জেনে নিন পান্তা ভাতের যত উপকারিতা 

পান্তা ভাত
পান্তা ভাত  © সংগৃহীত

ঘনিয়ে এসেছে বাংলা বর্ষ বরণের দিন। আর বাংলা নববর্ষ এবং পান্তা ইলিশের সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সানকিতে করে পান্তা ইলিশ খাওয়াকে অনেকে বাঙালিয়ানার বহিঃপ্রকাশ ও মনে করেন। আর এ পান্তা ভাতের রয়েছে অনেক উপকারিতা। 

গ্রামবাংলার কৃষকেরা দিন শুরু করেন পান্তা ভাত খেয়ে। শারীরিক শক্তি জোগাতে এই খাবারটি তাদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। বাংলাদেশে পান্তা ভাত সাধারণত খাওয়া হয় সরিষার তেল, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ এবং ভাজা মাছের সঙ্গে। দেশের জাতীয় মাছ ইলিশ হওয়ায় পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে পান্তা-ইলিশই জায়গা করে নিয়েছে।

পান্তার উপকারিতা সম্পর্কে হলিক্রস মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পুষ্টিবিদ মাহিনুর ফেরদৌস বলেন, পান্তা ভাতে রয়েছে বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এগুলো হলো আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ফসফরাস, ভিটামিন বি -৬, ভিটামিন বি-১২ ইত্যাদি। 

তিনি জানান, পান্তা ভাতে সাধারণ চালের চেয়ে অনেক বেশি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। তবে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি করা পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম।

একইভাবে পান্তা ভাতে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। সাধারণত ১০০ গ্রাম সেদ্ধ চালে যেখানে ২১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে, সেখানে পান্তা ভাতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ মিলিগ্রামে। এছাড়াও, পান্তা ভাতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্কের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

তবে পান্তা যদি সাদা চাল দিয়ে তৈরি না করে লাল চাল দিয়ে তৈরি করা হয় তাহরে পুষ্টি বেড়ে যায় আরো কয়েক গুণ। 

পান্তা ভাতের যত উপকারিতা-

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
পান্তা ভাত মাইক্রোফ্লোরা সমৃদ্ধ, যা প্রিবায়োটিক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এটি অন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নত করা, ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, পান্তা ভাত একটি প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবেও কাজ করে, ফলে এটি শরীরের ক্লান্তি, দুর্বলতা ও পানিশূন্যতা দূর করতে সহায়ক।

২. ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার
পান্তা ভাতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিনও বিদ্যমান। এটি ভিটামিন বি-৬ এবং বি-১২-এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে পরিচিত, যা দুটিই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৩. হজম সহায়ক
পান্তা ভাত হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করে, যা পুষ্টি শোষণ, হজম প্রক্রিয়া এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে।

৪. শক্তির উৎস  
পান্তা ভাত সারাদিনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। এটি খাওয়ার পর শরীর হালকা অনুভব হয় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে। পান্তা একটি গাঁজানো খাবার, যা উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় সমৃদ্ধ এবং তা শরীরের জন্য বেশ উপকারী।

৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
পান্তা ভাতে থাকা প্রোবায়োটিক উপাদান অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সহায়তা করে। শরীর ভিতর থেকে পরিষ্কার হলে ত্বকেও তার প্রভাব পড়ে—ত্বক হয় আরো পরিষ্কার ও উজ্জ্বল। গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া প্রোবায়োটিক উপাদানগুলো শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়, যা ত্বকে প্রদাহ কমাতে এবং ব্রণের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

তবে পান্তা তৈরির সময় অবলম্বন করতে হবে কিছু সতর্কতা-

বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার: পান্তা ভাত তৈরির জন্য অবশ্যই বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে। অপরিষ্কার বা দূষিত পানি ব্যবহারে ফারমেন্টেশনের মাধ্যমে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ​


পাত্র পরিষ্কার ও ঢেকে রাখা: যে পাত্রে পান্তা ভাত তৈরি করবেন, তা অবশ্যই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে। ভাত ও পানি মিশিয়ে পাত্রটি ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ধুলাবালি, পোকামাকড় বা অন্যান্য দূষণকারী উপাদান প্রবেশ করতে না পারে। ​


সঠিক পরিবেশে সংরক্ষণ: পান্তা ভাত প্রস্তুতের পর পাত্রটি ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে। অত্যধিক গরম বা রোদে রাখলে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়, যা খাবারের গুণগত মান নষ্ট করতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence