টিফিনের ৩৫ হাজার টাকা জমিয়ে তিনতলা জাহাজ বানালেন স্কুলছাত্র নয়ন

নয়ন ও তার তৈরি জাহাজ
নয়ন ও তার তৈরি জাহাজ  © টিডিসি ফটো

প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনতলা জাহাজ বানিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দশম শ্রেণির ছাত্র নয়ন। ক্ষুদে এই বিজ্ঞানী নয়নের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে আগামীতে আরও অভিনব প্রযুক্তির  উদ্ভাবন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

সম্প্রতি দীর্ঘ ১০ মাসের চেষ্টায় তার নিজ হাতে বানানো ওই রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চটি বাড়ির আঙ্গিনায় পুকুরের পানিতে ভাসিয়েছে নয়ন। ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের বরিশালের কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি রিমোট কন্ট্রোল লঞ্চ তৈরি করেছেন এই শিক্ষার্থী। 

নয়নের উদ্ভাবিত ‘ডেমো’ জাহাজটি এক নজর দেখার জন্য নয়নের বাড়িতে উৎসুক মানুষের ভিড়। ক্ষুদে শিক্ষার্থীর বিস্ময়কর আবিষ্কার দেখতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ছোট বড় সবাই ছুটছেন নয়নের বাড়িতে। এমন উদ্ভাবনে বিস্মিত গ্রামের সবাই। নয়নের প্রতিভার সঠিক বিকাশের জন্য আশু পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান চরফ্যাশন বাসীর। 

নয়ন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানার চরমানিকা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসির ফরাজি বাড়ির মো. আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে। এবং সে চর-আইচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। স্কুলছাত্র নয়নের বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি একজন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ও মা কুলছুম বেগম গৃহিণী। নয়ন ৫ ভাই-বোনের মধ্যে বড়।

তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,  দীর্ঘ ১০ মাসের প্রচেষ্টায়  রিমোট কন্ট্রোলের এই ‘ডেমো’ জাহাজ তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ক্ষুদে বিজ্ঞানী নয়ন। ‘ডেমো’ জাহাজটি চালাতে নয়ন নিজেই তৈরি করেছেন একটি শক্তিশালী  রিমোট কন্ট্রোল। জাহাজে লাগানো হয়েছে শক্তিশালী ২টি মোটর। ১২ ভোল্টেজ একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে জাহাজে। মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুইটি পাখা। যার মাধ্যমে সামনে—পেছনে চালানো যাচ্ছে। তিনতলা এই  জাহাজের বিভিন্ন তলায় নানান রঙের আলোকসজ্জা। অন্ধকারে চালানোর জন্য সামনে রয়েছে হেড লাইট।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে নয়নের বানানো (ডেমো) লঞ্চটি পানিতে চালাতে, একটি রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয়েছে। সে সঙ্গে লঞ্চটিতে লাগানো হয়েছে দুইটি মোটর। মোটর দুইটি চালু রাখতে পাওয়ার হিসেবে মোটরসাইকেলের ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে।  মোটর দুটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে দুইটি পাখা যা ঘুরিয়ে সামনে-পেছনে নিয়ে যায় লঞ্চটিকে। তিনতলায় মাস্টার ব্রিজ থাকা এ লঞ্চটিকে বিভিন্ন তলায় বাহারি রঙের আলোকবাতি লাগানো হয়েছে। এবং লঞ্চের নিচ তলায় ডেক, ও সামনে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি, দোতলা-তিনতলায় কেবিন, এবং তিনতলার উপরে পেছনের অংশে সাইলেন্সারের ধোঁয়া বের হওয়ার জায়গা এবং সামনে হেড লাইটও রয়েছে। 

