ধারদেনা করে জীবনযাপন করছেন বুটেক্সের আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীরা
- বুটেক্স প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৭:২৭ PM , আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৫ PM
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের বেতন দেওয়া নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে আল মোমেন আউটসোর্সিং লিমিটেডের কর্মচারীরা মাসের নির্ধারিত সময়ে বেতন না পাওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়ছেন। কেউ কেউ বাসাভাড়া ও পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েছেন। মূল্যস্ফীতির এ সময়ে নিয়মিত বেতন বিলম্ব শুধু প্রশাসনিক জটিলতা নয়, তা কর্মচারীদের জীবনে মারাত্মক মানবিক সংকট তৈরি করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া ও আউটসোর্সিং কোম্পানির গাফিলতির কারণে এ সমস্যা বছরের পর বছর ধরে চললেও এর কার্যকর সমাধান এখনো হয়নি।
জানা গেছে, বর্তমানে আল মোমেন আউটসোর্সিং লিমিটেড ও সামাইরা জবস ব্রিজ লিমিটেড নামের দুটি এজেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে। আল মোমেনের হয়ে কাজ করেন ৩৫ জন ও সামাইরার হয়ে কাজ করেন ১৪ জন কর্মচারী। সামাইরার কর্মচারীরা যথাসময়ে বেতন পেলেও আল মোমেনের কর্মচারীদের সঠিক সময়ে বেতন না পাওয়ার অভিযোগ উঠছে। তবে এই মাসে এখনো পর্যন্ত দুই এজেন্সির কেউই কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেনি।
আল মোমেনের কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, মাস শেষে নির্ধারিত সময়ে বেতন না পাওয়া এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস পেরিয়ে অপর মাসের অর্ধেক চলে গেলেও আগের মাসের বেতন মেলে না। বর্তমান মূল্যস্ফীতির এ সময়ে বিলম্ব বেতন কেবল প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি একধরনের মানবিক সংকট। মাসের শুরুতে বেতন না পেলে ক্ষুদ্র কর্মচারীদের পরিবার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে, ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে ধারদেনায় জড়িয়ে পড়ছেন।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. শেখ মো. মামুন কবীর বলেন, ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তারক্ষীদের দৈনিক উপস্থিতি সাইন সংগ্রহ করা ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আসে। আমরা যাচাই-বাছাই শেষে ভিসি স্যারের অনুমোদন নিয়ে অ্যাকাউন্টসে পাঠাই। এরপর অডিট সঠিকতা যাচাই করে এবং ডিডি ফাইন্যান্স অর্থ ছাড়েন। আমাদের দপ্তর তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে ফাইন্যান্সে পাঠিয়ে দেয়। এরপর দেরি হয় কি না, তা জানা নেই। তবে ভবিষ্যতে নতুন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে স্পষ্ট নীতিমালা করা হবে, যাতে তারা নিজেরাই কর্মচারীদের যথাসময়ে বেতন প্রদান করে।’
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের পাশাপাশি সুখবর পেলেন কর্মচারীরাও
সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর জুবায়ের হোসেন বলেন, ‘আমি সিকিউরিটি সেকশনে নতুন যোগদান করেছি। এই মাসে আমরা ৩-৪ তারিখের মধ্যে কাগজপত্র অন্যান্য বিভাগে পাঠিয়েছি। এখন কোথায়, কী কারণে বিলম্ব হয়, তা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। যেহেতু এটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, এজেন্সি মালিকদের গাফিলতি থাকতে পারে এবং উপস্থিতি যাচাইসহ নানা কারণে সময় লাগতে পারে। বিষয়গুলো জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি, যাতে প্রতি মাসের ১-৭ তারিখের মধ্যে বেতন প্রদান সম্পন্ন হয়।’
পূর্ববর্তী সিকিউরিটি ইন্সপেক্টর মো. বাবুল আক্তার বলেন, ‘আউটসোর্সিং কর্মীরা ক্যাম্পাস, হল ও অন্যান্য শাখায় কাজ করেন। শাখাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপস্থিতি যাচাই শেষে মাসের ৩-৪ তারিখে ডকুমেন্টস পাঠান। আমরা সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে বিল প্রক্রিয়া করি। তবে অনেক সময় ডকুমেন্টস অফিস বন্ধের আগে বা বৃহস্পতিবার এলে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়। বিল সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর, রেজিস্টার অফিস, অডিট বিভাগ, অ্যাকাউন্টস সেকশনসহ একাধিক বিভাগে যেতে হয়, ফলে বেতন মাসের ১৫-২০ তারিখে পৌঁছায়।’
ফাইন্যান্স ও অ্যাকাউন্টস সেকশনের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আউটসোর্সিং বিলের ডকুমেন্টস বিভিন্ন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরসহ সিকিউরিটি সেকশনে আসে। যাচাই শেষে রেজিস্টার, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরসহ অন্যান্য বিভাগে পাঠানো হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষে ৮-৯ তারিখে ডকুমেন্টস আমাদের কাছে আসে। এরপর যাচাই, অডিট ও উপাচার্যের অনুমোদন নিয়ে ৩-৪ দিনে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ফলে বেতন মাসের ১৫-১৬ তারিখে চূড়ান্ত হয়। আমরা কোম্পানিকে বিল প্রদান করি, কর্মীদের ১ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়া তাদের দায়িত্ব। মাস শেষে উপস্থিতিসহ সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের কারণে সময় লাগা স্বাভাবিক। এখানে আউটসোর্সিং কোম্পানির দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এই জটিলতা দূর হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির আদেশ শিগগির: সচিব
আল মোমেনের কর্মচারী নিরাপত্তারক্ষী মো. রুবেল রানা বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) ১২ তারিখ, কিন্তু এখনো বেতন পাইনি। গত মাসে ১৬ তারিখে বেতন পেয়েছিলাম, যা আগে কখনো এত দ্রুত পাইনি। সাধারণত ২০-২২ তারিখে বেতন পাওয়া যায়। ঈদের আগে (২৮ তারিখে) ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও বেতন পাইনি। অন্য কোম্পানিগুলো কর্মীদের টাকা দিয়েছে, কিন্তু আল মোমেন দেয়নি। মোমেনকে যদি বলি তাহলে বলে, ভার্সিটি থেকে যদি টাকা না দেয় তাহলে আমি টাকা পাব কই? তারা সব সময় ভার্সিটি থেকে টাকা পাওয়ার পরই বেতন দেয়, ফলে দেরি হয়। এতে বাসা ভাড়া ও খাওয়ার খরচ মেটাতে প্রায় প্রতি মাসেই মানুষের কাছে ধার করতে হয়, কারণ ঢাকায় ১০ তারিখের মধ্যে ভাড়া দেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন ধারদেনা করে জীবনযাপন করা নিয়মে পরিণত হয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী বলেন, ‘গত দুই ঈদে কোনোটাতেই বেতন পাইনি। তাই অর্থের অভাবে ধার করে ঈদ করতে হয়েছে। আমাদের জীবনের কি কোনো মূল্যই নেই? যারা এই অনিয়য়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য যে মানুষের প্রাণ যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে তারা কি এটা জানে না? আমরা গরিব বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও কি আমাদের কষ্ট বোঝেন না? তাহলে কেন এত অনিয়ম আর অবহেলা?’
এ বিষয়ে জানতে আল মোমেন এজেন্সিকে একাধিকবার কল করেও কাউকে পাওয়া যায়নি।