পাবিপ্রবিতে ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ আটকের জেরে মুখোমুখি ছাত্রদল-ছাত্রশিবির

পাবিপ্রবির প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা
পাবিপ্রবির প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করেন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা  © টিডিসি ফটো

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করার জেরে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্রশিবির। রোববার (১৮ মে) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে দুই সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মুখোমুখি অবস্থানে চলে যান। তবে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শাহরিয়ার কবির সোহান ভাইভা দিয়ে বের হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ফসিউল হক ইমনের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে মারধর করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসেন। এ সময় ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও প্রক্টর অফিসে প্রবেশ করেন। 

এর কিছুক্ষণ পর বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রক্টর অফিসে আসেন। ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা প্রক্টরের কাছে অভিযোগ করেন, ছাত্রদলের বর্তমান সহ-সভাপতি ফসিউল হক ইমনকে ২০২২ সালে ছাত্রলীগ মারধর করে। ওই ঘটনায় সোহান জড়িত ছিলেন। সে মানবিক ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

এরপর ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা পুলিশ ডেকে তাকে পুলিশে দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা প্রক্টরকে বলেন, সে ছাত্রলীগ করেছে এমন প্রমাণ থাকলে পুলিশে দিলে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশে দেওয়া যাবে না। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। এরপর প্রক্টর বিষয়টি সমাধানের জন্য দুই পক্ষকে রুম থেকে বের করে দেন। প্রক্টর অফিসের বাইরে এসে দুই পক্ষ দুই দফায় বাক-বিতন্ডায় জড়ান। 

এরপর দুই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরে লোক জড়ো করা শুরু করে। সন্ধ্যায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে চলে যান। এরপর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরিদা টাওয়ারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আসলে শিবির সেখান মিছিল শুরু করে। 

ছাত্রদলের মিছিলটি ক্যালিকো কটন মিল থেকে ঘুরে আবার প্রধান ফটকের দিকে আসতে শুরু করলে শিবির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে ক্যালিকো কটন মিলের দিকে মিছিল বের করে। মিছিল দুটি পরস্পরকে অতিক্রম করার সময় দুই দলের নেতা-কর্মীরা পরস্পরের মুখোমুখি হন। এর মধ্যে ফের বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। 

ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মুজাহিদ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। এরপর ছাত্রদল মিছিলের শেষ করে।

এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রশিবির ক্যালিকো কটন মিলের দিক থেকে মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় পাবনা শহর শিবিরের সভাপতি ফিরোজ হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান জয় বক্তব্য দেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুই দলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ছেড়ে চলে যান।

আরও পড়ুন: মন্ত্রণালয়-মাউশির ভুলে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব ফাইলবন্দি

ছাত্রদলের অভিযোগ, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী শাহরিয়ার কবির সোহানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রশিবিরের কর্মী রিফাত এসে তাদেরকে বাঁধা দেন। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও করেন। রিফাতের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হতে শুরু করেন।

অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের অভিযোগ, সোহান এবং রিফাত পাশাপাশি থাকেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সোহানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় রিফাত দেখতে পান এবং জিজ্ঞেস করেন, কেন ওকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এরপর ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা রিফাতকে ধাক্কা দেন এবং তাকে তারা মারতে যান। বিষয়টি নেতা-কর্মীদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা শুরু হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান খান বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তাকে পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এখন বাকি ব্যবস্থা পুলিশ নিবে। আর ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আশা করি, দুই পক্ষই সহঅবস্থানে থাকবে। যেহেতু ক্যাম্পাসের মধ্যে রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই তাদের অনুরোধ করব, রাজনৈতিক বিষয়ে কোনও ঝামেলায় না যাওয়ার জন্য।’


সর্বশেষ সংবাদ