আপনার সঙ্গী কি নার্সিসিস্ট, যেসব লক্ষণ দেখে বুঝবেন

সঙ্গী কি আত্মপ্রেমী বা নার্সিসিস্ট
সঙ্গী কি আত্মপ্রেমী বা নার্সিসিস্ট  © সংগৃহীত

মানুষ মাত্রই নিজেকে ভালোবাসে, নিজের প্রতি যত্নশীল হয়। এটা দোষের কিছু নয়। বরং যে নিজেকে ভালোবাসতে জানে, সে অন্য সম্পর্ককেও অনেক সময় ইতিবাচকভাবে দেখে। কিন্তু সেই ভালোবাসা যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, যদি সবকিছুতেই ‘নিজেই বড়’ প্রাধান্য পায়, তবে তা সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। আপনার সঙ্গী যখন নিজেকে গুরুত্ব দেবে, নিজের খেয়াল রাখবে– তা দেখে আপনারও ভালো লাগবে। কিন্তু তা যদি সীমা ছাড়িয়ে যায়? তাহলে অনেকসময় বড় সমস্যা তৈরি হয়। তাই শুরুতেই বুঝে নেওয়া দরকার আপনার সঙ্গী আত্মপ্রেমী বা নার্সিসিস্ট কি না। চলুন আজকের প্রতিবেদন থেকে আত্মপ্রেমীর বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নিই।

সবসময় তুলনা করা
জীবনে চলার পথে প্রতিটি সম্পর্কে কিছুটা মতের অমিল হতেই পারে, তর্ক-বিতর্কও স্বাভাবিক। কিন্তু একজন নার্সিসিস্ট সঙ্গী বারবার আপনাকে অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করবেন। কখনো চাইবেন আপনি কারও মতো পোশাক পরুন, আবার কখনো কারও মতো আচরণ করুন ইত্যাদি। এ তুলনা আপনার কাছে একসময় অস্বস্তির কারণ হবে। তুলনা একসময় আপনার ভিতরের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেবে।

ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল
প্রকৃত ভালোবাসা কখনো ভয় বা চাপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না। যদি সঙ্গী আপনাকে বারবার ভয় দেখান—‘আমাকে ছেড়ে গেলে তোমার ক্ষতি হবে’ বা ‘তুমি ছাড়া আমি বাঁচব না’ ইত্যাদি বলে তাহলে বুঝবেন তিনি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছেন। এটি সম্পর্ককে ক্লান্তিকর ও অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। 

রহস্য ও গোপনীয়তা
নার্সিসিস্টরা নিজেদের নিয়ে সবসময় একটা রহস্য তৈরি করে রাখেন। সত্য গোপন করতে তারা দক্ষ। অনেক প্রশ্ন জাগলেও ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে উত্তর দেন। বরং তাদের আচরণে আপনাকেই বিভ্রান্ত করবেন। এখানেই শেষ নয়, কোনো কিছুই পরিষ্কার করে বলেন না তারা হাবভাবেই রহস্য। তবে আচরণে তারা আপনাকে এতটাই মানসিকভাবে দুর্বল করে রাখে যে হাজার অন্যায় জেনেও ফিরে যেতে বাধ্য হন।

বিচ্ছিন্ন করে ফেলা
একজন আত্মপ্রেমী সঙ্গী চান না আপনি বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে বেশি বেশি ঘনিষ্ঠ হোন। ধীরে ধীরে তারা আপনাকে সবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেন। ফলে আপনি অজান্তেই শুধু তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা দিনশেষে আপনার জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।

কখনো ভুল স্বীকার না করা
তারা যত বড় ভুলই করুক না কেন, নিজে ভুল স্বীকার করতে চান না। নিজের দোষ স্বীকার করার পরিবর্তে বলবেন আপনাকে জেরা করবে। এসব মানুষ কখনো নিজের কাজের জন্য প্রকৃত অনুশোচনা করে না।

নিয়ন্ত্রণ মনোভাব 
নার্সিসিস্টরা সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। আপনি কি পরবেন, কাদের সঙ্গে দেখা করবেন, কোথায় যাবেন সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আপনার স্বাধীনতা হরণ করেন।

অতিরিক্ত প্রশংসার চাহিদা
তারা সবসময় চান আশেপাশের সবাই তাদের প্রশংসা করুক। প্রশংসা না পেলে বিরক্ত বা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ চাহিদা পূরণ না করলে সম্পর্কের ওপর চাপ বাড়ে।

সহানুভূতির অভাব
অন্যের কষ্ট বা অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা তাদের কম থাকে। আপনি কষ্ট পেলেও তা বুঝতে চান না, বরং নিজের প্রয়োজন আর আবেগকেই বড় করে দেখেন।

একজন নার্সিসিস্ট সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক শুরুতে আকর্ষণীয় লাগলেও সময়ের সঙ্গে তা ক্লান্তিকর হয়ে উঠে। যদি এ বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার সঙ্গীর মধ্যে লক্ষ্য করেন, তাহলে সতর্ক হোন এবং তাকে সুন্দরভাবে বোঝান। শুরুতেই আপনি কোনো ভুল সিদ্ধান্তে যাবেন না। বরং চেষ্টা করবেন এ সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়।

সূত্র: ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস (২০২১), সায়েন্স ডিরেক্ট (২০১৬), জার্নাল অব পার্সোনালিটি (২০১৩), এমডিপিআই বিহেভিয়রাল সায়েন্সেস (২০২৩), ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি (২০১৩)


সর্বশেষ সংবাদ