বুটেক্স রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ
- বুটেক্স প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩৩ PM , আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৪ AM
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) রাজনীতিমুক্ত হওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ মিছিল, বৃক্ষরোপণ ও মিষ্টি বিতরণ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষার্থীরা বুটেক্সের জি.এম.এ.জি. ওসমানী হলে জড়ো হয় এবং মিছিলের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তারপর শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে ওসমানী হল থেকে বিটাক মোড় হয়ে ক্যাম্পাসের শহিদ মিনারে অবস্থান নেয়। পরে শহিদ মিনার থেকে মিছিল শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার শহিদ মিনারে এসে মিছিলটি শেষ হয়। এই সময় ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুটেক্সে হবে না’, ‘দালালী না রাজপথ, রাজপথ
রাজপথ’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’ সহ নানা স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আনন্দ মিছিল শেষে শহিদ মিনারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক ড. মশিউর রহমান খান, ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সুলতান মাহমুদ, হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইহসান ইলাহি সাবিক, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এ.টি.এম ফয়েজ আহমেদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সভায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লেজুরভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক দিক এবং ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার কথা তুলে ধরেন। এরপর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন ও সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণের উচ্ছ্বসিত ও আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে পুরো কার্যক্রমের সমাপ্তি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ পরিচালক ড. মশিউর রহমান খাঁন বলেন, এই ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক সংঘটন যেন কোনোভাবেই আমাদের ছাত্রদের উপর কোনো প্রকার শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করতে না পারে, আমার দিক থেকে আমি সর্বোচ্চ খেয়াল রাখব। আমি শিক্ষার্থী কল্যাণের দায়িত্বে যতদিন আছি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তোমাদের উপর অপতৎপরতা চালালে আমাকে জানাবা। আমরা সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করব।
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসটাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সেটার জন্য তোমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তোমরা নিজেরা একত্রিত হয়ে একটি সংগঠন খুলতে পারো যার মাধ্যমে তোমরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে পারো সেলিব্রেটিং পলিটিক্স ফ্রি ক্যাম্পাস হিসেবে। আর একটি দেয়াল গড়তে পার যেখানে থাকবে ছাত্র রাজনীতি থাকাকালীন জুলুমের শিকার হওয়া ছাত্রদের অনুভূতি, কথামালা। যার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও দেখবে যে ইতিপূর্বে রাজনীতি থাকাকালীন যা যা ঘটেছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইহসান ইলাহি সাবিক বলেন, এই বুটেক্সে ছাত্ররাজনীতি আমাদের দিয়েছে হল দখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছাত্রদের র্যাগ, নির্যাতন ও পুলিশের হাতে মেরে তুলে দেওয়া। আমরা কি এইসব ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে দেবো? আমি অন্তত দেবো না। আমরা ছাত্র শিক্ষক সকলে মিলে ক্যাম্পাসের এই পরিবেশটা বজায় রাখতে চাই। আমরা রাজনীতি করবো না কিন্তু সকল অপতৎপরতা মোকাবেলা করবো। আমরা কোন দিন বুটেক্সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে দেবো না।
ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সারোয়ার হোসেন সামি বলেন, প্রথমে আমাদের দেখতে হবে যে ছাত্র-রাজনীতি আমাদের কী দিয়েছে? হল পাওয়ার জন্য অসুস্থ জোনাল পলিটিক্স, যেটার কারণে আমরা আমাদের বৈধ হলের সিট থেকে বঞ্চিত থেকেছি দিনের পর দিন।
জোর করে ক্লাস-পরীক্ষা অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক স্লোগানে বাধ্যকরণ করা হতো আর ন্যায়ের কথা বললে শিবির, জঙ্গি ট্যাগিংয়ের শিকার হতাম। বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরেও বুটেক্সের নাম ব্যবহার করে অনেকেই রাজনীতি অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন যেন সেসবের প্রতি দৃঢ় অবস্থান নেয়। আমরা কখনোই চাইনা ছাত্ররাজনীতির মধ্য দিয়ে আমাদের ক্যাম্পাসে সেই জঘন্য সংস্কৃতিগুলো পুনরায় ফিরে আসুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বুটেক্সে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের এক বছরেও রাজনীতি মুক্ত করতে পেরেছি কিনা আমরা এখনো নিশ্চিত না, কেননা এই এক বছরে বুটেক্সের বাইরের বেশকিছু গোষ্ঠী এবং অভ্যন্তরের বেশকিছু সংগঠন চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করানো যায়। এমন অবস্থায় আমাদের শিক্ষার্থীদের একতাবদ্ধ হওয়া খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন আগে পলিটেকনিকের সাথে সংঘর্ষের বিচারিক প্রতিবেদন এখনো শিক্ষার্থীদের সামনে পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করা হয়নি, যা হতাশাজনক। এখনো টেকসু না হওয়ায় এখন এমন একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরি হওয়া উচিত, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবিগুলো জানাতে পারব।
উল্লেখ্য, গত বছর একইদিনে শিক্ষার্থীদের আবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভার জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন, ছায়া সংগঠন এবং এর কার্যক্রমের সাথে সম্পর্ক ও সম্পৃক্ততা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।