মাঙ্কিপক্স: করোনার পর নতুন আতঙ্কের নাম

  © সংগৃহীত

করোনার মহামারি শেষ না হতেই নতুন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ‘মাঙ্কিপক্স’। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২টি দেশে ছড়িয়েছে সংক্রামক এ রোগ। ভাইরাসজনিত বিরল রোগ মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে শনিবার (২১ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের পূর্ব রাজ্যের একজন ব্যক্তির শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হয়েছে। গত বুধবার ওই রোগীর শরীরের পরীক্ষার পর এ তথ্য জানা যায়। তিনি সম্প্রতি কানাডা ভ্রমণ করেছিলেন।

ম্যাসাচুসেটস ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ জানায়, এটি জনসাধারণের মধ্যে কোন ঝুঁকি তৈরি করবে না। ব্যক্তিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ভালো অবস্থায় আছেন।

স্পেন এবং পর্তুগালের পর সর্বশেষ কানাডায় এ রোগটি শনাক্ত হয়। দেশটিতে এক ডজনেরও বেশি সন্দেহভাজন রোগীর বিষয়ে স্টাডি চলছে।

নর্থ আমেরিকা এবং ইউরোপের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মে মাসে মাঙ্কিপক্সের সন্দেহভাজন রোগী সনাক্ত হয়। আফ্রিকার কিছু অংশে মহামারী আকারে রোগটি ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটেনে এখনো পর্যন্ত ৬ জনকে এ রোগে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মঙ্গলবার জানিয়েছে নতুন প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করছে সংস্থাটি।

ইউকেএইচএসএর প্রধান চিকিৎসা উপদেষ্টা ডাঃ সুসান হপকিন্স বলেছেন, আমাদের প্রাথমিক উদ্বেগের বিষয়টি নিশ্চিত করে আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

বিভিন্ন রিপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই সমকামী, উভকামী বা পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি কিনা তা নিয়ে তদন্ত করবার কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর সহকারী মহাপরিচালক ডাঃ সোস ফল বলেন, “আমরা সমকামী পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্কের সংক্রমণ দেখতে পাচ্ছি।”

“এটি নতুন তথ্য যা আমাদের যুক্তরাজ্য এবং কিছু অন্যান্য দেশে স্থানীয় সংক্রমণের গতিশীলতা আরও ভালভাবে বোঝার জন্য সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে।”

ইউকেএইচএসএ উল্লেখ করেছে মাঙ্কিপক্স যৌনতার মাধ্যমে আরেকজনের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। যদিও আগে এটিকে যৌনবাহিত রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি।

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বুধবার বিবৃতিতে বলেছে, এছাড়াও মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির তরল, মাঙ্কিপক্সের ঘা, বা শেয়ার করা জিনিসপত্রের (যেমন পোশাক এবং বিছানা) সংস্পর্শের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্স ছড়াতে পারে। গৃহস্থালির জীবাণুনাশক মাঙ্কিপক্সের পৃষ্ঠের ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে বলে জানায় সংস্থাটি।

মুখ ও শরীরে চিকেনপক্সের মতো ফুসকুড়ি হওয়ার আগে ফ্লুর মতো উপসর্গ যেমন জ্বর, পেশী ব্যথা দিয়ে রোগটির উপসর্গ দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

মাঙ্কিপক্স কী?
মাঙ্কিপক্স একটি বিরল অথচ সাধারণ হালকা প্রকৃতির সংক্রমণ। সাধারণত আফ্রিকার কিছু অংশে সংক্রমিত বন্য প্রাণীর মধ্যে ধরা পড়ে। এটি প্রথম ১৯৫৮ সালে গবেষণার জন্য রাখা বানরের মধ্যে দেখা গিয়েছিল। এ কারণে রোগটির নাম মাঙ্কিপক্স রাখা হয়। ১৯৭০ সালে প্রথম মানব দেহে রোগটির সন্ধান পাওয়ার রেকর্ড করা হয় বলে জানায় সিডিসি। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস’র ওয়েবসাইট অনুসারে এই রোগটি গুটি বসন্তের মতোই, যার ফলে প্রায়ই মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

কিভাবে আপনি রোগটিতে আক্রান্ত হতে পারেন?
মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত প্রাণীর কামড় বা তার রক্ত, শরীরের তরল বা পশম থেকে রোগটি ছড়াতে পারে। এটি ইঁদুর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো ইঁদুর দ্বারা ছড়ায় বলে মনে করা হয়। সঠিকভাবে রান্না করা হয়নি এমন একটি সংক্রামিত প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমেও এই রোগটি সংক্রমণের সম্ভবনা রয়েছে।

মানুষের কাছ থেকে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত হওয়া খুবই অস্বাভাবিক, কারণ এটি মানুষের মধ্যে প্রাণীদের মতো এতো সহজে ছড়ায় না।

আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা বা তোয়ালে স্পর্শ করার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ানো সম্ভব। মাঙ্কিপক্সের ত্বকের ফোস্কা বা স্ক্যাব স্পর্শ করার মাধ্যমে বা সংক্রামিত ব্যক্তির কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমেও এই রোগটি ছড়াতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলি কী কী?
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হবার পর প্রাথমিক লক্ষণগুলি সাধারণত ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, পিঠে ব্যথা, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, কাঁপুনি এবং ক্লান্তি।

এই লক্ষণগুলি অনুভব করার এক থেকে পাঁচ দিন পরে শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। ফুসকুড়ি কখনও কখনও চিকেনপক্সের মতো হয়।

মাঙ্কিপক্স কি আপনাকে মেরে ফেলতে পারে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মধ্য আফ্রিকায় গবেষণায় দেখা যায় সেখানে মানুষের মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবার কম অ্যাক্সেস রয়েছে। ফলে দেখা যায় রোগটিতে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন ব্যক্তি মারা যায়। বেশিরভাগ রোগীই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থতা লাভ করেছে।

কোন প্রতিকার আছে কি?
মাঙ্কিপক্সের জন্য বর্তমানে কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। রোগীদের সাধারণত একটি বিশেষ হাসপাতালে থাকতে হবে যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে। তবে রোগটির সাধারণ লক্ষণগুলির চিকিৎসা করা যায়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence