তীব্র তাপদাহ ও ডায়রিয়া নিয়ে যেসব পরামর্শ দিল আইসিডিডিআরবি

আইসিডিডিআর,বির পরামর্শ
আইসিডিডিআর,বির পরামর্শ  © সংগৃহীত

গ্রীষ্মের তাপদাহ দিন দিন বাড়ছেই। অতিরিক্ত এই তাপমাত্রা শরীরের ওপর নানা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শুধু ডায়রিয়া নয় গরমের কারণে হিটস্ট্রোক, হিটএকজোশন, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ত্বক পুড়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সরকার কিছু পরামর্শ দিয়েছে; যেমন গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করা, রোদ থেকে সুরক্ষা নেওয়া, হালকা সুতিজাতীয় পোশাক পরা, একটানা কাজ না করে বিশ্রাম নেওয়া এবং খাবার ও পানীয়ের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা। এসব গাইডলাইন অনুসরণ করে গ্রীষ্মকালের তাপদাহের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব।

সোমবার (১০ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি)  দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিবেদককে এসব তথ্য জানায়। 

আইসিডিডিআর,বির মেডিসিন বিভাগের বিজ্ঞানী মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমি কিছুদিন ধরে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কাজ করছি এবং দেখছি যে অতিরিক্ত গরমের ফলে শরীরে নানা ধরনের হিট-সম্পর্কিত অসুস্থতা দেখা দেয়। এগুলোর একটি ধারাবাহিক ধাপ রয়েছে। হিট শুরুতে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা দুর্বল লাগা দিয়ে শুরু হয়। তারপর হিট একজোশন, হিট সিনকোপ এবং সর্বশেষ ও সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছায় হিট স্ট্রোকে। হিট স্ট্রোকে শরীরের তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ‘এই সময় অনেকে আতঙ্কে খাবার স্যালাইন খেয়ে থাকেন কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। কারণ খাবার স্যালাইন তৈরি হয়েছে ডায়রিয়ার জন্য যেখানে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম বেরিয়ে যায়। কিন্তু ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে মূলত পানি বের হয়। লবণের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। তাই এই অবস্থায় খাবার স্যালাইন খেলে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য হিটজনিত অসুস্থতায় মূল করণীয় হচ্ছে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা যাতে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘তীব্র গরমে দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রেও সতর্কতা প্রয়োজন। সাধারণত ৮ ঘণ্টা কাজ করা হলেও এই সময় কাজের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ানো উচিত যেন শরীর গরমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। একটানা দীর্ঘ সময় কাজ করলে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। যদিও লবণের ক্ষতি খুব বেশি হয় না। বিশেষ করে শ্রমিক, পুলিশ বা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ক্ষেত্রে কাজের সময় ভাগ করে নেওয়া, অল্প অল্প করে কাজ করা এবং মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেওয়া হিটজনিত অসুস্থতা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।’

ডায়রিয়া নিয়ে কথা বলতে গেলে এ বিজ্ঞানী বলেন, গরমে খাবার খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজের বাইরে রাখা খাবারে জীবাণু বাসা বাঁধে আর আমরা সেটা খেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হই। এছাড়া অনিরাপদ পানি পান করলেও ডায়রিয়া হতে পারে। তাই ফোটানো পানি খাওয়া সবচেয়ে ভালো। অনেকেই রাস্তার পাশের শরবত বা জুস খায় কিন্তু সেগুলোর পানি কতটা পরিষ্কার তা আমরা জানি না। এসব পানীয় ভালো কোনো দোকান থেকে খাওয়া নিরাপদ। গরমে খাবার ও পানির বিষয়ে একটু সচেতন থাকলেই ডায়রিয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।

আইসিডিডিআর,বি সূত্রে জানা যায়, ডায়রিয়া সাধারণত তখনই হয় যখন পুরোপুরি পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা যায় না। গ্রীষ্মে বিশেষত বয়স্ক মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়, কারণ তারা এ সময় বেশি বাইরে বের হয়। বিশেষ করে শ্রমিক, রিকশাচালক, দাড়ওয়ানসহ যারা বাইরে বেশি সময় কাটান তারা। শীতকালে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় কারণ এই সময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে এবং তারা বাইরে খেলাধুলা করতে বেশি বের হয়।

সূত্র আরও জানায়, এই পরিস্থিতিতে মানুষের সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যাদের পানি ফোটানোর সুযোগ নেই, তারা ফিটকিরি বা ক্লোরিন ট্যাবলেট ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করতে পারেন। ফিটকিরি বা ক্লোরিন ট্যাবলেট পানির জীবাণু দূর করে যা ডায়রিয়া প্রতিরোধে সহায়ক।


সর্বশেষ সংবাদ