বেকার ভাতা নয়, যুবকদের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই: জামায়াত আমির
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২২ PM
বেকার ভাতা নয়, যুবকদের হাতে কাজ তুলে দিতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, যুবকদের বেকার ভাতা দেওয়ার ধারণায় আমরা বিশ্বাসী নই। প্রতিটি যুবকের হাতে কাজ তুলে দিয়ে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে একজন যুবকও বেকার না থাকে।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন–২০২৫ এ সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এখন আর শুধু একটি সাধারণ ছাত্রসংগঠন নয়; ২০২৪–পরবর্তী বাস্তবতায় এটি কার্যত বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের অভিভাবকের দায়িত্ব পেয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চরিত্র গঠন, নৈতিক শিক্ষা, আধুনিক জ্ঞান ও গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত করতে ছাত্রশিবিরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, আজকের বাংলাদেশ পেতে ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা আব্দুল মালেক থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিপ্লবী শরিফ উসমান হানি—অনেকে এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। যারা দেশ ও দ্বীনের জন্য শাহাদাত বরণ করেছেন, মহান আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদাবান শহীদ হিসেবে কবুল করার দোয়া করি।
আরও পড়ুন: হলে আছি, হলেই থাকব, কি করতে পারেন করেন—বেরোবি ছাত্রলীগ কর্মীর হুমকি
তিনি বলেন, গত ৫৪ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রদের হাতে কলমের বদলে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাঙ্গনগুলো মিনি ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়েছিল। ছাত্রদের জীবন, ভবিষ্যৎ ও মেয়েদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। সেই অন্ধকার অধ্যায় বিদায় নিতে শুরু করেছে, তবে কালো ছায়া এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন আর কখনো অস্ত্র, মাদক কিংবা নারীদের নিয়ে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়—এই পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব এখন ছাত্রশিবিরের ওপর। মা-বোনেরা যেন শান্তি ও নিরাপত্তার সঙ্গে লেখাপড়া করতে পারে এবং প্রতিটি ছাত্র তার মেধা বিকাশে মনোযোগী হতে পারে—সে পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।
ড. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ছাত্রশিবিরের জন্ম হয়েছে জাতিকে চরিত্রবান, দেশপ্রেমী ও মেধাবী নাগরিক উপহার দেওয়ার জন্য। আগামী দিনের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি আজ থেকেই ছাত্রসমাজকে নিতে হবে। ছাত্রশিবিরের ওপর মানুষের আস্থা তৈরি হয়েছে; এই আস্থার কোনো বিকল্প ঠিকানা এখনো গড়ে ওঠেনি।
শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চাই শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক পিতা-পুত্রের মতো হোক। কোনো শিক্ষককে অপদস্ত করার ঘটনা আর বরদাশত করা হবে না।
তিনি বলেন, ছাত্রসমাজের কাঁধে শহীদদের রক্তের ঋণ এবং ১৮ কোটি মানুষের প্রত্যাশার বোঝা রয়েছে। এই বোঝা বহনের শক্তি আল্লাহ তোমাদের দান করুন। ইনশাআল্লাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদিন বাংলাদেশেও ইনসাফের বিজয় হবে।
ইনসাফের ভিত্তি প্রসঙ্গে জামায়াত আমীর বলেন, আল্লাহর কোরআন ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নাহ ছাড়া কোথাও প্রকৃত ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। আমরা একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন, মানবিক ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।
তিনি বলেন, যারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে না, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে এবং জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কার বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করবে—তাদের নিয়েই একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়া হবে। সেই বাংলাদেশ শুধু নিজেদের পথ দেখাবে না, বিশ্বকেও পথ দেখাবে—ইনশাআল্লাহ।