ঢামেকে যন্ত্রপাতি আংশিক অচল, জনবল সংকট তীব্র—সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)  © টিডিসি ফটো

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) দেশের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে এখানে চিকিৎসার জন্য আসেন। আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতির যেমন অভাব আছে, তেমনই আছে লোকবলের ঘাটতি। এখানের জরুরি ও বিশেষায়িত চিকিৎসা ব্যবস্থায় স্পষ্ট দুর্বলতার চিত্র দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতির বড় অংশই আংশিক অচল, এছাড়াও অপারেটর সংকটে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যথাযথ জনবল ও প্রশিক্ষণের ঘাটতিতে একটি মেশিন চালাতে যেখানে প্রয়োজন হয় সমন্বিত চিকিৎসা দলের, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন বা দুইজন। ফলে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের ব্যাঘাত ও সংকট।

ঢামেক পরিদর্শনে ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে মোট ২টি এমআরআই মেশিন রয়েছে যার মধ্যে একটি সচল এবং অন্যটি দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থায় আছে। সিটি স্ক্যান মেশিন রয়েছে ৩টি এর মধ্যে ২টি সচল থাকলেও একটি মেশিন অচল রয়েছে। এক্স-রে মেশিন রয়েছে মোট ১০টি এবং বর্তমানে সবকটিই সচল; যদিও কিছুদিন আগে একটি মেশিন অচল ছিল। এছাড়া, আল্ট্রাসাউন্ড বা ইউএসজি মেশিন রয়েছে ৫টি যার মধ্যে ৪টি সচল এবং একটি অচল। এন্ডোস্কোপি মেশিন রয়েছে ৩টি যেখানে সবগুলোই সচল রয়েছে।

আরও পড়ুন: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে, এবার দক্ষিণবঙ্গ ব্লকেড

একইভাবে ক্রোনোস নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মেডিকেল মেশিনের ৩টি ইউনিট রয়েছে এবং সবগুলো সচল। নিউরোলোজিক্যাল ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ব্রেইন এনজিওগ্রাফি মেশিন এবং কার্ডিয়াক ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হার্ট এনজিওগ্রাফি মেশিন—দুটিরই একটি করে ইউনিট রয়েছে ও উভয়ই সচল রয়েছে।  

ঢামেকের অপারেশন থিয়েটার বা ওটির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এখানে ২৩ থেকে ২৫টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। এটি প্রতিদিন নানা ধরনের সার্জারির জন্য ব্যবহৃত হয়। আইসিইউ সেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালটির রয়েছে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ইউনিট। ওএসইসি (One Stop Emergency and Casualty)–এর অধীনে ইমার্জেন্সি আইসিইউ বেড রয়েছে ১২টি। 

এখানে সর্বাধিক জরুরি অবস্থার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুরাতন ভবনের ৪র্থ তলায় রয়েছে ৪২টি আইসিইউ বেড, বার্ন ইউনিটে রয়েছে ২০টি বেড এবং নতুন ভবনে রয়েছে আরও ২১টি আইসিইউ বেড। সব মিলিয়ে মোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫টি। এসবের পাশাপাশি নবজাতকদের জন্য রয়েছে NICU (Neonatal Intensive Care Unit) এবং শিশুদের জন্য রয়েছে PICU (Pediatric Intensive Care Unit), যা শিশু ও সদ্যোজাতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখে।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢামেকের চিকিৎসা অবকাঠামো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি আংশিকভাবে অচল রয়েছে যা সেবায় প্রভাব ফেলতে পারে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত এবং নতুন যন্ত্র সংযোজনের মাধ্যমে এ সক্ষমতা আরও বাড়ানো গেলে রোগীরা আরও দ্রুত ও উন্নত সেবা পেতে পারেন। এছাড়া চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ, আইসিইউ ইউনিটের সম্প্রসারণ এবং যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করাও হাসপাতালের সার্বিক কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য যথেষ্ট জনবল না থাকায় সেবাদানে ব্যাঘাত ঘটছে। বাস্তবে একটি মেশিন পরিচালনায় অন্তত একটি সমন্বিত দল প্রয়োজন হয়—যেখানে থাকে প্রশিক্ষিত অপারেটর, সংশ্লিষ্ট ডাক্তার, নার্স এবং ওয়ার্ড বয়। প্রতিদিনের ডিউটি রোস্টার ও স্টাফদের ছুটি বিবেচনায় ধরে দেখা যায়, একটি মেশিন সচল রাখতে গড়ে প্রায় ৮ জন স্টাফ প্রয়োজন। অথচ জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় সচল থাকা যন্ত্রপাতিও পুরোপুরি ব্যবহার করা যায় না। বর্তমানে ঢামেকে এক্স-রে মেশিন রয়েছে মোট ১০টি। কিছুদিন আগেই একটি মেশিন সম্পূর্ণ কার্যক্ষম থাকলেও শুধু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় তা ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছিল। এছাড়া আউটডোর বিভাগে ব্যবহৃত এক্স-রে মেশিনগুলো দুপুর পর্যন্ত সচল থাকে আর শুধু ইমার্জেন্সি বিভাগেই ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা সম্ভব হয়। 

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ঢামেকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১,১০০ জন এবং অস্থায়ী ‘ডে বেইজ’ কর্মচারীর সংখ্যা ৫৫০ জন—সব মিলিয়ে মোট কর্মী সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার ৭০০ জন। কিন্তু হাসপাতালের রোগীর চাপ, ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য আদতে প্রয়োজন অন্তত তিন হাজার কর্মী। এই ঘাটতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ মেশিনগুলোর পূর্ণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। যার প্রভাব পড়ছে চিকিৎসা সেবার গুণমান ও গতি—দুটোতেই।

এসব বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের বক্তব্য নিতে গেলে তার সাক্ষাৎ মেলেনি। পরে সহকারী পরিচালকের কাছে গেলেও তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।


সর্বশেষ সংবাদ