর্ণ করেছেন। কর্মজীবনের শুরু থেকেই আপনি শিক্ষকতার সাথে জড়িত; দীর্ঘ একটি শিক্ষকতার ক্যারিয়ার। পুরো জার্নিটা আসলে কেমন ছিল?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: আমি শিক্ষকতা শুরু করি বুয়েটে। তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের নাম ছিল ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইই); এরপর আমার শিক্ষকতার সময়ে এসে এ নামটি পরিবর্তন করে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) হয়। আমার এই দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, আমি যেভাবে পড়েছি বা আমাদের শিক্ষকরা যেভাবে পড়িয়েছেন, এর বাইরে আমরা শিক্ষায় সেরকম পরিবর্তন আনিনি বা পরিবর্তন আনার চিন্তাও করিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী সামাজিক-মানসিক সেবা কেন্দ্র উদ্বোধনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান

পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে কী কী পরিবর্তন হয়েছে বা হচ্ছে; তা আমরা কখনো জানার প্রয়োজন মনে করিনি। শিক্ষকদের এই জায়গাটি খুব একটা ভালো না। এর নানা কারণ হতে পারে। আমাদের উচিত জ্ঞান অর্জনের সাথে তা বিতরণের পদ্ধতিতে আলোকপাত করা; সময়ের সাথেই পরিবর্তনে অংশগ্রহণ করা।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকালে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: আমাদের প্রশাসনগুলোতে আমলাতান্ত্রিক এবং একঘেয়েমি ভাব আছে। আমি জানি, পরিবর্তন কোনো বায়বীয় জিনিস নয়—বললেই হয়ে যাবে এরকম নয়। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কী-পার্সন; যারা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন, তাদের কাজ করা উচিত। পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া উচিত সরকারের। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা ভিসি, প্রো-ভিসি বিশেষ করে বোর্ড অফ ট্রাস্টিজসহ যারা রয়েছেন তাদের এগুলো জানার দরকার রয়েছে। জাতির প্রয়োজনে সরকারের এগুলো দেখা উচিত। 

বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুটি ধারা আছে। একটি রিসার্চভিত্তিক, অন্যটি টিচিং ইউনিভার্সিটি। রিসার্চভিত্তিক ইউনিভার্সিটিতে একজন শিক্ষককে একটা কোর্সই দেয়া হয়। তার কাজ গবেষণা করা, ফান্ড আনা। যেগুলো টিচিং ইউনিভার্সিটি সেখানে শিক্ষকরা তিনটা করে কোর্স নেয়। তারা টিচিং এর উপর জোর দেয়। তবে তার মানে এই না যে সেখানে গবেষণা হয় না। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দায়িত্ব গ্রহণের পর আপনি কী ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দায়িত্ব নেবার এক মাসের মধ্যে আমি একটি কমিটি গড়ে তুলি, যার নাম ছিল ‘ভিশন কমিটি’। আমার উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা বেশ পণ্ডিত মানুষ, বেশ ডায়নামিক, যাদের বয়সটা একটু কম; এরকম কিছু শিক্ষককে বাছাই করে দুই মাস পরপর তাদের নিয়ে বসে চিন্তা করবো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা এবং কি করলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়ন করা সম্ভব হবে তা বের করা। তার যে উদ্দেশ্য ও প্রত্যাশা ছিল তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এটি আমার ব্যর্থতা। এছাড়াও কমিটির সদস্যদের কারও কারও অনীহা এবং একাজে সময় দেবার ইচ্ছে ছিল না। ফলে এটি করা যায়নি।

আমি মনে করি, এরকম একটা বিষয় সরকারের মধ্যেও থাকা উচিত; আর তা হলো সরকার বায়াসড না হয়ে একটি গবেষণা করতে পারে যেখানে কারা বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছে, কারা অর্থনীতি নিয়ে চিন্তা করছে, কারা কম্পিউটার সায়েন্স এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার জানে। এতে দেশের উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণাখাতে প্রয়োজনীয় এবং মৌলিক গুণগত পরিবর্তন আসবে।

এছাড়াও আমি আমার একটি লেখায় ‘হিউম্যান ক্যাপিটাল এডুকেশন’ নিয়ে প্রস্তাব দিয়েছি। বিরাট অঙ্ক মুখে মুখে বলে দেয়ার মত পণ্ডিত লোক আমাদের দরকার নেই। এর চেয়ে বেশি জরুরি- তার স্কিল থাকতে হবে, সে সমাজের যেখানেই সার্ভিস দিক সে যেন নিজে কর্মক্ষেত্র বের করতে পারে। কারণ, সবসময় যে সরকার চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে এমন দিন আর নেই। তাই আমার মনে হয় সরকার বা আমাদের দায়িত্ব হলো হিউম্যান ক্যাপিটাল এডুকেশন তৈরি করা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু’ কর্নার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপাচার্য এবং অন্যান্য অতিথিরা