বাস্তবে কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মতো দেখতে। জাহাজের প্রতি তলায় রং বেরং লাইটিংয়ে  বৈচিত্র্যময় করা হয়েছে। অত্যাধুনিক রাডার এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জাহাজটি চালাতে এনালগ সিস্টেমের মতোই মাস্টারের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যেই চলছে এই  জাহাজ। মূলত এটি এটি জাহাজের আদলে একটি ‘ডেমো’ জাহাজ। প্রাথমিকভাবে এই জাহাজ চালু করা হয়েছে চরফ্যাশনের একটি পুকুরে। বরিশাল ঢাকাগামী কীর্তনখোলা জাহাজের আদলে একই রকম ডিজাইনে এই জাহাজ তৈরি করেছেন হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান স্কুল ছাত্র নয়ন। 

লঞ্চ বানানো স্কুলছাত্র নয়ন জানান, আমি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন সবসময় দেখি, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হাতে কিছু সময় পেলে কিছু বানানোর চেষ্টা করি।  আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করি তখন থেকেই স্কুলে যাওয়ার সময় টিফিনের জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে প্রতিদিন কিছু টাকা নিতাম তা জমিয়ে ৩৫ হাজার টাকা হয়। সেই টাকা দিয়ে ককসিট, প্লাস্টিকের পাইপ, কাগজ, মোটর, ব্যাটারি, বৈদ্যুতিক তার, রিমোট কন্ট্রোলার, পাখা সংগ্রহ করি। প্রায় ১০ মাসের চেষ্টায় কীর্তনখোলা-১০ এর আদলে একটি লঞ্চটি বানাই। যার দৈর্ঘ্য ৭ ফুট, এবং ৩ ফুট প্রশস্তের এ লঞ্চটি পানিতে চালাতে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত রিমোট কন্ট্রোল এবং হাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই লঞ্চটি দ্রুত গতিতে ১০ মিনিটের মধ্যে আদা কিলোমিটার দূরে যাতে পারবে। 

নয়ন আরো জানায়, আমার এই লঞ্চটি পানিতে ভাসাই। আমার বানানো লঞ্চটি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চ কোম্পানির মালিককে উপহার হিসেবে দিতে চাই। তাহলে আমার মনের আশা কিছুটা পূরণ হবে।

নয়নের চাচা নাসির ফরাজি, স্থানীয় বাসিন্দা মৌলভি বেল্লান হোসেন, ও মো. আমির হোসেন জানান, আমরা খুব আনন্দিত গর্ববোধ করছি। আমাদের এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করা নয়ন নিজের মেধা খাটিয়ে একটি লঞ্চ তৈরি করেছেন। আমরা সদরঘাটে যে লঞ্চ দেখছি। ঠিক সেই লঞ্চের মতো দেখতেই তার বানানো লঞ্চটি। সরকারের পক্ষ থেকে তার এই প্রতিভাকে যথাযথ মূল্যায়ন করলে সে অনেক দূরে এগিয়ে যাবে।

নয়নের বাবা আলাউদ্দিন ফরাজি জানান, আমার ছেলে নয়ন পড়ালেখার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই এসব কাজ করে যাচ্ছে। তার কাজের জন্য তাকে পরিবার থেকে সব সময় আর্থিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা দেয়া হয়। যাতে করে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। এবং নয়ন দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি লঞ্চ বানিয়েছে। লঞ্চটি বাড়ির পুকুরে ভাসায় তখন মানুষের ভিড় জমায়। নয়নের স্বপ্ন তার হাতে বানানো লঞ্চ বরিশাল কীর্তনখোলা-১০  কর্তৃপক্ষকে লঞ্চটি উপহার দিবে। এবং এছাড়াও তার বড় স্বপ্ন সে পড়াশোনা করে ইঞ্জিনিয়ার হবে। তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমি সব ধরনের চেষ্টা চালাবো। আমার বিশ্বাস সে একদিন ইঞ্জিনিয়ার হবে।

চরমানিকা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক নিজাম উদ্দিন রাসেল বলেন, আলাউদ্দিন ফরাজির ছেলে রীতিমতো কীর্তনখোলা-১০ নামে একটি লঞ্চ তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেরা অনেক কিছুই করতে পারে। তার মেধার যদি মূল্যায়ন করা হয় এবং অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয় তাহলে সে নতুন নতুন আবিষ্কার দেখাতে পারবে। এবং পরর্বতীতে তার এই আবিষ্কারে যে কোনো ধরনের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

 

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence