নেপালের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি, কে এই নারী?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ PM , আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৫ PM
নেপালের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর এবার প্রধানমন্ত্রী পদেও ইতিহাস গড়লেন সুশীলা কার্কি। ৭২ বছর বয়সী এই নারী শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাত সওয়া ৯টায় রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পাওডেলের কাছে শপথ নিয়ে নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি ভবন শীতল নিবাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশ নেতৃত্বহীন হয়ে পড়লে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে আন্দোলনকারীদের তরফে প্রথম প্রস্তাব পান সুশীলা কার্কি। তিনি শর্ত দিয়েছিলেন, অন্তত এক হাজার লিখিত স্বাক্ষর পেলে প্রস্তাব বিবেচনা করবেন। কিন্তু প্রথমেই দুই হাজার পাঁচশোর বেশি স্বাক্ষর জমা পড়ে তাঁর পক্ষে। এতে আন্দোলনকারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে মনোনীত করেন। যদিও বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের একাংশ প্রাক্তন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কুল মান ঘিসিঙের নাম প্রস্তাব করায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়।
এর আগে মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর নতুন নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। প্রথমে আলোচনায় উঠে আসেন কাঠমান্ডুর জনপ্রিয় মেয়র ও তরুণ র্যাপার বলেন্দ্র শাহ ওরফে ‘বলেন’। কিন্তু নাটকীয়ভাবে ছাত্র-যুব নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলার নাম সামনে এলে পরিস্থিতি বদলে যায়। এমনকি বলেনও তাঁর প্রতি সমর্থন জানান। অবশেষে শুক্রবার ভোটাভুটির মাধ্যমে সুশীলার নাম চূড়ান্ত হয়।
শপথ নেওয়ার পরপরই সুশীলা কার্কি একটি ক্ষুদ্র আকারের অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা গঠনের ঘোষণা দেন। জানা গেছে, শুক্রবার রাতেই তিনি প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক করবেন। ওই বৈঠক থেকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে নেপালে রাস্তায় নেমেছে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জিরা। গত সোমবার বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে প্রবেশের চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বহু শিক্ষার্থী নিহত হন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে মঙ্গলবার কেপি শর্মা অলি প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং পরদিন থেকে আত্মগোপনে চলে যান। ওইদিন বিক্ষোভকারীরা সাবেক কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ও বিভিন্ন মন্ত্রীর বাসভবনে হামলা চালায়। এমনকি অর্থমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনাও ঘটে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দাবি ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত সুশীলা কার্কিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কে এই সুশীলা কার্কি?
সুশীলা কার্কির জন্ম ১৯৫২ সালে। ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে, পরে আইন পেশায় যুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হন এবং ২০১৬ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান।
বিচারপতি হিসেবে সুশীলা কার্কি দুর্নীতি বিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁর স্বচ্ছতা, নির্ভীকতা এবং ন্যায়পরায়ণতা তাঁকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। এ কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আন্দোলনের তরঙ্গ থেকে উঠে আসা নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
২০১৬ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অবসর নেন। এবার আবারও ইতিহাস গড়লেন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে।
নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাসে নারী নেতৃত্ব খুবই বিরল ঘটনা। রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারীর পর এবার প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কার্কি। বলা যায়, আইন, ন্যায়বিচার ও সততার প্রতীক এই নারী নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় স্থিতিশীলতার বার্তা নিয়ে এসেছেন।
তাঁর সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ—একদিকে বিক্ষুব্ধ তরুণ প্রজন্মের আস্থা ধরে রাখা, অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে আনা। তবে তাঁর অতীত কর্মজীবন এবং সৎ ব্যক্তিত্বের খ্যাতি দেখে অনেকেই আশাবাদী, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে নেপাল হয়তো নতুন রাজনৈতিক দিশা খুঁজে পাবে।