কিডনিতে পাথর কেন হয়, যেভাবে করবেন প্রতিরোধ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ০৩:৫৮ PM , আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫, ০৬:৩৯ PM
বর্তমানে কিডনিতে পাথর হওয়ার সমস্যা অনেকটাই সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে এটি ব্যথা, সংক্রমণ এমনকি কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার মতো জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। চলুন জেনে নিই কেন কিডনিতে পাথর হয়, এর লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়।
কিডনিতে পাথর কেন হয়?
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মিজানুর রহমান জানান, প্রায় ৩০% কিডনি পাথরের কারণ জানা যায় না। তবে বেশ কিছু পরিচিত কারণ রয়েছে:
শরীরে পানির ঘাটতি (ডিহাইড্রেশন)
ক্যালসিয়াম ও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
প্রস্রাবের রাস্তা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া বা বারবার সংক্রমণ
প্যারাথাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
কিছু জন্মগত বিপাকজনিত রোগ (যেমন: সিসটিনিউরিয়া, জ্যানথিনিউরিয়া)
প্রস্রাবে পাথর প্রতিরোধকারী উপাদান যেমন সাইট্রেট, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদির ঘাটতি
আরও পড়ুন: প্রতিদিন সাইকেল চালালে কমে মানসিক চাপ, বাড়ে আয়ু
কিডনি পাথরের ধরন
কিডনিতে বিভিন্ন রাসায়নিক গঠনের পাথর তৈরি হতে পারে। প্রধানত:
ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর: সবচেয়ে বেশি দেখা যায়
মিক্সড পাথর: ক্যালসিয়াম অক্সালেট ও ফসফেটের মিশ্রণ
ট্রিপল ফসফেট পাথর: সংক্রমণের ফলে ক্ষারীয় প্রস্রাবে গঠিত হয়
ইউরিক অ্যাসিড পাথর: বাত বা গাউট রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়
লক্ষণ
কোমর বা পিঠের এক পাশে তীব্র ব্যথা
প্রস্রাবে রক্ত বা ঘনত্ব পরিবর্তন
প্রস্রাব আটকে যাওয়া বা বারবার প্রস্রাবের চাপ
কিডনি ফুলে যাওয়া বা পুঁজ হওয়া
জ্বর ও বমি (পাথর সংক্রমণ ঘটালে)
অনেক সময় পাথরের অবস্থান বুঝতে আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে বা সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন হয়।
চিকিৎসা
পাথরের আকার ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা ভিন্ন হয়:
৪-৫ মিমি’র কম হলে: ওষুধ ও বেশি পানি পান করে নিজেই বেরিয়ে যেতে পারে
৫-৬ মিমি: ওষুধে ৪০-৫০% ক্ষেত্রে বের হয়
৭ মিমি’র বেশি হলে: অস্ত্রোপচার প্রয়োজন
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি:
ESWL: শরীরের বাইরে থেকে শক ওয়েভে পাথর গুঁড়ো করে বের করা
RIRS: ইউরেটেরোস্কোপ দিয়ে লেজারে ভেঙে ফেলা
PCNL: পিঠে ছোট ছিদ্র করে যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর বের করা (সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি)বর্তমানে পেট কেটে বড় অপারেশন খুব কমই করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘সুমিষ্টে সুস্থতা’-শরীর সুস্থ রাখতে যেভাবে ভূমিকা রাখে কাঁঠাল
প্রতিরোধের উপায়
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন (এমনভাবে যাতে প্রস্রাব পানির মতো স্বচ্ছ হয়)
প্রস্রাব কখনো আটকে রাখবেন না
মাটির নিচের সবজি, ওল, কচু, আলু, মূলা, মটরশুঁটি, বেশি লবণ, প্রাণিজ আমিষ (গরু-খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছ) সীমিত খান
ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে পারেন, তবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য পরিমিত রাখুন
নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করুন
যাদের একবার পাথর হয়েছে, তাদের খাদ্য ও জীবনযাত্রায় বাড়তি সতর্কতা দরকার
কিডনিতে একবার পাথর হলে তা পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই শুধু চিকিৎসাই নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়াই সবচেয়ে জরুরি। প্রতিদিন পরিমাণমতো পানি পান ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন, এই দুটি অভ্যাস কিডনিকে সুস্থ রাখতে সবচেয়ে কার্যকর।