‘স্বামী নির্যাতিতা একজন মায়ের সন্তান বলছি’- বিচার চান বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস ইসলামের মা নাজমা ইসলামের প্ররোচনামূলক আত্মহত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ‘বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এসময় বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এসময় তারা, ‘আমার বন্ধু এতিম কেন জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমার বন্ধু ঘর ছাড়া কেন জবাব চাই জবাব চাই’, ‘স্বামী নির্যাতিতা একজন মায়ের সন্তান বলছি’, ‘সে নো টু ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

মানববন্ধন থেকে নাফিস ইসলামের মায়ের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার এবং নাফিস ইসলামের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীর (নাফিস ইসলাম) বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তার মা’কে নিয়মিত নির্যাতন করা হতো। বেশ কয়েক বছর ধরেই। গত ৩০ মে তার মা আত্মহত্যা করেন। তার মায়ের শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনি মারা যাওয়ার আগে একটা সুইসাইড নোট লিখেছেন, সেখানে নির্যাতনের কথাও তুলে ধরেছেন। আমরা মনে করি, এটি প্ররোচনামূলক আত্মহত্যা।

তারা আরও বলেন, আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ বিচার দাবি করছি এবং আমাদের সহপাঠীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। ক্ষমতা দেখিয়ে যাতে কেউ পার পেয়ে না যায় সে দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে ফেসবুকে মা হারা নাফিস ইসলাম তার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে লিখেন, আমার বাবা মো. নুরুল ইসলাম, একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। আমার বাবা মায়ের সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। ছোট খাটো বিষয়ে আমার বাবার আমার মায়ের প্রতি টর্চার ছিল প্রতিদিনের ঘটনা। মধ্যবিত্ত পরিবারে যেটা হয়, আমার মা সব সহ্য করেই ৩৫-৩৬ বছর সংসার করে গেছেন, আমাদের দুই ভাই-বোনের কথা চিন্তা করে। আমার বাবার অবসরের পর শুরু হয় তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক আর আমার মায়ের প্রতি অমানুষিক হিংস্রতা। প্রতিদিনই নেশা করে আমার বাবার সকাল-বিকেল চলত আমার মায়ের ছোট খাটো বিষয় ধরে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শারীরিক মানসিক নির্যাতন। করোনার সময় লকডাউন বেড়ে গেল এই হিংস্রতা অনেক গুণ। সে সময়টুকু আমি বাসায় থাকায় যতটুকু পেরেছি সামলানোর চেষ্টা করেছি।

উল্লেখ্য, আমাদের বাসা রাজশাহীতে, আমি বুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করি। বড় বোন বিবাহিত, সে শ্বশুরবাড়ি থাকে। পরিবারের সবাই বিষয়গুলো জানত। দাদাবাড়ির সবাই ছিল নীরব, নানাবাড়ির কারও সঙ্গে আমার মাকে যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো না।

কোনোভাবে পরিবারে স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে না পেরে সমাজের তথাকথিত সিনিয়র সিটিজেনদের কাছে যাই যে আমার মাকে বাঁচান। আমার বাবার সহকর্মীদের কাছে আমি এবং আমার বোন যাই। আইনি হোক অথবা পারিবারিক হোক, কোনোভাবেই সাহায্য করেননি। উপায় না পেয়ে আমার মাকে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আমার মামার বাসায় পাঠিয়ে দেই, দুই মাস সেখানেই ছিলেন। এ পর্যায়ে আমার বাবা আমার থাকা খাওয়া আর পড়াশোনার খরচ বন্ধ করে দেন। পরে পরিবারের একে-ওকে ধরে আমার বাবা আমার মাকে ফিরিয়ে আনেন, আর এই আশ্বাস দেন যে আর শারীরিক নির্যাতন করবেন না।

৩০/০৫/২২ তারিখ দুপুর ২:৪০ মিনিটে ক্লাসে আমার কাছে একটা ফোন আসে, জানতে পারি আমার মা আর বেঁচে নেই। নিজেকে সামলে দ্রুত রাজশাহী আসি। এসে আমার মায়ের মৃতদেহ দেখি, যে ঘরে আমার মা নামাজ পড়তেন, সেই ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে শাড়িতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন, আর তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। আমার বোন আরও আগে পৌঁছেছিল, আপু আমাকে জানায়— আঘাতের চিহ্নগুলো আরও পরিষ্কার ছিল আপু যাওয়ার পর পর। রাজশাহী চন্দ্রিমা থানার পুলিশ আমার আগেই উপস্থিত আমাদের বাসায়। চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ এমরান হোসেন এরপর শুরু করলেন আরেক খেলা। আমার মায়ের শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো মৃত্যুর পর শুইয়ে রাখার জন্য হয়েছে এরকম বলতে থাকল। পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টেও সেরকমই লেখা হলো। জানি না আমার বাবা পুলিশের লোক দেখেই হয়ত এই বিষয়টি এত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা।

আমার মাকে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হলো রাত ৮টার দিকে। এরপর আমার মায়ের লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পাই আমার ড্রয়ার থেকে। যেখানে আমার মা স্পষ্ট লিখে গেছেন তার সঙ্গে কি কি করা হয়েছিল। রাতেই থানায় যোগাযোগ করলাম অভিযোগের জন্য, ওসি এমরান হোসেন নোট দেখে বললেন, এসব অভিযোগ লাগবে না, অপমৃত্যু মামলার তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে। আমার বাবা তার চাকরিসূত্রে পাওয়া প্রভাব বা টাকার ক্ষমতা দেখানো শুরু করে ফেলল। পরের দিন ৩১/০৫/২২ তারিখে আমার মায়ের দাফন শেষে আমার বাবার গ্রামের সোনা চোরাকারবারি জামায়াতের দল আমাকে বাড়ি থেকে মারধর করে বের করে দিল। আমি আমার বোনের কাছে এসে আশ্রয় নিলাম।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence