শিশুদের ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু কথা

যবিপ্রবি শিক্ষার্থী হৃদয় কুমার পাল
যবিপ্রবি শিক্ষার্থী হৃদয় কুমার পাল

শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহনের পর আপনার বডি এটাকে সুগারে পরিণত করে। এই সুগার অর্থাৎ গ্লুকোজ আপনার রক্তস্রোতে চলে যায়। শক্তি উৎপাদনের জন্য দেহের কোষে গ্লুকোজ প্রয়োজন। রক্তস্রোত থেকে দেহের কোষে গ্লুকোজ পাঠানোর জন্য দরকার হয় ইনসুলিন নামের হরমোন। আপনার অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করে। অগ্ন্যাশয় যদি পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি না করে অথবা আপনার শরীর ইনসুলিনকে সঠিকভাবে কাজে না লাগাতে পারে তখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাবে।

এই পরিস্থিতি ডায়াবেটিস রোগ সৃষ্টি করে এবং রক্তে উচ্চ মাত্রার চিনির জন্য বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোষের ভেতরে গ্লুকোজের প্রবেশ ও কোষে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোন কারণে দেহে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায় বা ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে না পারে তবে গ্লুকোজ দেহকোষের বাইরে জমা হয়। ডায়াবেটিস রোগটি আমাদের মাঝে অল্প দিনেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। যাইহোক এইবার কাজের কথায় আসি।

ডায়াবেটিস কাদের হয়? এটাকি শুধু বয়ষ্ক লোকদেরই হয়? অনেকে প্রায়ই বলে, ডায়াবেটিস বড়লোকদের রোগ। কিন্তু এখনো এই ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের কিছু বিষয় অজানা রয়ে গেছে। শিশুদের যে ডায়াবেটিস হতে পারে এটা শুনলে অনেকে অবাক হয়। আজকে এই বিষয়ে কিছু কথা আলোচনা করতে চাই। শুধু পারিবারিক ইতিহাস নয়, আবহাওয়া পরিবর্তন, ফাস্টফুড নির্ভরতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খেলাধুলা ও ব্যায়ামের অভাবসহ নানা কারণে এখন শিশুরাও ডায়াবেটিস আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় অভিভাবকের সচেতনতার অভাবও এ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শৈশবে যেসব অসুস্থতা শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে ডায়াবেটিস তার মধ্যে অন্যতম।

অধিকাংশ শিশুর ডায়াবেটিস হয় অগ্নাশয়ের প্রয়োজনীয় পরিমাণ ইনসুলিন তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে (টাইপ-১)। এক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষগুলো অটোইমিউন প্রতিক্রিয়ার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে নিঃসৃত হওয়ার পরও যদি তার মাধ্যমে কাজ করতে না পারে তাহলে টাইপ২ ডায়াবেটিস হয়।

শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস:
টাইপ-১ ডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যখন অগ্ন্যাশয়ের দ্বারা ইনসুলিন খুব কম উৎপন্ন হয় বা কোন ইনসুলিনই উৎপন্ন হয় না। ইনসুলিনের অভাবে, দেহ শর্করা (আমাদের খাবারে যা থাকে) ভাঙতে অক্ষম হয় এবং তাই শর্করা রক্ত ​​প্রবাহে থেকে যায়। সুতরাং, রক্তে শর্করার মাত্রা সর্বোচ্চ স্তরের উপরে উঠে যায়, যা আমাদের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। এটি প্রায়শই শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে পাওয়া যায়, কখনও কখনও জন্মের পরেও। এই ধরণের ডায়াবেটিসটিকে ‘জুভেনাইল ডায়াবেটিস’, ‘ইনসুলিন-বেসড ডায়াবেটিস মেলিটাস অব চিলড্রেন’, ‘ব্রিটেল ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন’ এবং ‘সুগার ডায়াবেটিস ইন চিলড্রেন’ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়।

শিশুদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস:
কয়েক বছর আগে, শিশুদের ক্ষেত্রে খুব কমই টাইপ-২ ডায়াবেটিস ধরা পড়তো। এই ধরনের ডায়াবেটিস ছোট বাচ্চাদের মধ্যে বেশ বিরল ঘটনা ছিল, তবে এটি আর বিরল নয়। আমরা যখন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তখন আমাদের দেহ একে গ্লুকোজে পরিণত করে। আমরা জানি, অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন রিলিজ করে, এটি সেই হরমোন যা আমাদের রক্তের মাধ্যমে আমাদের দেহের বিভিন্ন কোষে এই গ্লুকোজ চলাচলে সহায়তা করে, যা আমাদের দেহ দ্বারা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে, যখন শরীরে ইনসুলিন কাজ করতে অক্ষম হয় তখন গ্লুকোজ রক্ত ​​প্রবাহে জমা থাকে। সুতরাং, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এমন একটি শর্ত যাতে শরীর শর্করা প্রক্রিয়া করতে অক্ষম হয়। এক্ষেত্রে ইনসুলিন তৈরি হয় কিন্তু তার কাজ করতে পারে না, তাই টাইপ-১ থেকে আলাদা।

শিশুদের ডায়াবেটিস রোগের কিছু জটিলতা:
হাইপোগ্লাইসেমিয়া: টাইপ-১ ডায়াবেটিস হচ্ছে ইনসুলিন নির্ভর ডায়াবেটিস। কিন্তু রোগী যদি অতিরিক্ত ইনসুলিন গ্রহন করে তবে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক কমে যায়। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কয়েকটি লক্ষণ নিম্নরূপ:

*ঘাম
*হাত, পা এবং মুখের মধ্যে অসাড়তা
*হৃদস্পন্দন এবং ঘাম বৃদ্ধি
*তন্দ্রা ভাব / মাথা ঘোরা অনুভব করা
*বিভ্রান্ত এবং অস্পষ্ট বক্তব্য
*মাথা ব্যাথা।

ডায়াবেটিক কেটোসিডোসিস (ডিকেএ): আমাদের শরীরে গ্লুকোজের অভাব হলে ফ্যাট ভাঙতে থাকে। শরীরে ফ্যাট ভেঙে গেলে এটি কেটোনেগুলি প্রকাশ করে। দেহে কেটোনগুলির অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তকে অ্যাসিডিক করে তুলতে পারে। কয়েকটি লক্ষন নিম্নরূপ:

*অতিরিক্ত তৃষ্ণা
*ঘন ঘন মূত্রত্যাগ
*ওজন হ্রাস
*অবসাদ
*বিভ্রান্তির অনুভূতি।

মাইক্রোভাসকুলার জটিলতা: ছোট রক্তনালীগুলো দেহের বিভিন্ন স্থানে রক্ত পরিবহণ করে। এগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হলে এটি শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন চোখ, কিডনি এবং লিভারকে প্রভাবিত করে। অবশেষে, স্নায়ুগুলিও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং এই অবস্থার নাম হয় ‘ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি’।

ম্যাক্রোভাসকুলার জটিলতা: যখন বড় বড় রক্তনালীগুলো প্রভাবিত হয় তখন এটি হৃদরোগের কারন হতে পারে। বৃহৎ রক্তনালীগুলোর ক্ষতির কারণে প্লেক হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে জমা হয়ে যায় যার ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।

অন্যান্য সব রোগের মত শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগটি দিনদিন চিন্তার কারন হচ্ছে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সবার পরিবারের ছোট সদস্যদের প্রতি নজর রাখতে হবে। এই বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা জরুরি বলে আমার মনে হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের মাধ্যমে শিশুদের এই রোগের ঝুকি থেকে কিছুটা রক্ষা করা যাবে।

লেখক: শিক্ষার্থী (৩য় বর্ষ), ফার্মেসী বিভাগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল :hridoykumarpaul.99@gmail.com

References:
1.https://www.msdmanuals.com/professional/pediatrics/endocrine-disorders-in-children/diabetes-mellitus-in-children-and-adolescents
2.https://www.google.com/amp/s/www.thedailystar.net/health/diabetes-children-1203241%3famp
3.https://www.idf.org/aboutdiabetes/complications.html
4.https://www.idf.org/aboutdiabetes/type-1-diabetes.html
5.https://www.webmd.com/diabetes/guide/types-of-diabetes-mellitus
6.https://www.medicalnewstoday.com/articles/284974
7.https://www.healthline.com/health/type-2-diabetes-children


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence