ব্লাড ব্যাগের সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ, বেসরকারি খাতের একচেটিয়া ব্যবসা

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট  © টিডিসি ফটো

দেশের একমাত্র সরকারি ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন কেন্দ্র, মহাখালীস্থ জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন শাখা ২০২০ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। একসময় এই কেন্দ্র থেকেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ব্লাড কালেকশন ব্যাগ তৈরি করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ সকল সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকায় সেই শূন্যতা পূরণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ নিচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জীবাণুবিদ ডা. নুরুজ্জামান বলেন, ২০২০ সালে সরকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্লাড ব্যাগ বিদেশ থেকে আমদানি করে ইডিসিএল (EDCL) এর মাধ্যমে। এর ফলে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তাদের এসব ব্যাগ কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। অথচ দেশে উৎপাদন চালু থাকলে বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ স্বল্পমূল্যে—এমনকি অনেক সময় বিনামূল্যে—এই প্রয়োজনীয় উপকরণ পেতে পারত। 

তিনি আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন ইউনিটটি বন্ধ থাকায় বাজারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়েছে। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করছে যা ভোক্তাদের বাধ্য হয়েই গ্রহণ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারও বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে ব্লাড ব্যাগ আমদানি করছে। যার ফলেও সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের জন্য এসব জরুরি উপকরণ কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন: অলস পড়ে আছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের যন্ত্রপাতি, দেখার কেউ নেই

প্রতিষ্ঠানসূত্রে জানা যায়, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন ইউনিটটি বন্ধ থাকায় দেশের রক্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থায় এক ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। এই শূন্যতার সুযোগ নিয়ে এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লাড ব্যাগ সরবরাহে একচেটিয়া ব্যবসা পরিচালনা করছে। তারা যে-সব দামে এই ব্যাগ বিক্রি করে, সেই দামেই সাধারণ জনগণকে তা কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে—বিকল্পের অভাবে। অন্যদিকে সরকারও বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে ব্লাড ব্যাগ আমদানি করছে যার আর্থিক চাপ শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। ফলে যাদের সবচেয়ে বেশি রক্ত প্রয়োজন—যেমন মুমূর্ষু রোগী, দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি বা থ্যালাসেমিয়া রোগীর মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগীদের ক্ষেত্রে—তাদের পরিবারগুলোকে চড়া দামে এসব ব্যাগ কিনতে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে বড় ধরনের সংকটে পড়তে হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, দেশের স্বাস্থ্যখাতে সমতা, সাশ্রয় এবং গুণগতমান নিশ্চিত করতে এই ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন ইউনিটটি পুনরায় চালু করা জরুরি। এক সময় এই ইউনিট থেকেই দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করা হতো সাশ্রয়ী মূল্যে। এমনকি দরিদ্র রোগীদের জন্য বিনামূল্যেও প্রদান করা হতো। তাই স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য ও জনবান্ধব করতে হলে সরকারি উদ্যোগেই জাতীয় পর্যায়ে এই ধরনের উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা উচিত 

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘এখানে অনেক পূর্বেই বিভিন্ন ইউনিট সরকার বন্ধ করে রেখেছে। জনবল সংকটের কারণে অনেক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তবে এ সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান।’


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!