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তরুণরা প্রযুক্তি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করছে; কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: এখানে প্রথম কাজ হলো এ সংক্রান্ত বিস্তারিত এবং পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তৈরি করা। টেকনোলজি কীভাবে ব্যবহৃত হবে তার গাইডলাইনস। এটি খুব দরকার। আর পরিবর্তনের বিষয়গুলো একমাত্র ভিশনারি মানুষই করতে পারে। সরকারের দায়িত্ব এ ধরনের মানুষ খুঁজে বের করা। এরা পলিসি মেকার হতে পারে, ইকোনোমিস্ট হতে পারে, এডুকেটর হতে পারে আবার ইন্ডাস্ট্রিয়ালও মানুষ  হতে পারে। এক্ষেত্রে তরুণদের বেশি আনতে হবে।

আপনি যদি আইটি দেখেন সব কিন্তু তরুণরাই করছে; আউটসোর্সিং থেকে শুরু করে ডেলিভারি সার্ভিস—সবই। তারা শুধু অর্থের অভাবে আরও ভালো কিছু করতে পারছে না। তাদের সাহায্যের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি বিপ্লব আনা সম্ভব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিশ্বের যেসব দেশ এগিয়ে গিয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করা উচিত। 

আমি অবদান রাখতে চাই শিক্ষকতায়, পলিসি মেকিংয়ে, শিক্ষা ব্যবস্থায়। শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। এটা কখনোই একা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে করতে হবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একজন উপাচার্যকে একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো দেখতে হয় এবং এর পাশাপাশি প্রশাসনও দেখতে হয়। এক্ষেত্রে কি আপনি কোনো বাধা দেখছেন কিনা এবং এটি পরিবর্তনের দরকার আছে কিনা?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: বাংলাদেশের বর্তমান ব্যবস্থা কিছুটা ভিন্ন। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন স্বাধীনতা আন্দোলন হয়। আমরা সবাই মোটমুটি এর সাথে জড়িত ছিলাম। ফলে আমাদের জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। আবার আমরা যখন শিক্ষক ছিলাম তখন জীবনটা ক্লাসের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। যখন আন্দোলন হতো তখন আন্দোলন থামানোর সাথেই যুক্ত ছিলাম। সময়ের সাথে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয় তা আবার বাইরের দেশের শিক্ষকদের হয় না। আমাদের অনেক তথ্য, ঘটনার অভিজ্ঞতা থাকায় তার সমন্বয়ে আমরা উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করতে পারি। 

বাইরের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দুটি ধারা আছে। একটি রিসার্চভিত্তিক, অন্যটি টিচিং ইউনিভার্সিটি। রিসার্চভিত্তিক ইউনিভার্সিটিতে একজন শিক্ষককে একটা কোর্সই দেয়া হয়। তার কাজ গবেষণা করা, ফান্ড আনা। যেগুলো টিচিং ইউনিভার্সিটি সেখানে শিক্ষকরা তিনটা করে কোর্স নেয়। তারা টিচিং এর উপর জোর দেয়। তবে তার মানে এই না যে সেখানে গবেষণা হয় না। আমাদের প্রচলিত ব্যবস্থায় শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য হবেন এটি ভালো এবং আমি এর সাথে একমত। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, উপাচার্যের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকার পাশাপাশি প্রশাসনিক দক্ষতার কথাও বলা হয়েছে।

আমাদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী, উপাচার্যকে টিচিংয়ে থাকতে হবে; একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রশাসনের সাথে কথাও বলা আছে। আমাদের দেশে গবেষণার নির্দিষ্ট ধারা নেই। গবেষণা শিক্ষক তার নিজের জন্য করে। যে গবেষণা করতে চায় তাকে গবেষণা করতে দেয়া, যে শিক্ষকতা করতে চায় তাকে শিক্ষকতা করতে দেয়া এ ধরনের ধারা বাংলাদেশে নেই। তাই কেউ নিজ জায়গা থেকে কন্ট্রিবিউট করতে পারছে না। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতকালীন সেমিস্টারের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে উপাচার্য ও অতিথিরা

আমাদের এখানে যিনি প্রো-ভিসি তিনি অ্যাকাডেমিক দায়িত্বে থাকেন এবং ভিসি প্রশাসন এবং অ্যাকাডেমিক দিক দুইটাই দেখেন। বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কর্পোরেট জায়গা নয়, এর দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় শিক্ষক। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সচল রাখার জন্য প্রয়োজন। তারা ল্যাব সুবিধা বা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান দিয়ে থাকে। আমি মনে করি ভিসি হিসেবে শিক্ষকদের থাকা উচিত কারণ তারাই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কি প্রয়োজন তা বুঝবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এক্ষেত্রে একটা বিষয় উচিত না সেটা হলো, অনেক ভিসি নানা অপ্রয়োজনীয় কাজ করে সময় নষ্ট করে। তার উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করা। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার এবং আপাত দায়িত্বের সমাপ্তি বিবেচনায় প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মূল্যায়ন কী হবে? 

