শাবিপ্রবিতে পোষ্য কোটা জায়েজ করতে ভিন্ন নামে নামকরণ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০২ PM
সকল ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। সমান সুযোগ নিশ্চিত করার সেই আন্দোলন দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তনের আশার আলো দেখালেও, পরবর্তী সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ভিন্ন নামে পোষ্য কোটা বহাল থাকায় নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, এটি জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনাকে কলুষিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাম্প্রতিক ২০২৫-২৬ সেশনে প্রথম বর্ষ ভর্তি নীতিমালায় ‘সাস্ট কমিউনিটি মেরিট অ্যালোকেশন (এসসিএমএ)’ নামে ২০ আসনের একটি আলাদা শ্রেণিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সুযোগ রাখা হয়েছে। এটি মূলত আগের পোষ্য কোটা নতুন নামে পুনর্বহাল। ফলে মেধাভিত্তিক ভর্তি ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে এবং কোটা সংস্কারের যে দীর্ঘ আন্দোলন, তার উদ্দেশ্য প্রশ্নের মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
গত ৩০ জুন ভিন্ন নামে ‘পোষ্য কোটা’ বহাল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর কোটা-সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সুপারিশপত্র দেন ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. বদিউজ্জামান ফারুক ও সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সচেতন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেন উপাচার্য। এর আগে পোষ্য কোটাসহ সব অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮০তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় কোটায় ভর্তি স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কোটা স্থগিতের পর প্রশাসন থেকে বলা হয়, ভর্তিতে কোটার ব্যবহার নিয়ে ভর্তি কমিটি অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিক কোটা রাখা নিয়ে একটি সুপারিশ করবে, সেই আলোকে ভর্তির ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু একাধিকবার শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও শিক্ষার্থীদের দাবির তোয়াক্কা করেনি প্রশাসন।
ভর্তি কমিটি সূত্রে জানা যায়, এ বছর পাঁচ ধরনের কোটায় ৭৭টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে- এথনিক মেরিট অ্যালোকেশন-এ ২৮টি, ডিজেবল মেরিট অ্যালোকেশন-এ ১৪টি, টি-লেবার মেরিট অ্যালোকেশন-এ ৫টি, স্পোর্টস মেরিট অ্যালোকেশন-এ ১০টি এবং সাস্ট কমিউনিটি মেরিট অ্যালোকেশন-এ ২০টি আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন : হাসনাত-সারজিস নির্বাচন করবেন কোন আসনে, বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থী কারা
শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান শুধু কোটা বাতিলের দাবিই ছিল না; এটি ছিল শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার একটি প্রতীকী লড়াই। সেই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন— তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেরাই ভিন্ন নামে কোটা ব্যবস্থা চালু রাখলে তা আন্দোলনের আত্মত্যাগকে অসম্মান করার শামিল বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শাকসু ভিপি প্রার্থী মমিনুর রশিদ শুভ বলেন, ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘পৌষ্য কোটা’ ভিন্ন নাম দিয়ে আবারও চালু করা হয়েছে, তা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, বিভ্রান্তিকর এবং বৈষম্যমূলক বলে মনে হচ্ছে। ভিন্ন নামে এই ধরনের কোটা আসলে মেধাভিত্তিক ভর্তি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য সুযোগকে সংকুচিত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসে। তাদের জন্য ভর্তি পরীক্ষাই একমাত্র ন্যায্য প্রতিযোগিতার জায়গা। সেখানে অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় কোটা চালু করা হলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটি বাতিল চাই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, ‘কোটা মূলত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু পৌষ্য কোটায় যারা ভর্তি হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা কর্মকর্তার সন্তান। তারা এমনিতেই তুলনামূলক সমাজের ভালো অবস্থানে থাকে এবং ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ হয়। তারপরও সুবিধা নেওয়া জুলাই বিপ্লবের পরিপন্থি। তিনি আরও বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের মতো একটি জাতীয় সংকটের পর যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত ছিল ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও সমান সুযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোটা বা বিশেষ সুবিধা বহাল থাকা শিক্ষার্থীদের আস্থার সংকট আরও গভীর করতে পারে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘আমাদের এই কোটা সিস্টেমটা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো না। এটি আলাদা, সংরক্ষিত এবং মূল আসন থেকে ভিন্ন। গত বছর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে কোটা স্থগিত করা হয়েছিল, পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলে চালু করা হয়েছে।’