দূষিত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছেন ৯০ শতাংশ মানুষ: স্কুল শিশুদের জন্য কতটা হুমকি?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © সংগৃহীত

বায়ু দূষণের কারণে শুধু ফুসফুস বা হৃদযন্ত্র নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কও—বিশেষত শিশুদের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক এক ওয়েবিনার ‘সায়েন্স ইন ৫’-এ উঠে এসেছে, দূষণজনিত কারণে বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। বিশ্বের ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এমন বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছেন যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। শিশুদের ফুসফুস ছোট ও দুর্বল, তারা দ্রুত শ্বাস নেয় এবং অনেক সময় দূষণের উৎস থেকেও সরে আসতে পারে না। ফলে দূষণের নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর দ্বিগুণ হয়।

ওয়েবিনারে সংস্থার পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. মারিয়া নেইরা জানান, ‘বিশ্বের ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এমন বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছেন যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা এবং কার্বন মনোক্সাইড ও ওজোনের মতো গ্যাসগুলো সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলছে। শুধু তাই নয়, বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে মানসিক রোগের ঝুঁকিও—বিশেষত বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধি।

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো শিশুদের উপর এ দূষণের প্রভাব। ডা. নেইরা বলেন, ‘গর্ভাবস্থায় দূষণের শিকার হলে শিশুর স্বাভাবিক ওজন, বুদ্ধিবিকাশ এবং জন্মকালীন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি বড় হওয়ার পর সেই শিশুর হাঁপানির মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক জটিলতা তৈরি হতে পারে।’

আরও পড়ুন: বাড়ছে জরায়ুমুখ ক্যান্সার, নির্মূলের লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, শহুরে শিশুদের বড় একটি অংশ প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসার পথে বা খেলাধুলার সময় দূষিত বাতাসে দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস নেয়। শিশুদের ফুসফুস ছোট ও দুর্বল, তারা দ্রুত শ্বাস নেয় এবং অনেক সময় দূষণের উৎস থেকেও সরে আসতে পারে না। ফলে দূষণের নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর দ্বিগুণ হয়।

ওয়েবিনারে উল্লেখ করা হয়, ব্যক্তিগতভাবে দূষণ এড়াতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া গেলেও, বড় পরিসরে রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী আইন তৈরি করেছে। চীন শিল্পোন্নয়ন বজায় রেখেও বায়ু দূষণ কমাতে সক্ষম হয়েছে। প্যারিসে ৫০ শতাংশ দূষণ কমানো গেছে সবুজ এলাকা বাড়ানো, গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সাইকেলপথ তৈরির মাধ্যমে।

ঢাকাসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে বায়ু দূষণ এখন নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও টেকসই উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।


সর্বশেষ সংবাদ