ঠান্ডা ভাত গরম করে খেলে কী হয়? জানুন স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি   © সংগৃহীত

‘ভাতে মাছে বাঙালি’—এই প্রবাদই বলে দেয় ভাতের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক কতটা নিবিড়। গরম ভাতের সঙ্গে ডাল, ভর্তা, মাছ কিংবা মাংস—এ যেন প্রতিদিনের তৃপ্তির খোঁজ। তবে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কমবেশি আগের দিনের ভাত থেকে যায়, যা পুনরায় গরম করে খাওয়া হয়। অনেকের ধারণা, এতে কোনও ক্ষতি নেই—বরং সময় ও খাবারের অপচয় রোধ হয়। কিন্তু আদতে এই অভ্যাস স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।

ভাতে থাকা লুকানো বিপদ: ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ

ভাত রান্নার পর যদি দীর্ঘসময় কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা হয়, তাতে জন্মাতে পারে Bacillus cereus নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এটি এমন একটি জীবাণু, যা রান্নার উচ্চ তাপেও পুরোপুরি ধ্বংস হয় না। ভাত ঠান্ডা হওয়ার পর এই ব্যাকটেরিয়া খুব দ্রুত গুণিতক হারে বাড়তে থাকে। পুনরায় গরম করলেও এদের উৎপাদিত বিষাক্ত পদার্থ ধ্বংস হয় না।

এর ফল কী হতে পারে

বমি

ডায়রিয়া

পেট ব্যথা

দুর্বলতা ও অস্বস্তি

এসব উপসর্গ সাধারণত খাওয়ার ১ থেকে ৫ ঘণ্টার মধ্যে দেখা দিতে পারে এবং ২৪ ঘণ্টা বা তারও বেশি স্থায়ী হতে পারে।

আরও পড়ুন: ক্ষুধা লাগলে যে কারণে মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে

ফ্রিজেও আছে ঝুঁকি

অনেকেই মনে করেন ফ্রিজে রাখলে সব নিরাপদ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ভাত ফ্রিজে রাখলে তাতে ছত্রাক জন্মাতে পারে। এই ছত্রাক অ্যাফ্লাটক্সিন নামক বিষাক্ত পদার্থ তৈরি করে, যা লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

সতর্কতা অবলম্বনের উপায়

ভাত সংরক্ষণের নিয়ম: রান্নার এক ঘণ্টার মধ্যেই ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখা ভাত ২৪ ঘণ্টার বেশি না রাখাই ভালো। ফ্রিজে রাখার আগে ভাত কক্ষ তাপমাত্রায় বেশি সময় না রাখার চেষ্টা করুন।

ভাত গরম করার সঠিক পদ্ধতি: মাইক্রোওয়েভে গরম করলে প্রতি কাপ ভাতে ১ টেবিল চামচ পানি দিন, ঢেকে দিন, ভালোভাবে গরম করুন। চুলায় গরম করলে অল্প পানি, তেল বা ঘি দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে গরম করুন। নিশ্চিত করুন সব ভাত সমানভাবে গরম হয়েছে।

একবারের বেশি ভাত গরম করা একেবারেই অনুচিত।

আরও পড়ুন: তাড়াহুড়ো করে খাবার খান? জেনে নিন এর ভয়াবহ ফলাফল

পান্তা ভাত: পুরোনো পদ্ধতিতে আধুনিক সমাধান

পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো খাবার পান্তা ভাত এখনও অনেক পরিবারে জনপ্রিয়। পানিতে ডুবিয়ে রাখা এই ভাতে গাঁজন (fermentation) হয়, ফলে এটি হয়ে ওঠে আরও পুষ্টিকর। এতে বাড়ে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, এবং ভিটামিন-বি। বিজ্ঞানীদের মতে, ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে ভাতে থাকা ফাইটেট ভেঙে গিয়ে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

ঠান্ডা ভাত গরম করে খাওয়া একেবারে নিষিদ্ধ নয়, তবে কিছু নিয়ম না মানলে তা হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। ভাত সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি ও গরম করার সঠিক নিয়ম মেনে চললেই আপনি নিজেকে এবং পরিবারের সদস্যদের রাখতে পারেন নিরাপদ।


সর্বশেষ সংবাদ