পাবিপ্রবিতে ফিস্টের টিকিট নিয়ে অব্যবস্থাপনা, নেওয়া হয়েছে ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয়েও
- পাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৮ AM , আপডেট: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১১:০৩ PM
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) স্বৈরাচার পতনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হল ফিস্টের টিকিট বিতরণকে কেন্দ্র করে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠেছে। আজ সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা হল, ৬ জুলাই হল ও মাতৃভাষা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আবাসিক শিক্ষার্থীদের বাইরে অনেকেই টিকেট কিনেছেন। এমনকি ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয় দিয়েও অনেকে নিয়েছেন। এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ জুলাই থেকে তিন হলে ফিস্টের টিকিট বিক্রি হয় শুরু হয়। এরপরই ছেলেদের দুই হল থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। ৩০ জুলাই ফিস্টের টিকিট বিক্রির শেষ তারিখ হলেও ২৯ জুলাইয়ের মধ্যেই স্বাধীনতা হলে (ছাত্র হল-১) নির্ধারিত ৫০০ জন ছাত্রের কোটা শেষ হয়ে যায়। টিকিট না পাওয়ায় ৩০ জুলাই ১৫০ জন ছাত্র হল অফিসে নাম লিখিয়ে যান। একই অবস্থা জুলাই ৬ হলেও (ছাত্র হল-২)। ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে হলের নির্ধারিত ৩২৩টি টিকিটের মধ্যে ৩১৬টি বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু স্বাধীনতা হলের মতো এ হলের অধিকাংশ ছাত্র তখনও কেনেননি।
সংশ্লষ্টিরা জানান, ফিস্টের টিকিট বিক্রির সময় কোনও ছাত্র আবাসিক না অনাবাসিক, তা যাচাই করার কোনও পদ্ধতি হল প্রশাসন রাখেনি। আবার কোন ছাত্র বেশি টিকিট নিচ্ছে কিনা, সেটাও ভালো করে দেখা হয়নি। ফলে এক ছাত্র একাধিক টিকিট নিয়েছেন। হলের কর্মকর্তারা অনাবাসিক অনেককে টিকিট দিতে চাননি। তখন তাদের অনেকে নিজেকে ‘জুলাইযোদ্ধা’ পরিচয় দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার কাছে এক ছাত্র আসছে টিকিট নিতে। আমি বললাম, এখন টিকেট দেওয়া স্যারের নিষেধ আছে, দেওয়া যাবে না। ওই ছাত্র আমাকে বলল, আমি জুলাইযোদ্ধা। আমাকে এখনই টিকিট দিতে হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্র বলেন, ‘আমি নিয়ম মেনেই টিকিট নিতে গিয়েছি। কিন্তু দায়িত্বরত কর্মকর্তা আমাকে বললেন, সব টিকিট জুলাইযোদ্ধারা নিয়ে গেছে।’
এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও নজরদারির অভাবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টিকিট বিতরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তালিকা ও যাচাইকরণ ছাড়া সরবরাহ করায় অনিয়ম বেশি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্থাপত্য বিভাগের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘ফিস্টের টিকিট শেষ হয়ে গেছে, অথচ আবাসিক অনেক ছাত্রই টিকিট কেনেননি। তাহলে এ টিকেট নিল কারা? প্রথমত, আবাসিক ছাত্ররা একাধিক টিকিট নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, অনাবাসিক ছাত্ররা টিকিট কিনেছেন। অনাবাসিকদের টিকিট নেওয়া এবং আবাসিকদের একাধিক নেওয়া, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। তারা শক্ত হলেই এ অনিয়ম হতো না।’
আরও পড়ুন: তা’মীরুল মিল্লাতে হল সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র জব্দ
ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের ছাত্র আদনান বিন সিদ্দিকী বলেন, ‘বহিরাগত অনেকেই জুলাইযোদ্ধা বলে টিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। আর হলের দায়িত্বরতরা তাদেরকে দিয়ে দিচ্ছে! যারা জুলাইকে বিক্রি করে টিকিট নিতে এসেছে, হলের দায়িত্বরতদের উচিত ছিল, এটা নিয়ে সাথে সাথে ওপরের মহলে জানানো। কিন্তু সেটা না করে এটাকে প্রশ্রয় দিয়ে জুলাইকে অসম্মান করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা হলের প্রভোস্ট ড. শাহজান আলী বলেন, ‘জুলাইযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে টিকেট নিয়েছে, এমন কথা আমি পরে শুনেছি। এরপরই এ বিষয়ে নিষেধ করে দিয়েছে। টিকিট বিক্রিতে কিছু অব্যবস্থাপনা হয়েছে। বাইরেও কিছু টিকিট গেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য এসেছে। যতটুকু হওয়ার হয়েছে, আমরা প্রোগ্রামটা সফল করার চেষ্টা করছি।’