সুশীলা কার্কিকে অভিনন্দন জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৭ PM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫০ PM
নেপালের সর্বোচ্চ আদালতের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন সুশীলা কার্কি। ৭২ বছর বয়সী এই নারী শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলের কাছে শপথ নিয়ে নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল নিবাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। নেপালের নবনিযুক্ত এই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক শুভেচ্ছা বার্তায় এ অভিনন্দন জানান। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নেপালে সংঘটিত রাজনৈতিক ঘটনাবলিতে প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করেন এবং নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন, সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও নেপালের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনাকে নিয়োগের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে আপনার এই উচ্চ পদে দায়িত্ব গ্রহণ নেপালের জনগণের আপনাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। নেপালের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে আমরা নিশ্চিত যে, আপনার দক্ষ নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় নেপাল ও এর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জনগণ শান্তি, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যেতে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি মাননীয়ার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রত্যাশা করছি, যাতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়। এই সুযোগে নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলীতে প্রাণহানির জন্য আন্তরিক শোক প্রকাশ করছি। নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত ও পূর্ণ আরোগ্য কামনা করছি। মাননীয়া, আপনার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য এবং নেপালের জনগণের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করছি।
সুশীলা কার্কির পরিচয়
সুশীলা কার্কির জন্ম ১৯৫২ সালে। ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে, পরে আইন পেশায় যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন এবং ২০১৬ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান।
বিচারপতি হিসেবে সুশীলা কার্কি দুর্নীতি বিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। তার স্বচ্ছতা, নির্ভীকতা এবং ন্যায়পরায়ণতা তাকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। এ কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আন্দোলনের তরঙ্গ থেকে উঠে আসা নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অবসর নেন। এবার আবারও ইতিহাস গড়লেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে।
নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে নারী নেতৃত্ব খুবই বিরল ঘটনা। রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারীর পর এবার প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি। বলা যায়, আইন, ন্যায়বিচার ও সততার প্রতীক এই নারী নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় স্থিতিশীলতার বার্তা নিয়ে এসেছেন।
তার সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ—একদিকে বিক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের আস্থা ধরে রাখা, অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনা। তবে তার অতীত কর্মজীবন এবং সৎ ব্যক্তিত্বের খ্যাতি দেখে অনেকেই আশাবাদী, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে নেপাল হয়তো নতুন রাজনৈতিক দিশা খুঁজে পাবে।