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: আমার বাবা পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বুয়েটে প্রথম বর্ষ থেকে দ্বিতীয় বর্ষে উঠবো। তারপর বুয়েট থেকে পাস করলাম। আমার বাবা যেহেতু শিক্ষক ছিলেন আমার মা ভাবত, আমরা সবাই মানুষ হব। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর আমার মা অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে আমাদের মানুষ করেছেন। এমনও হয়েছে আমার মা টিসিবির লাইন থেকে শাড়ি কিনেছেন। বুয়েটে শিক্ষক হিসেবে জয়েন করার পর পিএইচডির জন্য বাইরে গেলাম।

দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি যে, আমি যেভাবে পড়েছি বা আমাদের শিক্ষকরা যেভাবে পড়িয়েছেন, এর বাইরে আমরা শিক্ষায় সেরকম পরিবর্তন আনিনি। পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে কি কি পরিবর্তন হয়েছে আমরা কখনো তা জানার প্রয়োজন মনে করিনি। শিক্ষকদের এই জায়গাটি খুব ভালো কাজ নয়।

আমার একটু দুঃখবোধ আছে যে আমরা যেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম—তা হলো না। আরেকটা দুঃখ হলো, আমি যেভাবে ছাত্রদের গড়তে চেয়েছিলাম সেভাবে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। করোনার সময় আমি কবিতা লেখা শুরু করি। আমি ভাবলাম সমাজ, জীবন, মৃত্যু এসব দার্শনিক বিষয় নিয়ে লিখি। আমার ইচ্ছা আমি যদি বুয়েটে আবার ফিরে যেতে পারি। আমি তো রিটায়ার করেছি; হয়ত প্রফেসর হিসেবে ফিরতে পারবো না, কিন্তু অপশন আছে। এটা নির্ভর করে বুয়েটের উপাচার্য কি করে, পলিসি মেকাররা কি করে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনি কোনো সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছেন কি-না?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: সীমাবদ্ধতা আসলে তেমন ছিল না। যেহেতু আমি ভিসি, আর সব সিস্টেমেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকেই। সেগুলো বাদ দিয়ে আমি এখানকার কিছু ইতিবাচক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। যেমন এখানের সার্ভিস রুলটা ওয়েল ডিফাইন; যার জন্য কোনো অসৎ বা অযোগ্য লোকরা চাইলেই এখানে ঢুকতে পারবে না। এখানকার আইটি সিস্টেম বেশ ভালো, বেশ কিছু সফটওয়্যার রয়েছে। একাডেমিশিয়ানদের মধ্যে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ৭৫ শতাংশই অসাধারণ।

আরেকটি বিষয়, আমি দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই একটি মুক্তিযুদ্ধ কর্নার করি, শহিদ মিনার তৈরি করি যা সাধারণ শহিদ মিনারের মতো না। আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধায় চারটি গ্যালারি তৈরি করেছি, যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ক্লাস করতে পারে। এগুলো আমার দায়িত্ব পালনকালে হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা অনেক ভালো সহায়তা করেছেন।

সীমাবদ্ধতার বিষয়টি হলো, আমাদের মাইন্ডসেটটা এমন—আমরা পরিবর্তনটা পছন্দ করি না। এখানেও তা-ই হয়েছে। আমি যে ভিশন কমিটিটা চেয়েছিলাম সেটা হয়নি; এটা একটা আফসোসের বিষয় হিসেবেও থাকবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার আগামী দিনের প্রত্যাশা কী এবং দায়িত্ব পালন শেষে কোনো কিছু করার ইচ্ছে রয়েছে কি-না?

অধ্যাপক ড. শহিদুল হাসান: আমার প্রত্যাশা তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে। আমি মনে করি বাংলাদেশের তরুণরা অনেক বেশি উদার। অনেক বেশি গ্রহণ করতে চায়। তারা ইনোভেটিভ, নতুন নতুন জায়গায় এক্সপেরিমেন্ট করতে চায়। কিন্তু অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হয় না। তাই আমার বিশ্বাস এটা থেকে আমরা একদিন বেরিয়ে আসতে পারব। 

আমি আমার অবদান রাখতে চাই শিক্ষকতায়, শিক্ষা ব্যবস্থায় ও পলিসি মেকিংয়ে। শিক্ষার্থীদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। এটা কখনোই একা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে করতে হবে। আমাদের উচিত বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের মানুষ নিয়ে অনবরত চিন্তা করা। তাহলেই বাংলাদেশকে আমরা আমাদের সে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় নিতে পারবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence